শিশুটিকে মৃত ভেবেছিল ইঁদুরের দল

হয়তো শিশুটি কখনোই জানবে না কে তার জন্মদাতা বা দাত্রী। কখনোই জানা হবে না হতভাগ্য এ শিশুর জন্ম নেয়ার নেপথ্যের কারণ। কোনো পাষণ্ড তাকে ফেলে গেছে মৃত্যুকূপে? মৃত ভেবে শিশুটিকে কামড়ে কামড়ে খাওয়া শুরু করেছিল বড় ইঁদুরের দল। কিন্তু অলৌকিকভাবেই বেঁচে গেল সে। শুক্রবার মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জ একশ’ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল) জরুরি বিভাগের পেছন থেকে ওই নবজাতক ছেলে শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পেছনে একটি গাছের নিচে একটি ছোট গর্তের মধ্য থেকে ওই নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। হতভাগ্য ওই শিশুটিকে দেখতে গতকাল হাসপাতালে ছুটে গেছেন প্রশাসন থেকে শুরু করে সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষই। আর ধিক্কার দিয়েছেন সেই পাষণ্ড পিতা-মাতাকে।

তবে অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালেই ভূমিষ্ঠ হওয়া ওই শিশুটিকে ফেলে গেছে কেউ। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করে বলছে, শুক্রবার হাসপাতালে কোনো ডেলিভারি হয়নি।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জরুরি বিভাগের পেছনের ওই গর্তে কে বা কারা নবজাতকটিকে ফেলে যায়। শিশুটিকে উদ্ধারের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটির চিকিৎসা এবং দুধের ব্যবস্থা করে। খবর পেয়ে শনিবার সকালে সদর উপজেলার সদ্য বিদায়ী ইউএনও গাউসুল আজম নতুন কাপড় এবং দুধ নিয়ে হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে যান। তিনি শিশুটির খোঁজখবর নেন এবং এখনই শিশুটিকে কারও কাছে হস্তান্তর না করে আগে তার সুচিকিৎসার নির্দেশ দেন।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, শুক্রবার মধ্যরাতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পেছনে কান্নার আওয়াজ পান হাসপাতালেরই নার্স আয়েশার ছেলে আরিফুর রহমান অপু। সে বিষয়টি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. জহিরুল ইসলামকে জানালে তিনি কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় শিশুটিকে জরুরি বিভাগের পেছনে একটি গর্তের মধ্য থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। গর্তে ফেলে যাওয়ার পর কিছু বড় ধরনের ইঁদুর নবজাতকটিকে মৃত ভেবে ডান পায়ে কামড়াতে থাকে। ডা. জহিরুল উদ্ধার করে রাতেই ফিডার কিনে শিশুটিকে দুধ খাওয়ার ব্যবস্থা করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।

হাসপাতালের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুক্রবার মধ্যরাতে হাসপাতাল থেকে এক নারীকে কাপড়ে মোড়ানো কিছু নিয়ে বের হতে দেখা গেছে। এর কিছু সময় পরই শিশুটির কান্নার শব্দ পায় নার্স আয়েশার ছেলে আরিফ।

ওই সূত্রটি আরও জানায়, শুক্রবার হাসপাতালে কোনো ডেলিভারি হয়নি। কিন্তু তাদের ধারণা কোনো পক্ষের যোগসাজশে হাসপাতালেই শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তবে হাসপাতালের রেজিস্টারে শুক্রবার কোনো ডেলিভারি হয়েছে এমন কিছু লিপিবদ্ধ নেই।

সদর উপজেলার ইউএনও গাউসুল আজম বলেন, ফেলে যাওয়ার পর শিশুটির ডান পায়ে চিকা বা ইঁদুরে কামড়িয়েছে। তাই আগে তার সুচিকিৎসার প্রয়োজন।



মন্তব্য চালু নেই