শিশুর যদি টাইফয়েড হয়, কী করবেন
টাইফয়েড জ্বর (Typhoid fever) হল এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, যা সালমোনেলা টাইফি ও সালমোনেলা প্যারাটাইফি’ জীবাণু বা ব্যাক্টেরিয়ার কারণে হয়। এ রোগ খাদ্য বা পানি পানের মাধ্যমে ছড়ায়।
চিকিৎসকের মতে, দূষিত খাদ্য, পানি এবং দুধের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া শরীরের খাদ্যনালিতে প্রবেশ করে। এ ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে এবং পানির মাধ্যমেও এই রোগের জীবাণু ছড়ায়।
টাইফয়েডের প্রথম উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, দুর্বলতা, মাথা ব্যথা ও পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, বমি, কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্ষুদামন্দা, ত্বকের শুষ্কতা, শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়।
সাধারণত সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে এর উন্নত হয়।
সাধারণত টাইফয়েড কাবু করে ফেলে শিশুদের। তবে বিশেষজ্ঞরা কিছু ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে এ রোগ থেকে পরিত্রাণের পরামর্শ দিয়েছেন। নিম্নে ওই পদ্ধতিগুলো আলোচনা করা হল :
পুদিনা পাতা : এক কাপ পানিতে এক চামচ আদা কুচি এবং ২০টি পুদিনা পাতা দিতে হবে। সবকিছু একসঙ্গে মিশিয়ে তা সিদ্ধ করে অর্ধেকে আনতে হবে। লিকারের সঙ্গে অল্প পরিমাণে মধু মিশিয়ে এই মিশ্রণ দিনে ৩ বার পান করুন।
পুদিনা পাতা এন্টিবায়োটিক সমৃদ্ধ যা জ্বরকে নিম্নস্তরে আনতে সাহায্য করে। পেটকে শান্ত রাখতে এবং আপনার ইমিউন সিস্টেমকে সতেজ রাখতেও সহায়তা করে এ পাতা।
লবঙ্গ : লবঙ্গ টাইফয়েড চিকিৎসার জন্য সহায়ক। লবঙ্গের উপস্থিত তেলে ব্যাকটেরিয়ারোধী বৈশিষ্ট্য থাকে যা আপনার টাইফয়েডের ভাইরাস মারতে সাহায্য করে।
আট কাপ পানিতে ৫টি লবঙ্গ দিয়ে জ্বাল দিন। পানি অর্ধেক হয়ে আসলে চুলা থেকে নামিয়ে ঢাকনা দিন এবং ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। পরে ছেকে নিয়ে দিনে তিনবার একটু একটু পরে পান করুন।
কলা : কলায় পটাসিয়াম আছে যা জ্বর ও পাতলা পায়খানার রোধে সহায়তা করে। এ ফলে হারিয়ে যাওয়া ইলেক্ট্রোলাইট প্রতিস্থাপন করার ক্ষমতা রয়েছে।
টাইফয়েড হলে প্রতিদিন ২টি করে পাকা কলা খেতে হবে। অন্যথায় দুইটি কলা ভর্তা করে অর্ধেক কাপ দই এ মিশিয়ে তাতে ১ চামচ মধু যোগ করুন। কয়েক সপ্তাহের জন্য ২-৩ বার প্রতিদিন এটি খান। উপকার পাবেন।
রসুন : প্রতিদিন ২টি রসুনের কোষ খালি পেটে দুই সপ্তাহ খাবেন। এতে করে টাইফয়েড জ্বরের উপসর্গ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
এছাড়া আধা চামচ রসুন কুচি, এক কাপ দুধ এবং চার কাপ পানি একসঙ্গে মিশিয়ে তা চুলায় দিয়ে ঘন করে নিয়ে দিনে তিনবার পান করতে পারেন।
সাবধানতা, রসুন গর্ভবতী নারীর খাওয়া নিষিদ্ধ।
পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার : টাইফয়েড আপনাকে দুর্বল করে দেয়। এসময় আপনার দরকার পুষ্টিকর খাবার। ভাল খাদ্য আপনার শরীরের তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য এবং আপনার ইমিউন সিস্টেম অনুমোদনে সাহায্য করে।
শরীরের পুনরুদ্ধারের জন্য ডিম ও দুধের মত উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া যেতে পারে। আপনার খাদ্যের তালিকায় কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার রাখতে পারেন। কারণ কার্বোহাইড্রেট শরীরের শক্তি যোগায়।
এছাড়া সব সময় পরিষ্কার পোশাক পরা, নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান করে টাইফয়েড প্রতিরোধ করা যায়। অবশ্যই হাত ভালোভাবে ধুতে হবে। ঘরের জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস অবশ্যই আলাদা করে রাখুন। পানি সবসময় ফুটিয়ে পান করুন।
মন্তব্য চালু নেই