‘শামীম ওসমান থাকলে ভালো, না থাকলে আরও ভালো’
ওসমান পরিবারের সদস্যরা ছাড়া শামীম ওসমানের লোকেরাও সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে কাজ করবেন বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেন, ‘তবে কেউ গোপনে, কেউ প্রকাশ্যে থাকবে। শামীম ওসমান নির্বাচনে সক্রিয় হলে ভালো, নিষ্ক্রিয় থাকলে আরও ভালো।’ রবিবার সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে নাসিক নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কৌশল নির্ধারণী এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত ক্ষমতাসীন দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এসব তথ্য জানান
সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘শামীম ওসমানের লোকজনসহ নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ আমার সঙ্গে রয়েছে। এমনকি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনও আমাকে সমর্থন দিয়েছেন।’ বৈঠকে নির্বাচনি প্রচারণার কৌশল বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘নারায়ণগঞ্জের প্রত্যেক ওয়ার্ডে আমি যাব। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে যাব। দরকার হলে উনার (শামীম ওসমান) কাছেও যাব। কিন্তু উনাকে ‘ডিল’ করতে হবে কেন্দ্র থেকে।’’ এ সময় নারায়ণগঞ্জের সংখ্যলঘুদের কাছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সংখ্যালঘু নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে অনুরোধ করেন আইভী।
প্রায় ২ ঘণ্টার বৈঠকে আইভী তার নির্বাচনি কৌশল জানান কেন্দ্রীয় নেতাদের। এ সময় তিনি পরামর্শও নেন। আইভীর বক্তব্য রাখার সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ও সম্পাদক আব্দুর রহমান নোট নেন। সন্ধ্যায় নোটগুলো দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে। এরপর দলের সভাপতির পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে আওয়ামী লীগ।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) একে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘সকাল ১১টায় আইভীকে নিয়ে কয়েকজন নেতা বৈঠক করেছি। নির্বাচনি বিভিন্ন কৌশল নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়েছে।’ এদিকে বৈঠকের বিষয়ে মেয়রপ্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘নির্বাচনি কৌশল জানাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।’
সূত্র জানায়, বৈঠকে আইভী অভিযোগ করেছেন, ‘শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জে ছড়াচ্ছেন, আইভী আওয়ামী লীগের কে?’ এ প্রসঙ্গে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘২০০১ সালের পর আমি ছাড়া নারায়ণগঞ্জে আর কে ছিল? আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নারায়ণগঞ্জে আপনারা আমি ছাড়া আর কাকে দিয়ে করিয়েছেন? পারিবারিক ঐতিহ্যের কথাও যদি ওঠে, আমি বলব, তার বাবার অবদানের চেয়ে আমার বাবার অবদান কম কি ছিল? তার বাবা দল করে টাকা কামাই করেছেন। আর আমার বাবা দল করে অর্থ-সম্পদ খুঁইয়েছেন। এছাড়া আমি যখন লেখাপড়া করতে বিদেশে যাই, তখন নেত্রীর (শেখ হাসিনা) অনুমতি নিয়েই যাই। নারায়ণগঞ্জে যখন তার (শামীম ওসমান) হয়ে দল করেছি, তখন আমি আওয়ামী লীগ করতাম। আর ২০১১ সালে যখন মেয়রপ্রার্থী হয়েছি, তখনই এই আমি আর আওয়ামী লীগের কেউ নই। আওয়ামী লীগ করিনি! এসব অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে।’
বৈঠকসূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের সংখ্যলঘুরা যেন নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন, সে ব্যাপারে দলের সহযোগিতা চেয়েছেন আইভী। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের ভয়ভীতি দেখানো শুরু হয়েছে। এগুলো কারা করছেন, নাটের গুরু কে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। তাই এদিকে বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি।’ গত নির্বাচনে যাদের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, এবারও তাদের সে দায়িত্ব দেওয়ার অনুমতি চেয়েছেন আইভী।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সমন্বয়কের দায়িত্ব পাওয়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান ছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুল হাসান নওফেল, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
মন্তব্য চালু নেই