শুঁটকি তৈরি করে সফলতা অর্জন করেছেন আত্রাইয়ের রামপদ শীল

উত্তর জনপদের মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভরতেঁতুলিয়ায় শুটকির তৈরি করে সফলতা অর্জন করেছেন রামপদ শীল (৪৫)। শুঁটকি তৈরী সম্পর্কে তার সাথে কথা বললে তিনি জানান, দীর্ঘ দুই যুগ ধরে এ ব্যবসার সাথে জড়িত। সারা বছর ব্যবসা চললেও শুঁটকি তৈরি মূলত বছরের মধ্যে ৬ মাসের জন্য চলে। বর্ষা শেষ হলে শুরু হয় শুঁটকির মৌসুম। চলতি বছর তিনি কেবল মাত্র পুঁটি, বাইম ও ছোট মাছের শুঁটকি তৈরী করছেন। সোলাই পুঁটি ৫০ থেকে ৭৫ টাকা, বাইম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা এবং ছোট মাছ ৫০ খেকে ৬০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করে শুঁটকি তৈরি করতে হয়। মৌসুমে তিনি ৩০০ থেকে ৪০০ মণ শুঁটকি তৈরি করেন। প্রতি মণ পুঁটি শুঁটকি তৈরি করার পর বিক্রি হয় ১৫ হাজার টাকা দরে। বাইম ২৪ হাজার টাকা এবং ছোট মাছের শুঁটকি ৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়। শুঁটকি ব্যবসা একটি অসম্ভব লাভজনক ব্যবসা। নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া, আহসানগঞ্জ রেলপট্ট্রি, বড়সাঁওতা, বান্দাইখাড়া, গজমতখালী, সমসপাড়া এলাকায় প্রায় ১৫-১৬টি আড়ৎ থেকে উত্তারঞ্চল রংপুর কুড়িগ্রাম, সৈয়দপুর দক্ষিনাঞ্চলের খুলনা, যশোর, ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, চট্রগ্রামে শুঁটকি রপ্তানি করা হয়। এসব আড়ৎ সংলগ্ন গ্রামসমুহে গড়ে উঠেছে প্রায় ৫০-৬০টি শুঁটকি খোলা। জেলার সমুহে, বাইম, শোল, খলিসা, চাঁন্দা, টেংরা, কাঁচকি, টাকি, মায়া, চুঁচড়াসহ অসংখ্য জাতের মাছ দিয়ে শুঁটকি তৈরি হয়।
উপজেলার হাটকালুপাড়া বিলসুতি বিল এলাকার প্রায় ৩৪টি গ্রামে মৎস্য জীবিরা শুঁটকি বানিয়ে আহসানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন টোলমুক্ত মাছ বাজারের আড়ৎসমুহে সরবরাহ করে। জেলার আত্রাই নদী ও বিল অঞ্চল হওয়ায় আহসানগঞ্জ রেল স্টেশন সংলগ্ন টোলমুক্ত বাজার এলাকায় গড়ে উঠেছে শুঁটকির অন্যতম বৃহৎ ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র। মাছের জেলা নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শুঁটকি ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের দুয়ার উন্মুক্ত হলেও ভাগ্য উন্নয়ন হয়নাই শুঁটকি তৈরির জন্য যারা মাছ সরবরাহ করে তাদের। সুবিধা বঞ্চিত এসব মৎস্য জীবিদের দিকে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকার সচেতন মহল।
নওগাঁয় অসহায় দুঃস্থ ও শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরন
নওগাঁ জেলা পুলিশের উদ্যোগে অসহায়, দুঃস্থ ও শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরন করা হয়েছে। শনিবার সকালে শহরের পিটিআই স্কুল মাঠে এই শীতবস্ত্র বিতরন করা হয়। নওগাঁ শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দীপক কুমার দেবের সভাপতিত্বে ও সহযোগীতায় শীতবস্ত্র বিতরন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শীতবস্ত্র বিতরন করেন নওগাঁর পুলিশ সুপার মোঃ মোজাম্মেল হক পিপিএম। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে সদর মডেল থানার ওসি জাকিরুল ইসলাম, জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আজাদ হোসেন মুরাদ, পিটিআই এর সুপারিনটেনডেন্ট আজিজুর রহমান, রোটারিয়ান চন্দন কুমার দেব, রোটারিয়ান আলহাজ্ব ইসমাইল হোসেন, এ্যাপেক্সশিয়ান আতিক রহমান, সোনালী ব্যাংকের অফিসার মমতাজ হোসেন সেলিম, আমজাদ হোসেন, খন্দকার রউফ পাভেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধান অতিথি অসহায় দুঃস্থ ৩০০ জন শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরন করেন
মান্দায় আমন ধানের বাম্পার ফলন সত্ত্বেও লোকসানে পড়ায় কৃষকের সর্বনাশ
