শিলংয়ে সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা
অবস্থা ভালো নয় সালাহ উদ্দিনের, দেশে ফিরতে চান
স্বামীকে দেখতে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে পৌঁছেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। রোববার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার ২২৯ ফ্লাইটে করে তিনি কলকাতার উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যান। এর প্রায় আধাঘণ্টা পর কলকাতায় পৌঁছেন। সেখানেই রাতযাপন করেন তিনি।
সোমবার সকালে কলকাতা থেকে একটি বিমানে করে শিলংয়ে পৌঁছান হাসিনা আহমেদ। তার সঙ্গে পরিবারের আরো দুই সদস্য রয়েছেন।
মেঘালয় পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সালাহ উদ্দিনের দেখা করতে কোনো সমস্যা নেই।
এদিকে শিলংয়ে রয়েছেন বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি। তিনি সেখান থেকে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শিলংয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সালাহ উদ্দিনের স্মৃতিভ্রম সমস্যা দেখা দিয়েছে।
নিখোঁজ হওয়ার দুই মাস পর মেঘালয়ে হদিস মেলে সালাহ উদ্দিনের। সেখানে শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।
খোঁজ মেলার পর ৫৪ বছর বয়সী সালাহ উদ্দিন হাসপাতালে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, গত ১০ মার্চ অচেনা এক দল লোক উত্তরার একটি বাড়ি থেকে তাকে তুলে নেয়ার পর থেকে আর কিছুই তিনি মনে করতে পারছেন না। সিলেট সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বের শিলংয়ে কীভাবে এলেন, তাও তিনি বলতে পারেননি।
গত মার্চে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সালাহ উদ্দিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করে পরিবার। এর পর গত ১২ মে শিলং থেকে স্বামীর ফোন পাওয়ার কথা জানান সালাহ উদ্দিনপত্নী হাসিনা আহমেদ।
শিলং পুলিশ জানিয়েছে, অসংলগ্ন আচরণের কারণে তাকে প্রথমে একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সিভিল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে একটি মামলাও হয়েছে সেখানে। কিন্তু অসুস্থতার কারণে গতকাল শনিবার তাকে আদালতে তোলা হয়নি। তবে শারীরিক অবস্থা ভালো থাকলে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আজ আদালতে হাজির করা হতে পারে।
সালাহ উদ্দিনের কিডনির অবস্থা ভালো নয়
বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার পর আদালতে পাঠানো হবে। আদালতই সিদ্ধান্ত দেবে তাকে দেশে পাঠানো হবে নাকি জেলে পাঠানো হবে।
মেঘালয় পুলিশ প্রশাসন আশা করছে, বিএনপির এই নেতাকে দ্রুত ছাড়া হবে হাসপাতাল থেকে।
মেঘালয় পুলিশের ডেপুটি মহাপরিচালক রাজিব মেহতা জানান, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই কেবল সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। আমার মনে হচ্ছে তিনি খুব তাড়াতাড়িই ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন হাসপাতাল থেকে।
সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদের আজ সোমবার শিলং পৌঁছার কথা রয়েছে। তিনি রোববার বিকেলে কলকাতায় যান। সেখানে রাতযাপনের পর তিনি শিলংয়ের উদ্দেশে রওনা দেন।
মেঘালয় গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, সালাহ উদ্দিনকে দেশে পাঠানোর জন্য তাকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ভারতে অনুপ্রবেশকারী কোনো ব্যক্তিকে তার দেশে ফেরত পাঠানোর কাজটি দেখভাল করে থাকে বিএসএফ। তবে বিএসএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এখনো এ নিয়ে কোনো নির্দেশনা পায়নি।
কিন্তু সালাহ উদ্দিনের দেশে ফেরা নিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর একটি কারণ
তার অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করা। আরেকটি হচ্ছে সিলং হাসপাতোলে চিকিৎসা গ্রহণ। এখনো তার কিছু টেস্ট বাকি রয়েছে।
