‘শ্রাবণ মেঘের দিনে হুমায়ূন স্মরণ’
এখন শ্রাবণ মেঘের দিন, মেঘাচ্ছন্ন আকাশে তবুও চাঁদ থেকে থেকেই দিচ্ছে উঁকি। এই চাঁদের মতোই পাঠক হৃদয়ে প্রিয় হুমায়ূন আহমেদের উপস্থিতি। তাইতো বৃষ্টি ঝরা এই শ্রাবণে তার চলে যাওয়ার চার বছর পরও হুমায়ূন ভক্তদের মনে সদা সজীব তাঁর উপস্থিতি।
আজ নন্দিত কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী।
আসলে ‘হুমায়ূন আহমেদ’ নামটিই তাঁর পরিচয়। তাঁর বিশেষত্ব বর্ণনার জন্য আর কোনো বিশেষণ লাগে না। তাঁর জনপ্রিয়তার আক্ষরিক প্রমাণ ছিল প্রতি বইমেলায় নতুন লেখা বইগুলো কেনার জন্য পাঠকের উপচানো ভিড়। যা তাঁর মৃত্যুর পরেও অবাহ্যত ছিল এবং আছে। পাঠকের কতটা মনের গভীরে পৌঁছাতে পারলে এরকম ভালোবাসা পাওয়া যায় তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে!
প্রিয় হুমায়ূন ‘স্যার’ চলে গেলেও রয়ে গেছেন অসংখ্য ভক্তের অন্তরে, হৃদয় জুড়ে। কৈশোর থেকে তার বই পড়ে, নাটক এবং চলচ্চিত্র দেখে বড় হওয়াদের কাছে এই দিনটি যেনো শ্রাবণের বিষন্নতাকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ।
আজও কেনো তাকে মনে পড়ে এমন প্রশ্নের উত্তরে হুমায়ূন ভক্ত মুশফী জামান মিতু বলেন,“তাকে মনে পড়ে অনেক কারণেই। সবচেয়ে প্রথম হয়তো আমাকে পাঠক করার জন্য। খুব সহজ ভাষায় গল্পের ভেতর ঢুকে পড়া শিখে গেলে কঠিন সাহিত্যেও যাওয়া যায়।
মনে পড়ে ব্যক্তি হুমায়ুনকে। সেই যে সবার মনে খামখেয়ালি আসতো, সেটা অন্য কারো লেখা পড়ে, অন্য লেখকের জীবনকে জেনে আসে না। মনে পড়ে নির্মাতা হিসেবে। অবশ্যই তার প্রথম দিকের কাজগুলো। তার আয়নাঘর সবচেয়ে বেশী পছন্দ।
তারপর, বাদশাহ নামদার, জোছনা ও জননীর গল্প, শুভ্র, হিমুর রূপালি রাত্রি, দেয়াল, মিসির আলীর সবগুলোই প্রিয়। মানবিক অনুভূতি নির্ভর সায়েন্স ফিকশন, কিছু ছোট গল্প। আমার মতে পাঠক তৈরির কিছু কাজ তো করে গেছেনই। ইতিহাস নির্ভর আরো কিছু লিখে গেলে সবগুলোই একেকটা মাস্টারপিস হতো।”
হুমায়ূন সাহিত্যে ইতিহাসের গন্ধ পাওয়ার দিকটি নিয়ে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমিনুল আবদুল্লাহ ।
এই হুমায়ূন ভক্তের কথায়,“ইতিহাস হুমায়ুন আহমেদ এর সবচেয়ে বড় সার্থকতা ছিল কথাচ্ছলে মানুষকে পড়ানো, জানানো। কাও-কে কোন ইতিহাসের বই ধরিয়ে দিলে হয়তবা পড়তে সে গড়িমসি করবে। কিন্তু বাদশাহ নামদার, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প অথবা হালের ‘দেয়াল’- মানুষ বুঝতেই পারবে না সে কতখানি অতীত ভ্রমণ করে এসেছে এবং যেগুলো হয়তবা কখনই নিজ উদ্যোগে পড়া হত না সে সব তথ্যগুলোও মনের আনাচে কানাচে গেঁথে যায়।”
কথায় আছে, সহজ কথা যায় না বলা সহজে। অথচ এই কাজটিই অবলীলায় করে পাঠক মন দখল করে আছেন হুমায়ূন আহমেদ। এই সহজ করে লেখার প্রেমেই পড়েছিলেন নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দেবোলীনা মুমু।
হুমায়ূনীয় ঢঙে জীবনের খুঁটিনাটির চমৎকার উপস্থাপন তাকে মুগ্ধ করেছিলো জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গল্পের বই পড়া শিখেছি তাঁর বই পড়ে। এভাবে এতো সহজে করে , খুব সূক্ষ্মভাবে দৃশ্যপট তুলে ধরে মুগ্ধ করেছেন তিনি। সবসময়ের প্রিয় ‘মিসির আলি’। আর বাংলাদেশের উঠতি বয়সীদের একটি সময় পর্যন্ত বইয়ের সঙ্গে ধরে রাখার পেছনে স্যারের কৃতিত্ব অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তবে হুমায়ূন চর্চা না করে তাকে ঘিরে বাণিজ্যিক মনোভাব পাঠক হিসেবে দুঃখ দেয়’।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র হুমায়ুন আহমেদ। উপন্যাস, গল্প, নাটকসহ সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার লেখা বইয়ের সংখ্যা কয়েকশ। এ ছাড়া বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন প্রয়াত তিনি।
মন্তব্য চালু নেই