শিশু শিখবে খেলার ছলে
দিনের বেশির ভাগ সময় বাচ্চাটি দিব্যি মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ায়। চঞ্চলতার অভাব থাকে না কোনো কাজে। পড়তে বসলেই শুরু হয় নানা বাহানা। কোথা থেকে যেন রাজ্যের দুষ্টুমি এসে ভর করে তার মাথায়। কখনও ঘুমের ভান করে, কখনো টিভি দেখার বায়না, কখনো হঠাৎই শুরু হয় পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা, দাঁত ব্যথা। লক্ষ্মী ছেলেটি হঠাৎ চিৎকারে তখনি বাড়ি মাথায় তুলে দেবে। আর এই গোলমালে কর্মব্যস্ত আপনিও মেজাজ চরমে উঠিয়ে দিতে পারেন সহজে। আর তখনি শুরু হয়ে গেল কড়া শাসন।
আধুনিক সভ্যতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হল পড়ালেখা। এই হাতিয়ারের গুরুত্ব ছোট্ট শিশুটির কাছে কতোই বা? খেলার গন্ধ না পেলে কোনো কিছুতেই তার মন বসে না। তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সেই অধিকাংশ শিশুর লেখাপড়ায় হাতেখড়ি হয়। এই সময়টাতে সে পড়ার চেয়ে খেলতেই বেশি ভালোবাসে। কাজেই শিশুর আনুষ্ঠানিক পড়াশোনা শুরুর আগে থেকেই একটু একটু করে পড়াশোনার সঙ্গে পরিচিত করে তুলতে হবে। শিশুদের প্রয়োজনে খেলাকেই বইয়ের সঙ্গী করে নিলে মনও ভরে, বাড়ে জ্ঞানও। খেলায় খেলায় অপ্রিয় বই-খাতাও একসময় হয়ে ওঠে আপন। তারা টেরই পায় না কখন তাদের অজান্তেই অনেক কিছু শেখা হয়ে যাচ্ছে।
শিশুর গল্প শোনার ঝোঁক থাকলে একটি বই থেকে মজার মজার গল্প পড়ে শোনাতে পারেন। গল্পগুলো তার ভালো লাগলে নিজেও পড়ার আগ্রহ দেখাবে। বাজারে বাচ্চাদের নানারকম অক্ষর, সংখ্যা, প্রাণী, বস্তু, রঙ এর নামসহ খেলনা পাওয়া যায়। পরপর অক্ষর সাজানো, সংখ্যা মেলানো, বস্তুর নাম বলা, রঙ চেনানো যেতে পারে এসব খেলনার মাধ্যমে। সম্ভব হলে কিছুদিন পর খেলনাগুলো পরিবর্তন করে দিলে আরও আনন্দ পাবে। শেখার আগ্রহ দেখাবে। ছবিযুক্ত বই পাওয়া যায়। বাহারি রঙের এসব বই তার শেখার আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দেবে। সম্ভব হলে সমবয়সী কারো সঙ্গে এসব দিয়ে খেলার সুযোগ করে দিতে পারেন। তাতে তার আগ্রহ বেড়ে যাবে।
সোনামনিকে পড়তে বলে নিজে টিভি দেখতে বসে যাওয়া যাবে না। বরং শিশুর পাশে থেকে তাকে বুঝান পড়ালেখার সময়টা আপনিও আনন্দের সঙ্গেই নিচ্ছেন। শিশুর ঘুমানোর ঘরে এক কোনায় একটি রিডিং টেবিল দিয়ে দিন। টেবিলের গায়ে শিশুর প্রিয় কার্টুন স্টিকার লাগিয়ে দিলে সে আনন্দ পাবে। এই ঘরে তার খেলনাগুলোও রাখতে পারেন। কখনও বিভিন্ন অক্ষর দেখানোর মাধ্যমে আবার কখনো বা সুর করে বর্ণমালা পড়ার মাধ্যমে শিশুর চোখ ও কানকে পড়ালেখার উপযোগী করে গড়ে তুলুন। বর্ণমালার সঙ্গে চক বা পেন্সিল দিয়েও তাকে লিখতে শেখান। শিশু যে জিনিসটি শিখছে তা কিছুক্ষণের মধ্যে ভুলে যাচ্ছে। তাই বারবার তাকে ঠিকটা মনে করিয়ে দিন।
শিশুদের পড়া শেখার জন্য ইন্টারনেট থেকে অ্যাপ্লিকেশান ডাউনলোড করে নিতে পারেন। নানা রকম ছবি দেখে আনন্দ পাবে। এতে খুব সহজে উচ্চারণসহ ইংলিশ বর্ণমালা, কবিতা, সংখ্যা শিখতে পারবে- বাচ্চাদের জন্য খুবই কাজে লাগবে। আজকের দিনের বাচ্চারা প্রযুক্তি নির্ভর কিছু শেখাকে বেশি গুরুত্ব দিতে পারে।
বাচ্চাদের শেখার মাঝে সাংস্কৃতিক নানা বিষয় থাকতে পারে। মনোরঞ্জনের সঙ্গে তার শেখাটা হয়ে উঠবে সহজ। তাই বাচ্চার শেখাটা যেন খেলার মাধ্যমে নিশ্চিত হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
মন্তব্য চালু নেই