লাগাতার হরতাল-অবরোধ
শাহজাদপুরে দুগ্ধ শিল্পে চরম বিপর্যয়
বিএনপি সহ ২০ দলীয় জোটের লাগাতার হরতাল অবরোধে শাহজাদপুরের দুগ্ধ শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়েছে। ফলে উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক গো-খামার মালিক তাদের গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। উৎপাদিত দুধ পানির চেয়ে কম দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে তাদের গো-খাদ্যের দামই উঠছেনা । ফলে শাহজাদপুরের প্রান্তিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারী ও কৃষকেরা আর্থিক লোকসানে পড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেডের (মিল্ক ভিটা) আওতাভুক্ত রেশমবাড়ী প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুস সামাদ ফকির এক সাক্ষাতকারে বলেন, ১৯৭৩ সালে তাদের এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা হয়। লাগাতার হরতাল অবরোধে এবার তারা যে পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন এর আগে তা কখনো হয়নি।
তিনি জানান রেশমবাড়ী প্রামের ১৩২ জন প্রান্তিক কৃষক এ সমিতির সদস্য । এর মধ্যে চল্লিশ জন ভূমিহীন কৃষক রয়েছে।তাদের একমাত্র আয়ের অবলম্বন গো-খামার । এ গো-খামার প্রতিদিন যে দুধ উৎপন্ন হয় তা মিল্ক ভিটায় বিক্রি করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়া ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ সহ সংসারের যাবতীয় খরচ এ আয় থেকেই মেটানো হয়। লোকসানে দুধ বিক্রি করে তাদের এখন সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে।
অপর দিকে গো-খাদ্য খৈল ভূষির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গবাদী পালনে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে অনেকেই গো- খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি আরও জানান, গত ২৫ দিনে তাদের দুগ্ধ সমিতির প্রায় ২২ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। আর সকল সদস্যই এ লোকসানের ভাগিদার । ফলে প্রতিটি সদস্যই চরম বিপর্যয়ে পড়েছে। হরতাল অবরোধের কারনে প্রতি বস্তা ৮০০ (৫০ কেজি) টাকার স্থলে ১ হাজার ১০০ টাকা, প্রতি বস্তা খৈল ১ হাজার ৮০০ টাকার স্থলে ২ হাজার ৪০০ টাকা এবং প্রতি মণ খর ১৭০ টাকার স্থলে ২৫০ টাকা মণ হয়েছে। দুধ বিক্রি না হওয়ায় কৃষকের হাতে নগদ অর্থ নেই। তাই অর্থাভাবে দানাদার গো-খাদ্য কিনতে পারছেনা। ফলে গবাদি পশুর খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। অনেক খামারী ইতিমধ্যেই তাদের গো-খামার বন্ধ করে দিয়েছে। আব্দুস সামাদ ফকির আরও জানান, রেশম বাড়ী গ্রামে আরও দুটি দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রাথমিক সমবায় সমিতি রয়েছে। এ দুটি সমিতির সদস্য সংখ্যা ১৬০ জন। এদেরও অবস্থা একই রকম। তিনি আরও জানান, বাঘাবাড়ী মিল্ক ভিটার আওতাভুক্ত শাহজাদপুর সহ পাবনা-সিরাজগঞ্জ জেলায় সমিতির সংখ্যা ৬৫০ টি। এতে ১ লাখ ৩০ হাজার জন সদস্য রয়েছে।
এ সব সদস্যর প্রতিটি পরিবারে ৮ থেকে ১০ জন করে লোক দুধ বিক্রির আয়ের উপর নির্ভরশীল। এতে ১০ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১৩ লাখ মানুষের জীবন জীবিকা চলে এ আয়ের উপর । হরতাল অবরোধে দুগ্ধ শিল্পে চরম ধস নেমে আসায় এ সব পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও বিপর্যয় নেমে এসেছে। তারা অভাব অনটনে পড়ে এক বেলা আধা বেলা খেয়ে না খেয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছে। ফলে পাবনা-সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর,উল্লাপাড়া,ভাঙ্গুড়া,ফরিদপুর,বেড়া,সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলার গো-খামারীদের দুগ্ধ উৎপাদনে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে।
অপর দিকে জরুরী শিশু খাদ্য সরবরাহ না থাকায় ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তরল দুধের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়ে শিশু খাদ্য দুধের চরম অভাব দেখা দিয়েছে। এর বিরূপ প্রভাব পরেছে দুধের বাজারে। অপরদিকে দুধ নির্ভর শিশুরা পরেছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। তিনি আরও বলেন,দেশের সিংহভাগ তরল দুধের চাহিদা পূরণ করা হয় শাহজাদপুর উপজেলা সহ পাবনা-সিরাজগঞ্জ জেলার উৎপাদিত দুধ থেকে । তাই এ অঞ্চলে মিল্ক ভিটা সহ সরকারী বেসরকারী প্রায় ২০ টি দুগ্ধ উৎপাদন ও শীতলীকরণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। হরতাল অবরোধে এ সব প্রতিষ্ঠান গুলি চরম লোকসানের মুখে পড়েছে।
এ অবস্থা দ্রুত নিরসনে এবং প্রান্তিক কৃষকদের দুগ্ধ শিল্প ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার্থে তিনি দুগ্ধ পরিবহনে ব্যবহৃত ট্যাংক লরী,কাভার্ড ভ্যান,নছিমন,করিমন,রিক্সা-ভ্যান,ভটভটি ও ট্রলি গাড়ী হরতাল অবরোধের আওতামুক্ত রেখে পিকেটিংয়ে হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ না করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
মন্তব্য চালু নেই