ধান চাষে বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম প্রধান এলাকা তথা উত্তরাঞ্চলের শস্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায় চলতি মওসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে মাঠের সব আমন ধান কাটা হয়ে গেছে। চলছে মাড়াই,বাছাই ও ফসল ঘরে তোলা ও বেচা বিক্রির কাজ। বর্তমানে বাজারে আমন ধানের দাম অত্যন্ত কমে গেছে। হাট-বাজারে ধান বিক্রিকালে মণ প্রতি কৃষককে লোকসান গুণতে হচ্ছে স্থান ভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মত। ফলে ব্রি-ধান (ইরি) চাষের মত আমন ধানেও কৃষকদের এবার সর্বনাশের কারণে মুখে সুখের হাসি যেন একেবারেই ম্লান হয়ে গেছে। তাই ফলন ভাল হলেও ভালো দাম না পাওয়ার কৃষকরা আমন ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন বলে সুধী মহল মনে করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অফিস চলতি মৌসুমে মান্দা উপজেলায় সাড়ে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা র্নিধারণ করেছিল। সেখানে অর্জিত হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ৮শত হেক্টর জমি। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮শত হেক্টর বেশি। এর মধ্যে রোপা আমন ১৬ হাজার ১৫০ হেক্টর ও স্থানীয় আতপ ধান ৬৫০ হেক্টর। আমন ধানের জাতের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল বিনা ধান-৭,ব্রি-ধান ৫৬,৬২ এবং স্বর্ণা জাতের ধানের চাষ হয়েছে। বিঘা প্রতি ধান চাষে কৃষকদের ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার মত। হেক্টর প্রতি এবার ফলন হয়েছে সাড়ে ৪ থেকে সর্বোচ্চ ৫ টন। এ হিসেবে ধান উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০হাজার ৫শত মেট্রিক টন। মান্দার সর্ববৃহৎ চৌবাড়িয়াহাটসহ,দেলুয়াবাড়ি,সতি,গোটগাড়ি,পাঁজরভাঙ্গা,গোপালপুর,কালিকাপুর,দাসপাড়া,মৈনম,সদর প্রসাদপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি মণ গুটি স্বর্ণা ধান বিক্রি হচ্ছে ৫২০ থেকে ৫৫০শত টাকায় এবং স্বর্ণা-৫ জাতের আমন ধান বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা দরে।প্রসাদপুর গ্রামের কৃষক মমতাজ পাউক,শহিদুল ইসলাম ফকির ,বড়পই গ্রামের আমজাদ হোসেন,ছোটবেলালদহ গ্রামের সিরাজ উদ্দিন,স্বপন কুমার,তালপাতিলা গ্রামের অমজাদ হোসেন,পরানপুর গ্রামের সাখাওয়াত হোসেন,ইসমাইল হোসেন,সোনাপুর গ্রামেরফিরোজ হোসেন,খুদিয়াডাঙ্গা গ্রামের বিরাজ উদ্দিন,মতিউর রহমানসহ অনেক কৃষক জানান, ধান বীজ ক্রয়,জমি চাষ ও প্রস্তুত,সার,কীটনাশক,সেচ,তেল ও কাটাই মাড়াইয়ে শ্রমিকদের মজুরিসহ প্রতি মণ ধাণ উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকার মত । প্রতি মণ গুটি স্বর্ণা ধান বিক্রি হচ্ছে ৫২০ থেকে ৫৫০শত টাকায় এবং স্বর্ণা-৫ জাতের আমন ধান বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা দরে। ফলে মণ প্রতি লোকসান হচ্ছে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। চলতি মওসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি জমিতে কৃষকরা ধান চাষ করেছেন বলে স্থানীয় কৃষি অফিস দাবী করেছেন। এছাড়া এ মৌসুমে আমন ধান চাষকে সফল করতে কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে সাম্ভাব্য সব রকম সহযোগিতা অব্যহত রাখা হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়। কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ধান রোপণের জন্য পর্যাপ্ত সার সরবরাহসহ সকল কৃষি উপকরণ সহজলভ্য হওয়াতে কৃষকরা সময় মতো জমি তৈরিসহ সার এবং এ বছর আবহাওয়া অনূকুল হওয়ায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এবছর শেষের দিকে বর্ষা কাল দীর্ঘ স্থায়ী হওয়ায় প্রথম দিকে কিছু উঁচু জমিতে সেচ দিলেও বেশির জমিতে কোন সেচ দিতে হয়নি। বরং ফসলের মাঠ ডুবে যাওয়ায় পানি নিষ্কাষণ করতে হয়েছে কৃষকদের। তারপরও পোকার আক্রমণ কম হয়েছে। শুধু কিছুটা নেকব্লাষ্ট পোকার আক্রমণ হলেও প্রতিরোধ করা গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম প্রামানিক জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় সেচের তেমন দরকার হয়নি। পোকার আক্রমণ কম হয়েছে। সব কিছুর পরেও কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পারায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এবার আমন মওসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে তবে বাজারে দাম কম হওয়ায় কৃষকদের লোকসান পড়তে হচ্ছে বলে ও তিনি মন্তব্য করেন।
মন্তব্য চালু নেই