শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকায় ছাত্রলীগের থাবা!

রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকায় ভাগ বসাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। উপবৃত্তির ১২ হাজার টাকার মধ্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই এক হাজার টাকা করে কেটে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি, বিদায় অনুষ্ঠানের চাঁদা হিসেবে এই টাকা আদায় করা হচ্ছে।
পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রতিষ্ঠানটির ৮টি বিভাগ থেকে ৭৩৮ জন শিক্ষার্থী অষ্টম সেমিস্টার শেষ করেছেন। এই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। এ জন্য সরকার থেকে তাদের ১২ হাজার টাকা করে এককালীন উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। রোববার (১১ ডিসেম্বর) সিভিল ও কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষার্থীদের এই টাকা দেয়া হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর মধ্যে টাকা বিতরণ করা হবে।
বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, রোববার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে অফিস কক্ষে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের আগে শিক্ষার্থীরা লাইনে দাঁড়ান। এ সময় পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের জানান, সবাইকে এক হাজার টাকা করে দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা টাকা দিতে রাজি হননি। এ সময় তারা অধ্যক্ষ আলী আকবর খানকে বিষয়টি জানান।
কিন্তু অধ্যক্ষও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পক্ষে সাফাই গান। তখন শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য অধ্যক্ষকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এতে বন্ধ হয়ে যায় টাকা বিতরণ। এরপর বিকেলে অবশ্য আবার টাকা বিতরণ শুরু হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মাথা পিঁছু এক হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে ঠিকই।
ভুক্তভোগি শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিটি বিভাগে একজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন টাকা আদায়ের জন্য। অফিস থেকে টাকা তোলার পরই বারান্দায় তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেয়া হচ্ছে। এবার ৭৩৮ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এক হাজার করে মোট সাত লাখ ৩৮ হাজার টাকা তোলার টার্গেট নিয়েছে ছাত্রলীগ। উপবৃত্তি বিতরণের প্রথম দিন থেকেই টাকা তোলা শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা কেউ এর প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। আবার সনদ আটকে দেয়ার ভয়ে পলিটেকনিক প্রশাসনের বিরুদ্ধেও তারা কিছু করতে পারছেন না। তাই ভয়ে তাদের টাকা দিতে হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আলী আকবর খান বলেন, টাকা আদায় করার জন্য কয়েকদিন আগে পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন তার কাছে আবেদন করেছেন। এ টাকা দিয়ে বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলে তাকে জানানো হয়েছে। তিনি তাদের টাকা আদায়ের মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন।
তবে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এর আগেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানের নামে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি থেকে টাকা আদায় করেছেন। কিন্তু তারা কোনো অনুষ্ঠানেরই আয়োজন করেননি। পরবর্তীতে ওই সব টাকার কোনো হদিসও পাওয়া যায়নি। এবারও সেই একই কায়দায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা টাকা আদায় করে আত্মসাতের পাঁয়তারা করছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ রহমান বলেন, এবার তাদের ‘মনোনীত’ সাধারণ শিক্ষার্থীরা টাকা আদায় করছেন। তবে এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে, ছাত্রলীগ তাদের সহযোগীতা করবে। আগামী ১৫ জানুয়ারির পর যে কোনো দিন অনুষ্ঠান হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
মন্তব্য চালু নেই