শরীয়তপুরে ৫ হাজার শিক্ষার্থী উপবৃত্তি বঞ্চিত
শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ শরীয়তপুর জেলার ২৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী না থাকায় উপবৃত্তির দাবিদার হয়েও সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থী উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শিক্ষার্থী ও স্থানীয় অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার ২৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক একেবারেই নেই। সেই সঙ্গে নেই কোনো কর্মচারীও। পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলোতে কোনো নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক নেই। বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস নিচ্ছেন স্থানীয় কলেজের শিক্ষার্থীরা। এমতবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি শিশু শিক্ষার্থীরা শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে জেলার ছয়টি উপজেলায় বিদ্যালয়বিহীন গ্রামগুলোতে ২৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আসবাবপত্র সরবরাহ করা হলেও কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। প্রথমদিকে বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রেষণে শিক্ষক এনে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেন। বিদ্যালয়গুলো চরঞ্চলসহ প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় প্রেষণের শিক্ষকরা কিছুদিন পরেই তাদের নিজ নিজ বিদ্যালয় ফিরে যান।
পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক দিয়ে এসব বিদ্যালয়ের কার্যক্রম কোনো রকম চালু রাখা হয়। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির ব্যবস্থাও চালু হয়নি।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার কাঁচি কাঁটা ইউনিয়নের চর জিংকিং গ্রামের ৪০নং দুলারচর ছয়ানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহ জাহান, এ বিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। স্বেচ্ছাসেবী ও কলেজ শিক্ষার্থীদেরকে দিয়ে ক্লাস নেয়া হয়।
সদর উপজেলার চিকন্দী ইউনিয়নের বগাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আফরোজা আক্তার কান্তা জানান, দীর্ঘদিন যাবত আমাদের বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক নেই। দাফতরিক কাজগুলো আমাদেরই করতে হয়। দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ না দিলে কতদিন এভাবে চলবে।
এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মোস্তফা সরদার, জহিরুল ইসলাম, হেলাল হোসেন চৌধুরী ও নূর আলম গাজী জানান, দীর্ঘদিন কোনো শিক্ষক না থাকায় আমাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা দু:চিন্তায় আছি। ছেলে-মেয়েরা আজ পর্যন্ত কোনো উপবৃত্তির টাকা পায়নি। উপজেলায় যোগাযোগ করেও কোন সমাধান হয়নি।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার মোবারক দেওয়ান মেমোরিয়াল সরকারি বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক মো. সাগর জানান, আমি মুন্সীগঞ্জ হরগঙা কলেজে স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি। চরঞ্চলসহ প্রত্যন্ত এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কথা চিন্তা করে শিক্ষক হিসেবে কাজ করছি। বিদ্যালয়টির যে কজন শিক্ষক আছে সবাই কলেজ শিক্ষার্থী।
কয়েকটি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিরা জানান, দুর্গম চরাঞ্চল এবং এলাকার মানুষ গরীব বলে কোনো শিক্ষক এখানে আসতে চায় না। তদবির করে অন্যত্র চলে যান।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন খান বলেন, বিদ্যালয়গুলো চরঞ্চলসহ প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত বিধায় আগে থেকেই শিক্ষক সংকট। এসব প্রত্যন্ত এলাকায় কেউ যেতে চায় না।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মন্ত্রণালয় চারজন করে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করলেও এখন পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ দেয়নি। এসব বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
মন্তব্য চালু নেই