“শ্রীমঙ্গলের পুতুল যাচ্ছে দেশ ছাড়িয়ে ৩৭টি দেশে”

সৌরভ আদিত্য, শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মেয়েদের হাতে তৈরি করা পুতুল যাচ্ছে বিশ্বের ৩৭টি দেশে। এতে একদিকে যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছে ওই পরিবারগুলো, অন্যদিকে এ পুতুল রপ্তানি করে আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা।
জানা যায়, উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের হাজীপুর, বরুণা ও মির্জাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পাচাউন গ্রামের ১০০ মহিলাকে ঢাকায় হাতে বুনন প্রশিক্ষণ সোসাইটি থেকে পুতুল তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
ইউএসএইডের ক্রেল (ক্লাইমেট রেজিলিয়ান ইকোসিস্টেমস অ্যান্ড লাভলি হুডস) প্রকল্পের সহায়তায় তাদের এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ওই ১০০ জনের মধ্যে গৃহবধূ ছাড়াও রয়েছে স্কুল-কলেজে পড়া মেয়েরা। দুই মাসের প্রশিক্ষণ শেষ করে তারা এখন অবসর সময়ে ঘরে বসে বসেই পুতুল তৈরি করছেন।
তাদের তৈরি করা আইটেমের মধ্যে রয়েছে র্যাটেল, অক্টোপাস, র্যাটেল চুবি মনস্টার, র্যাটেল আউল, ক্যাটার পিলার, র্যাটেল ফিকজি, ওয়ানস আপন এ টাইম বেলেরিনা, র্যাফেলস বেলেরিনা, ল্যার্জ অ্যানিমল জিরাফ, ল্যার্জ অ্যানিমল এলিফ্যান্ট, অর্গানিক জিরাফ, অর্গানিক বান্নি, ডেকোরেশন নাটক্রেকার, র্যাফেলস নাটক্রেকার, স্লিপি বান্নি, স্লিপি ডুডু, র্যাটেল ক্রাফসহ হরেক পুতুল।
এগুলো যাচ্ছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জার্মানি, মালয়েশিয়া, কোয়িরাসহ বিশ্বের ৩৭টি দেশে। ওই সব দেশের মার্কেটে এ পুতুলগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। হাতে বুনন রুরাল সেন্টারের ব্যবস্থাপক এস এম রেজোয়ান কাউসার বলেন, ‘আমরা আমাদের খরচে হাওরপাড়ের বেকার ও গরিব প্রায় ১০০ মহিলাকে এ প্রশিক্ষণ দিয়েছি।
প্রশিক্ষণ শেষে পুতুল বানানোর যাবতীয় কাঁচামাল আমাদের লোক দিয়ে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছি। আবার পুতুল বানানো শেষ হয়ে গেলে আমাদের লোক গিয়ে সেগুলো নিয়ে আসছে। আইটেম অনুযায়ী তাদের একেকটি পুতুলের ন্যূনতম ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।’ মির্জাপুরের দক্ষিণ পাচাউন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সুই-সুতা দিয়ে পুতুল বানাচ্ছেন মেয়েরা।
এ সময় কথা হয় ওই গ্রামের বাসিন্দা মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের ছাত্রী সুরভি ভৌমিক ও মির্জাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী লুবনা আক্তারের সঙ্গে। লুবনা বলে, ‘আমাদের তৈরি করা পণ্য বিদেশে যাচ্ছে এতে আমরা খুশি। পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে আমরা পুতুল বানানোর কাজ করছি। আর এর মাধ্যমে আমাদের পড়াশোনার খরচ নিজেই চালিয়ে নিতে পারছি।’ সুরভি বলেন, ‘৫০টি অক্টোপাসের অর্ডার পেয়েছি।
তবে আরও বেশি বেশি অর্ডার পেলে এবং মজুরি আরেকটু বেশি হলে ভালো হয়।’ ক্রেল প্রজেক্টে হাইল হাওর এলাকার কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, হাওর এলাকার মানুষদের হাওরের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে বিকল্প পেশায় সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি তাদের জীবন-জীবিকার মান উন্নয়নে এ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে তারা নিজেরাই নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। আর তাদের তৈরি করা পুতুলগুলো বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে।
মন্তব্য চালু নেই