মেঘালয় পুলিশ সালাহ উদ্দিনকে আদালতের সামনে উপস্থাপন করতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করার দিকে এগুচ্ছে। স্থানীয় আইন-কানুনও এর সঙ্গে জড়িত। সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ শিলং হাপাতালে ভর্তি হন ১২ মে। আর আগের দিন তাকে মেঘালয় মানসিক হাসপাতালে নেয়া হয়। ১১ মে তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশের ( বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভ্রমণ) অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।
একজন সিনিয়র আইনজীবীর বরাত দিয়ে শিংল টাইমস জানায়, ফরেনার অ্যাক্ট লঙ্ঘনের অভিযোগে পুলিশ সালাহ উদ্দিনকে আদালতে পাঠাবে। আর আদালতের হেফাজতে থাকা মানেই হচ্ছে তাকে জেলে যেতে হবে। ফরেনার অ্যাক্ট লঙ্ঘনের দায়ে তার সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেলও হতে পারে।
রাজিব মেহতা বলেন, আদালতই সিদ্ধান্ত নেবেন তাকে ফরেনার অ্যাক্ট লঙ্ঘনের দায়ে শাস্তি দেয়া হবে নাকি দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এছাড়া যদি দিল্লি সরকারের কোনো নির্দেশনা আসে তাও আমরা আদালতে উপস্থাপন করবো।
উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানো হবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশে ফেরার পর কেবল সালাহ উদ্দিন আহমেদ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। ভারতে থাকাকালীন নয়।’
খবর বেরুলেও সালাহ উদ্দিনকে হস্তান্তরের বিএসএফ কোনো নির্দেশনা পায়নি। এ ব্যাপারে বিএসএফ ডিআইজি এসকে সিং বলেন, ‘দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলে বিষয়টি বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশকে ( বিজিবি) জানানো হবে। সীমান্তে তাদের কাছেই হস্তান্তর করা হবে।’
ডা. ডি জে গোস্বামী রোববার বলেন, ‘সালাহ উদ্দিনের ইসিজি করা হয়েছে। তার হার্টের অবস্থা স্বাভাবিক। আল্ট্রা সাউন্ডে তার কিডনিও পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে কিডনির অবস্থা সন্তোষজনক নয়। এ কারণে তাকে দ্রুত সিটি স্ক্যান করাতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। স্কিন পরীক্ষার জন্যও একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োজিত করা হয়েছে।’
বিএনপি নেতা আব্দুল লতিফ জনি রোববার দাবি করেন, সালাহ উদ্দিনের স্মৃতিভ্রম হয়েছে। এর পর সোমবার সালাহ উদ্দিনের সিটি স্ক্যান করা হয় সিভিল হাসপাতালে।
তবে সব মিলিয়ে সালাহ উদ্দিন কম বেশি সুস্থ্য রয়েছেন। তিনি হাসপাতালের দেয়া খাবার খাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
দেশে ফিরতে চান সালাহ উদ্দিন
ভারতের শিলংয়ে সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তিনি কোনো অপরাধ করেননি। দেশে ফিরতে চান তিনি।
সোমবার দুপুরে হাসপাতালে উপস্থিত গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, তিনি এখন খুবই অসুস্থ। তাই দ্রুত পরিবারের কাছে ফিরতে চান।
সালাহ উদ্দিন বলেন, তিনি এমন কোন অপরাধ করেননি যার কারণে তাকে দেশের বাইরে থাকতে হবে।
তিনি জানান, স্বেচ্ছায় নয়, চোখ ও হাত বেঁধে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তাকে শিলংয়ে আনা হয়েছিল। ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারির কারণে তার দেশে ফেরার ব্যাপারে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে সহযোগিতা করে সরকার ভালো কাজ করেনি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামি নই বা এমন কোনো অপরাধ করিনি যে কারণে আমার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে হবে।’
দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ হওয়ার পর গত ১২ মে মেঘালয়ের শিলংয়ে খোঁজ পাওয়া যায় এই বিএনপি নেতার। অনুপ্রবেশের অভিযোগে সেখানকার পুলিশ তাকে আটক করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
মন্তব্য চালু নেই