শিখে নিন মুখ দেখে মন পড়া

অভিব্যক্তি দেখে মানুষের মনের কথা বোঝার ক্ষমতা সকলের থাকে না। তবে কেরিয়ার গুরুদের বক্তব্য, মানুষের বাহ্যিক আচরণ লক্ষ্য করে যারা অন্যের মন পড়তে পারেন, পেশাগত জীবনে তারাই উন্নতি করতে পারেন। শুধু তাই নয়, মনোবিদদের মতে এই ক্ষমতা আয়ত্ত করতে পারলে জীবনের বহু ঝড়-ঝাপটা অক্লেশে সামলে নেওয়া সম্ভব।

মনোবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মানুষের দৈহিক পরিভাষা এবং আপাত গুরুত্বহীন বিভঙ্গ দেখে তার চিন্তাধারার হদিশ মেলে। জানা গিয়েছে, ১৯৬৬ সালের এক বৃটিশ টেলিভিশন শো ‘লাই টু মি’ থেকে প্রথম বিষয়টি মনোবিদদের নজরে আসে। পরবর্তীকালে এ নিয়ে কাজ করেন হ্যাগার্ড ও আইজ্যাক্স নামে দুই গবেষক। মনোবিদের সঙ্গে রোগীর অকথিত ভাব বিনিময়ের সন্ধান করতে গিয়ে তারা আবিষ্কার করেন ‘মাইক্রোমোমেন্টারি এক্সপ্রেশনস’। মানসিক ব্যাধির চিকিৎসা করাতে আসা রোগীদের চলচ্চিত্র খুঁটিয়ে বিচার করে সূক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ভাবের বহিঃপ্রকাশ পর্যালোচনা করার পর তারা নিঃসন্দেহ হন যে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময় অসতর্ক ভঙ্গিমা পরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট মানুষের অন্তরের ভাবনার নাগাল পাওয়া সম্ভব।

তবে ‘মাইক্রোমোমেন্টারি এক্সপ্রেশনস’ শব্দবন্ধনীটি আদতে মার্কিন মনোবিজ্ঞানী পল একম্যানের মস্তিষ্কপ্রসূত। মিথ্যা ভাষণ নিয়ে সুদীর্ঘ গবেষণার পর ‘টেলিং লাইস’ বইয়ে এই বিষয়ে নিজস্ব বিবৃতি লিপিবদ্ধ করেছেন তিনি।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সাধারণ মুখভঙ্গিগুলি অনেক সময়ে আড়াল করা গেলেও সূক্ষ্ম ভঙ্গিমা লুকোনো মুশকিল। আর সাধারণ চোখে ধরা না পড়া সেই সমস্ত অভিব্যক্তি নজর করলে মানুষের মনের ভিতরে থাকা রাগ, দুঃখ, ভালোবাসা, আনন্দ, ঘৃণা, ভয়, ও বিস্ময় বুঝতে পারা কঠিন নয়। তবে এর জন্য সেকেন্ডের ১/১০ বা ১/৩০ ভাগ সময় খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। এই বিদ্যা আয়ত্ত করার প্রাথমিক কিছু টিপস নীচে দেওয়া হলো।

ভয়: ভ্রূ-এর পেশি সঙ্কোচনের ফলে তার দৈর্ঘ্য দৃশ্যত হ্রাস পায়। চোখের উপরের পাতা খুলে যায়, নীচের পাতা কুঁকড়ে যায়। ঠোঁটের দুই প্রান্ত বিস্ফারিত হয়।

আনন্দ: ঠোঁটে কেলে যায় চকিত হাসির রেখা। মুখের এই অংশে প্রধান জাইগোম্যাটিক পেশি ঠোঁটের দুই প্রান্তে টান ধরিয়ে উপর দিকে ঠেলে তোলে। চোখের পাশের পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ায় চামড়া কুঁচকে যায়। চোখের নীচের পাতা ফুলে ওঠে।

ক্ষোভ: এই ভাব হলে ভ্রু যুগল তুলনামূলক ভাবে গর্তে ঢুকে যায়। পেশি শক্ত হয়ে গিয়ে চোখের নীচের পাতা এবং নাকের উপরিভাগ কুঁচকে যায়।

লজ্জা: লজ্জা পেলে মানুষ সরাসরি কারও চোখের দিকে তাকাতে পারে না। দৃষ্টি নিম্নগামী হয়। নীচের ঠোঁট চেপে বসে। উপরের ঠোঁটও অনড় হয়ে পড়ে।

বিস্ময়: অবাক হলে মানুষের ভ্রূ যুগল ধনুকের মতো বেঁকে যায়। ঠোঁট দু’টির মধ্যে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে।

ফ্লার্টিং: এই অবস্থায় মুখে হাসি খেলে যাওয়ার পাশাপাশি মাথাও একদিকে কাত হয়ে যায়। দৃষ্টি সামনে নিবদ্ধ থাকে। ঠোঁটের দুই প্রান্ত চওড়া হয়। হনু উঁচু হয়ে ওঠে।

বিনয়: হাসিতে খানিক কৃত্রিমতা লক্ষ্য করা যায়। তবে চোখের আশেপাশে কোনো পরিবর্তন হয় না। ঠোঁটের প্রান্ত দু’টি পেশি সঙ্কোচনের ফলে উপর দিকে উঠবার চেষ্টা করে।

ভালোবাসা: মনে প্রেমের ভাব উৎপন্ন হলে মুখে পরিতৃপ্তি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ঠোঁটের দুই প্রান্ত শক্ত হয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। নীচের ঠোঁট শক্ত হয়ে যায়। মাথা অল্প ঝুঁকে পড়ে।– ওয়েবসাইট।



মন্তব্য চালু নেই