শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বাজেট বাড়ানোর প্রস্তাব ১৪ দলের

২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে দিক নির্দেশনার অভাব বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট নেতারা। একই সঙ্গে তারা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়াতে অর্থমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের আইপিডি কনফারেন্স হল রুমে ১৪ দল নেতাদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর মত বিনিময় সভায় নেতারা এ সব কথা বলেন।

সভায় জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘এই বিশাল বাজেট বাস্তবায়নে সরকারি সংস্থাগুলোকে যথাযথভাবে টিউন করতে হবে। দুটি খাতে বিনিয়োগ সবচেয়ে লাভজনক-এর একটি স্বাস্থ্য অপরটি শিক্ষা। মানুষের আয়ু বাড়ার সাথে সাথে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়বে। সেদিক থেকে কর্মসংস্থানের বিষয়টিও বাজেটে বিবেচনায় রাখতে হবে।’

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বডুয়া বলেন, ‘জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। গ্রাম-শহর বৈষম্য বাড়ছে। শিক্ষা-স্বাস্থ্য সাধারণ মানুষের বাইরে চলে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার করা যায় কী না সে বিষয়ে ভেবে দেখা প্রয়োজন। এ বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে।’

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, ‘বেসরকারি খাত থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ না হলে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে এই ৭৫ হাজার কোটি টাকা কীভাবে বিনিয়োগ হবে সে বিষয়ে বাজেটে দিক নির্দেশনামূলক কিছু বলা নেই। স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়ানো উচিত।’

গণ আজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস কে শিকদার বলেন, ‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি বাজেটে। ফলে এই টাকাগুলো দেশের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই আমি মনে করি এই কালো টাকাগুলো সেবা-উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা যায় কী না সে বিষয়ে ভেবে দেখা দরকার।’

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান বলেন, ‘মানবসম্পদ বিকাশের জন্য প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণে বাজেট প্রয়োজন। এই বিশাল বাজেট স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করাই বড় কথা। বাজেটের বড় দিকটি হলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিস্কার কোন নির্দেশনা নেই।’

তরিকত ফেডারেশনের যুগ্ম-মহাসচিব মুত্তাকিল বিল্লাহ রাব্বানী বলেন, ‘শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধি প্রয়োজন। এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে জঙ্গীবাদ নির্মূলে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া জরুরি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। হলমার্ক কেলেঙ্কারীর পর থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে চায় না। ব্যাংকগুলো ঋণ না দিলে নতুন শিল্প হবে না, শিল্প না হলে নতুন কর্মসংস্থানও হবে না। তাই এ বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষন করছি।’

কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম-আহ্বায়ক অসিত বরণ রায় বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়নে এই রাষ্ট্রযন্ত্র কতটুকু পারবে তাই দেখার বিষয়। আমরা সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করলেও দক্ষ শিক্ষক তৈরী করতে পারিনি। আদিবাসীদের বাজেট গতবারের তুলনায় কম। তাই আদিবাসীদের বিষয়টি বাজেটে বিবেচনা করতে হবে।’

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য যে বাজেট দেওয়া হয়েছে তা গতবারের তুলনায় কম। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে ২০ লাখ আদিবাসী বসবাস করে তাদের জন্য যে বাজেট তা আরও বাড়ানো যায় কী না। আমাদের বিভাগগুলোর মধ্যে রেল যোগাযোগ এখনও সুসংগঠিত হয়নি।’

জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরিন আখতার বলেন, ‘এই বাজেট বাস্তবায়নে সু-শাসন জরুরি।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, সাবেক পূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আওয়ামী লীগের দফরত সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আওয়ামী লীগের উপ-দফরত সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়াল প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই