শ্রবণশক্তি হারিয়েছে সরকার
বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘ যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছে তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নাগরিকদের কথার কোনো মূল্য তাদের কাছে নেই। জনগণের কথা শোনার ক্ষমতা তারা হারিয়ে ফেলেছে।’
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মহান বিজয় দিবস- ২০১৪ উপলক্ষে ‘৪৩তম বিজয় দিবস এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি শীর্ষক’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ পরিষদ।
ক্ষমতাসীনরা ভুল করেও মুখ খুলছে না মন্তব্য করে কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি বলছি না আপনারা পদত্যাগ করুন। আমি বলছি আপনারা মুখ খুলুন। মুখ খুলে সমস্যার সমাধান করুন।’
কামাল হোসেন বলেন, ‘যারা ক্ষমতায় আছে তারা ব্যাংক ও শেয়ারবাজার লুট করে জনগণকে দুই আঙ্গুল (ভি চিহ্ন) দেখাচ্ছে। সরকার মনে করে যেকোনো মূল্যেই হোক, আমরা ক্ষমতায় আছি। ঐতিহ্যের সবগুলো খাত নষ্ট করে হলেও তারা ক্ষমতায় থাকতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি মনে করে আজীবন ক্ষমতায় থাকবো, তবে তারা পাগলের স্বর্গে বসবাস করছে।’
ড. কামাল বলেন, ‘ক্ষমতার মালিক জনগণ। মালিক এমনি এমনি হয়নি। অনেক রক্তের বিনিময়ে এই মালিকানা পেয়েছে। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রের কাজ। যদি জনগণের স্বাধীনতা বিলীন করা হয়, তবে হাজার হাজার শহীদের আত্মাকে অবমাননা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেন রাষ্ট্র আজ মানবিবকতা হারিয়েছে? যদি রাষ্ট্রের মালিকরা ঐক্যবদ্ধ থাকতো তবে তারা এটা করতে পারতো না। আমরা মালিকরাই বেহিসাবি হয়ে গেছি। তাই রাষ্ট্র আজ অমানবিক হয়ে গেছে।’
সর্বসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের আর চুপ করে বসে থাকলে হবে না। গ্রামবাসী ভাই-বোনদের মনে রাখতে হবে আপনারাই রাষ্ট্রের মালিক। ছেলে-মেয়েদের এই ক্ষমতা সম্পর্কে বুঝাতে হবে। এই ক্ষমতার উৎস কি, মালিকের কাজ কি সেটা বুঝাতে হবে। আপনাদের অসহায় বোধ করে বসে থাকার কোনো কারণ নেই। ঘরে ঘরে মানবাধিকার রক্ষা করার চেষ্টায় দুর্গ গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের যেখানে যে ধরনের সংস্কার প্রয়োজন সেটা আমাদেরই করতে হবে। আশা করছি বিজয় আমাদের হবেই।’
ড. কামাল বলেন, ‘আগামী ৫ তারিখের পর আদলত খুলবে। সেখানে জিহাদের বাবাকে অবমাননার জন্য যে শুনানি হবে, আমি সেই শুনানিতে যাব। শুধু এটা না আরো যতো অবমাননার শুনানি হবে আমি সবগুলোতে যাব। যারা এই অবমাননাকারীদের আশ্রয় দিয়েছে তাদেরও বিচার হোক, আমি তার জন্য আদালতে যাব।’
‘অতীতকে নিয়ে অনেক সমালোচনাই করা যায়, কিন্তু নতুন বছরে আমরা ভবিষ্যৎ নিয়েই আশাবাদী হতে চাই’ উল্লেখ করেন খ্যাতিমান এই আইনীবী। তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা যে দলেরই হই না কেন, সংবিধানের মূলনীতি মেনে চলি। ইতিহাস প্রমাণ করেছে জনগণের বিজয় হবেই।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘রাষ্ট্র আজ অমানবিক হয়ে গেছে। একজন পিতা তার ছেলে হারিয়ে পাগলপ্রায়, তাকে ধরে নিয়ে ১২ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছে। থানা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তার গায়ের প্রহারের দাগ দেখিয়েছে। কতো বড় অমানবিক হলে এটা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের বাহিনী গিয়ে সেখানে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু উদ্ধার করতে পারেনি। পরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছে, এখানে কিছুই নেই। ছেলেকে লুকিয়ে রেখে মিথ্যা বলেছে। যখন স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করেছে তখন ছেলেটিকে শাজাহানপুরে নিতে দেয়া হয়নি। পোস্টমর্টেম করে মরদেহ মুড়িয়ে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এরপর যখন জিহাদের বাবা মামলা করতে গিয়েছে তখন কার কার নামে মামলা হয়েছে তাও সে জানে না। পুলিশ তাদের ইচ্ছামত কিছু লোকের নামে মামলা দিয়েছে।’
সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা কর্মীদের কাছে গিয়ে নিরাপত্তা চাইতে সবাই শঙ্কা প্রকাশ করছে। তাদের দ্বারাই নিরাপত্তা লঙ্ঘিত হচ্ছে।’
তাই কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে তার বিরুদ্ধে সবাইকে একযোগে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি নুরুল হুদা মিলুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন- মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ পরিষদের উপদেষ্টা কাজী সিরাজ, বিএইচ আরএমসির পরিচালক ব্যারিস্টার মেজর (অব.) সরোয়ার হোসেন, নির্বাহী পরিচালক তালুকদার মুনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ।
মন্তব্য চালু নেই