শুধুমাত্র বাসায় যেতে পারবেন খালেদা জিয়া

গুলশানের নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে গত ৩ জানুয়ারি রাত থেকে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গত শনিবার ও সোমবার কার্যালয় থেকে বের হওয়ার উদ্যোগ নিয়ে পুলিশি বাধায় বিফলও হন তিনি। এমনকি মূল ফটকে তালা লাগিয়ে আসা-যাওয়ার উপর কড়াকড়ি আরোপ করে পুলিশ। শুক্রবার দ্বিতীয় দফা তালা খোলা হলেও সোমবারের পর থেকে বের হওয়ার কোনো উদ্যোগ না নিয়ে কার্যালয়েই অবস্থান করছেন খালেদা।

খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি। তিনি অসুস্থ হলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন, কিন্তু তা না করে তিনি কার্যালয়ে অবস্থান করে নাটক করছেন।

বিএনপির অভিযোগ, তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে কোথাও যেতে দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু পুলিশ বলছে, তিনি অবরুদ্ধ নন, বাসায় যেতে চাইলে যেতে পারবেন। তবে অন্য কোথাও নয়।

৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টায় গুলশানের নিজ কাযার্লয় থেকে নয়াপল্টনে অসুস্থ রিজভী আহমেদকে দেখতে যাওয়ার সময় মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে তাকে বের হতে বাধা দেয় পুলিশ। তখন থেকেই ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। এরপর ৫ জানুয়ারি বিকেলে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’র কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার জন্য অফিস থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন খালেদা জিয়া। তখনও পুলিশ বাধা দেয়। এমনকি পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করা হয়। এতে খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে দাবি বিএনপির।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার বা অন্তরীণ নন। তাকে উষ্কানি দেয়া থেকে নিবৃত্ত রাখা হয়েছে। তিনি দলের নেতাদের বাদ রেখে একাই দেশবিরোধী চক্রান্ত করে যাচ্ছেন। দেশবাসী তাকে রাজনীতি থেকে বিদায় করে দেবে।’

গত সোমবার বেলা ১২টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১২টার দিকে ওই কার্যালয়ের তালা খুলে দিয়ে পৌনে ১১ ঘণ্টা পর আবারো তালা দেয় চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে। এরপর আবার শুক্রবার সকালে ফটকের তালা খুলে দেয়া হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া আর বাইরে বের হওয়ার কোনো উদ্যোগ নেননি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনকে শনিবার রাত থেকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তিনি যাতে বের হতে না পারেন সে জন্য বালু ও ইটের ট্রাক দিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়া হয়েছিল। মূল ফটকে তালা লাগানো হয়েছিল। এখনো রাস্তায় পুলিশের গাড়ির মাধ্যমে ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হয়েছে। মিডিয়ায় এসব খবর প্রচারিত হয়েছে। খালেদা জিয়াকে যে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে তা দেশবাসীও যানে।’

খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) নুরুল আলম বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় যেতে চাইলে তাকে সব রকম সহযোগিতা করা হবে। এর জন্য পুলিশ বাহিনী প্রস্তুত। তবে অন্য কোথাও যেতে চাইলে তাকে নিরুৎসাহিত করা হবে।’

গত শনিবার থেকে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে দায়িত্ব পালন করে। তবে শুক্রবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কমিয়ে নেয়া হয়েছে। ওইদিন ৩২ জন পুরুষ ও ২৪ জন নারী পুলিশ সদস্যকে কার্যালয়ের সমানে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এছাড়া প্রধান সড়কে ছিল প্রায় ৫০ পুলিশ।

পুলিশের সংখ্যা কমানো হলেও কার্যালয়ের দক্ষিণ দিকের রাস্তার ‍উপর একটি জলকামান আড়াআড়িভাবে রাখা এবং কার্যালয় থেকে উত্তর দিকে খালেদা জিয়ার বাসায় যাওয়ার রাস্তায় দু’টি পুলিশের গাড়ি দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশের ক্ষেত্রে আগের মতোই কড়াকড়ি আরোপ অব্যাহত রয়েছে।

গুলশান কার্যালয়ের সামনে দায়িত্বরত ওসি (তদন্ত) ফিরোজ শুক্রবার সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘নিরাপত্তা আগের মতোই রয়েছে। তবে কার্যালয়ের সামনের অতিরিক্ত পুলিশকে প্রধান সড়কে রাখা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু পুলিশকে বিশ্রামে রাখা হয়েছে। তবে প্রয়োজন হলে আবার তাদেরকে নিয়ে আসা হবে।’



মন্তব্য চালু নেই