শেষ পর্যন্ত কাঁদতে কাঁদতে খালি হাতেই বাড়ি ফিরলেন মা
হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে বেশিক্ষণ সিএনজিচালিত অটোরিকশা দাঁড়াতে দেওয়া হয় না। তাই দ্রুত ওয়ার্ড থেকে বের হওয়ার জন্য বারবার তাগাদা দিচ্ছেন স্বামী। কিন্তু জেসমিন আক্তার নিরুত্তর। তাঁর দুচোখ টলমল করছে। ছেলেকে ছাড়া তিনি কীভাবে বাড়ি যাবেন। আশা ছিল, হাসপাতাল ছাড়ার আগে কেউ এসে সুখবর দেবে, চুরি হওয়া তাঁর বুকের মানিককে পাওয়া গেছে।
চিকিৎসকের ছাড়পত্র পাওয়ার পর বুধবার সকালেই জেসমিন আক্তারের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখেন স্বামী শফিউল আলম। কিন্তু হাসপাতাল ছাড়তে ছাড়তে তাঁদের দুপুর হয়ে যায়। এ কয় দিন চিকিৎসা ঠিকমতো চললেও নাওয়া-খাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন জেসমিন। কাঁদতে কাঁদতে তাঁর চোখ ফুলে গেছে। অটোরিকশায় ওঠার আগে শুধু বললেন, ‘কেবল ছেলের কথা মনে পড়ে। আমার…’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ২ জুলাই জেসমিন আক্তার দ্বিতীয় ছেলের জন্ম দেন। অস্ত্রোপচারের স্থানে সংক্রমণ হওয়ায় প্রসবোত্তর ওয়ার্ডে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। ১৫ জুলাই এই ওয়ার্ড থেকেই তাঁর শিশুপুত্র চুরি হয়।
শফিউল-জেসমিন দম্পতির বড় ছেলে সৈকত ইসলামের বয়স আড়াই বছর। সেও মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে ছিল। সেদিন সৈকত খেলতে খেলতে ওয়ার্ডের বাইরে চলে যায়। তাকে খুঁজতে তিনি ওয়ার্ডের বাইরে বের হন। তাঁর সঙ্গে থাকা মা ফাতেমা বেগম তখন শৌচাগারে ছিলেন। বড় ছেলেকে খুঁজে বের করে ওয়ার্ডে নিজের শয্যায় এসে দেখেন নবজাতক নেই।
জেসমিন জানান, ‘আমার ছেলে তার ভাইয়ের নাম মান্না রাখবে বলেছিল। বাড়ি গিয়ে অনুষ্ঠান করে নাম রাখার কথা। কিন্তু…’
জেসমিনের স্বামী শফিউল আলম ভাড়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক। প্রায় তিন সপ্তাহ হাসপাতালেই কাটিয়েছেন তিনি। শফিউল জানান, চিকিৎসা বাবদ তাঁর ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিছু টাকা ধার করেছেন। সবাই আশ্বাস দিয়েছে, বাচ্চা ফিরে পাবেন তিনি। এখন খালি হাতে রাউজানের গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন।
শিশু চুরি হওয়ার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে হাসপাতালেরই এক নিরাপত্তারক্ষী (বেসরকারি) ও তাঁর স্ত্রীকে আটক করে র্যা ব। শিশুটির বাবার করা মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রত্নেশ্বর মজুমদার জানান, শিশু উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তার দুজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
বাড়ি ফেরার আগে পুলিশ ও চমেক প্রশাসন জেসমিনদের নাম ঠিকানা লিখে রেখেছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার শহিদুল গনি তাঁর কক্ষে ডেকে নিয়ে শফিউলকে সান্ত্বনা দিয়েছেন।
খোন্দকার শহিদুল গনি জানান, এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে জন্য হাসপাতালের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত আরও ১০০ আনসার সদস্য চাওয়া হয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই