শিবিরের গোপন মিশন বাস্তবায়নেই আইএস নাটক!

আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নাটক সাজিয়ে নিজেদের কর্মীদের দিয়ে ময়মনসিংহে অস্থিরতা সৃষ্টির গোপন মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছিল ইসলামী ছাত্র শিবির। আইএসকে হাইলাইটস করে মূলত সরকারকে বিপাকে ফেলতেই তারা এ নীল নকশা করেছিল বলে মনে করেছে গোয়েন্দারা।

তবে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে স্কুল পড়ুয়া মোল্লা ফয়সালের (১৬) নেতৃত্বে নয় জন গোয়েন্দা জালে আটকা পড়ার পর ফাঁস হয়ে যায় তাদের দেশবিরোধী এ ষড়যন্ত্র।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোল্লা ফয়সাল (১৫), মিজানুর রহমান (২৬) ও বদিউল হাসান (২৪) নিজেদের শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে ময়মনসিংহে।

তাদের ইতোমধ্যে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আর এ ঘটনায় আটক আব্দুর রশিদ ও হায়দার আলীসহ ছয় জনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসাবে সোমবার দুপুরে আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ।

কেন আইএস’র নাম ভাঙানো

সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ফেলতেই শিবিরের নীল নকশা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেন মোল্লা ফয়সাল। শৈশব থেকেই কথিত ইসলামী আন্দোলনের দিকে তার আগ্রহকে বেশ ভলোভাবেই কাজে লাগায় শিবির। এ কারণে তারা বেছে নেয় কিছুটা প্রত্যন্ত জনপদ ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জকে। গোপন বৈঠক করে মোল্লা ফয়সালের নেতৃত্বে কয়েকজন নিজেরাই আইএস লেখা লিফলেট প্রস্তুত করে। এরপর এ লিফলেট তারা উপজেলাব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নেয়।

জঙ্গিদের এক সময়কার ঘাঁটি ময়মনসিংহে এখনও জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব রয়েছে এটা প্রমাণ করাই ছিল মোল্লা ফয়সাল তথা শিবিরের কৌশল। কিন্তু নাশকতাসহ বড় ধরণের কোন ঘটনা ঘটানোর আগেই তারা পুলিশের জালে বন্দি হওয়ায় বুমেরাং হয়ে যায় সেই কৌশল এমনটি মনে করেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমারত হোসেন।

‘মধ্যপ্রাচ্যের ডাক’

মোল্লা ফয়সালের কাছ থেকে পুলিশ নীল কাগজে কালো কালিতে লেখা ‘মধ্যপ্রাচ্যের ডাক’ শীর্ষক একটি লিফলেট জব্দ করে। এখানে বড় করে লেখা, ‘মধ্যপ্রাচ্যের ডাক’। নিচ দিয়ে বড় করে তার নাম লিখেছেন। সেখানে একটি ছড়া লিখেছেন এমন, ‘এসো মধ্যপ্রাচ্যে যাই/ইসরাঈল তাড়াই/থেকো না ঘরে বসে/ওরা ফিলিস্তিনিদের রক্ত নিলো চুষে/দুনিয়ার যত অন্যায়/ভাসিয়ে দাও বন্যায়/এসো ছুটে এসো/ইয়াহুদীবাদীদের নাশো।’ লিফলেটে প্রচারে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) এর কথা উল্লেখ রয়েছে।

ফয়সালের আদ্যোপান্ত

আইএস কাণ্ডের মূল খলনায়ক কিশোর ফয়সাল। ছোটবেলা থেকেই তার ইসলামিক আন্দোলনের দিকে ঝোঁক ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন খবর নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করতো দশম শ্রেণির এ শিক্ষার্থী। তার নানা নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলা জামায়াতের আমির শামসুদ্দিন আহমেদ। ক্রমশ ফয়সাল জড়িয়ে পড়েন শিবিরের রাজনীতিতে।

ডিবি’র ওসি ইমারত হোসেন জানান, বছরখানেক আগে ফয়সাল একই এলাকার মিজানুর রহমানের সঙ্গে শিবিরের আদলে ইসলামিক আন্দোলন নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে। এরপর তারা দু’জনে মিলে তাদের চক্রের সদস্য বাড়ানোর তৎপরতা চালায়। স্থানীয় বদিউল হাসানের দোকানে বসেই তারা এসব আলাপ-আলোচনা করতো।

আইএস নাটক

গত শুক্রবার বিকাল, রাত ও পরদিন শনিবার মোল্লা ফয়সালসহ নয়জনকে আটক করে ঈশ্বরগঞ্জ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ স্পষ্ট করে জানায়, আটকরা কেউই আইএস সদস্য নয়। শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব লোকজনই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতেই আইএস নাটক সাজিয়েছিল।
ডিবি’র ওসি ইমরাত জানান, তারা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও জঙ্গি সংগঠন আইএস’র নাম ব্যবহার করে দেশে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব আছে এটা প্রমাণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টা পুলিশের পদক্ষেপে ভেস্তে গেছে। একইসঙ্গে শিবিরের গোপন এ মিশনও ভেস্তে গেছে।

অত:পর তারা রিমান্ডে

আটক ফাহিম, মিজানুর ও বদিউল হাসানের বিরুদ্ধে শনিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম বাদী হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী ২০১২) এর ৬/৭/৮/৯/১১/১৪ ধারায় একটি মামলা করেন। মামলার পরদিন তাদের ময়মনসিংহের ৪ নং আমলি আদালতে হাজির করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। একই মামলায় বাকি ছয় জনকে সন্দেহভাজন হিসাবে সোমবার দুপুরে একই আদালতে পাঠানো হয় এবং পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায়। এখনও তাদের রিমান্ড শুনানি হয়নি বলে জানান ওসি ইমারত হোসেন।

নীরব শিবির:

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার নাটের গুরু মোল্লা ফয়সালসহ তিন জন নিজেদের শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত দাবি করলেও জেলা ও শহর ছাত্র শিবির এ বিষয়ে নীরব। বিভিন্ন সময়ে তারা স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে বিবৃতি পাঠালেও এ বিষয়ে তারা পুরোপুরি নীরব।
আর তাদের সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনেক দিন ধরেই আত্মগোপনে। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরও বন্ধ। বর্তমানে সংগঠনটির দায়িত্বে কারা আছেন এ নিয়েও রয়েছে ধুম্রজাল। এ কারণে এ ঘটনায় শিবিরের কারও বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই