“শ্রীমঙ্গলের খাসিয়াদের উচ্ছেদ-আতঙ্ক”
সৌরভ আদিত্য, শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের পানপুঞ্জিতে বসবাসরত খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে ভূমি ব্যবস্থাপনা সমস্যায় ভুগছেন। বংশ পরম্পরায় যুগযুগ ধরে এসব জমিতে বসবাস ও পান চাষ করলেও ভূমির উপর তাদের অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যে কারণে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ জীবন মানের উন্নয়ন ঘটছে না।
খাসিয়াদের নেই কোন নিজস্ব ভিটেমাটি কিংবা ফসলি জমি। অন্যের লিজ নেয়া পাহাড়ী জমিতে বসবাস করে জীবিকা নির্বাহ করছে যুগ যুগ ধরে। ভূমিহীন হিসাবে পরগাছার মতো বসবাস করা এই আদিবাসিদের এখন তাদের দিন কাটে উচ্ছেদ আতংকে। অথচ তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পাশাপাশি তাদের উৎপাদিত পণ্য আজ দেশ বিদেশে রফতানি করে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে চলেছে।
খাসিয়া সম্প্রদায়ের জীবন জীবিকা বর্তমানে কঠিন হয়ে পড়েছে। পাহাড়ের উপরে বসবাসকারী অধিকাংশ খাসিয়া পুঞ্জির নেই নিজস্ব কোন রাস্তা। অন্যের চা বাগান, জলা-জঙ্গল, ছড়া আর এবরো ধেবরো সরু আইল ব্যবহার করে যাতায়াত করতে হয়। এনিয়ে বিভিন্ন সময়ে ছোটখাট সংঘাত সংঘর্ষ ঘটনা ঘটে।
ছন্দপতন ঘটায় নিভৃতচারী এসব পাহাড়ী মানুষের প্রাত্যাহিক জিবন যাপনে। বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে প্রায় সব পুঞ্জিতে, সেনিটেশন সমস্যা, শিক্ষা, স্বাস্থ সুবিধা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সবকিছুতেই পিছিয়ে রয়েছে এ জনগোষ্ঠী।
বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরাম’র সভাপতি পিটিশন প্রধান সুচিয়াং মুটো ফোনে জানান, আদিবাসি পল্লীগুলিতে শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ কম। শ্রীমঙ্গলে ১১ টি বড় পুঞ্জি রয়েছে ,এই পুঞ্জি গুলোতে সরকারি কোন স্কুল নেই, নেই চিকিৎসার সু-ব্যবস্থা, অনেক দুরে গিয়ে পড়াশুনা ও চিকিৎস সেবা গ্রহন করতে হয়।
বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ এর আঞ্চলক কমিটির সম্পাদক শ্যামল দেববর্মা বলে, দেশে আদিবাসি দিবসে সরকারী কোন অনুষ্ঠান করা হয় না। আমরা আদিবাসিরা এই দেশে শত শত বছর ধরে বসবাস করে আসছি। সরকারী ভাবে আমরা আজো আদিবাসীর স্বীকৃতিটুকুও পাইনি। আমাদের ভুমি অধিকার দেওয়া হয় নি। এখন সরকারী ভূমি ব্যবস্থাপনার কথা বলে সম্প্রদায়ের অনেককে উচ্ছেদেও চিঠি দেয়া হয়েছে। এ কারণে এখানকার অনেক আদিবাসীরা উচ্ছেদ আতংকে দিন কাটাচ্ছে।
শ্যামল দেব বর্ম্মা আরো জানান, পাহাড়ে বসবাস করে আদিবাসীরা পান-সুপারি, লেবু আনারস চাষাবাদ করে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ভুমিকা পালন করে আসছে।
আদিবাসীদের ভূমি কমিশন ব্যবস্থা চালু করে তাদের সকল সমস্যার সমাধান ও নিরাপত্তা দিলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবে- এমনটাই প্রত্যাশা ক্ষুদ্র জাতি সত্তার জনগোষ্ঠী খাসিয়া সম্প্রদায়ের।
মন্তব্য চালু নেই