শরীয়তপুরের ডামুড্যায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
শরীয়তপুর প্রতিনিধি॥ শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলার সিড্যা ইউনিয়নে অবস্থিত সিড্যা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের প্রায় বিশ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এতে স্থানীয় অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
স্থানীয় ও বিদ্যালয় অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি হাবিবুর রহমান তোতা সিড্যা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে বিজ্ঞান বিভাগের সহকারি শিক্ষক হিসেবে দারুল আমান উচ্চ বিদ্যালয়ের চাকরিরত ছিলেন।
হাবিবুর রহমান তোতা সিড্যা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ের সরকারি অনুদান, বেসরকারি কালেকশন, শিক্ষার্থীদের বেতন, ভর্তি ফি, ফরম পূরণ, মিলাদ, পূজা, স্কাউট ফি ইত্যাদি বাবদ টাকা বিদ্যালয়ের ফান্টে জমা না করে ব্যাক্তিগত কাজে খাটিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি সূত্রে জানা যায়, সোনালী ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকে বিদ্যালয়ের যৌথ একাউন্ট রয়েছে। যৌথ একাউন্টে সিড্যা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আলাউদ্দিন আমীন ও সচিব হিসেবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান তোতার নাম রয়েছে। হাবিবুর রহমান এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে আসার পর থেকে বিদ্যালয়ের ফান্টে যে টাকা জমা হয়েছে তা ব্যাংকের একাউন্টে জমা করেননি। বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি মো. জালাল উদ্দিনের কাছে কালেকশন জমা দেননি। এই সাত বছরে প্রায় বিশ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা বিদ্যালয়ের যৌথ একাউন্টে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু একাউন্টে জমা না দিয়ে নিজেই আত্মসাত করেছেন।
বিদ্যালয়ে প্রতি ছয় মাসে একবার করে মিটিং হয়। মিটিং এই টাকার কথা উঠলে বলে টাকা আমার কাছে জমা আছে। ব্যাংকে জমা দিয়ে দিবে। ব্যাংকে টাকা জমা না দেয়ায় প্রধান শিক্ষকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে কিছু দিন আগে ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমার একটি রিসিভ ম্যানেজিং কমিটিকে দেখান।
বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি মো. জালাল উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাতের টাকা প্রধান শিক্ষক স্যারেই কালেকশন করেন। তিনিই ফান্টে জমা করেন। এ বিষয়ে স্কুল কতৃপক্ষ ভালো জানে।
সিড্যা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস আমীন, সেলিম হাওলাদার, রুহুল আমি সরদারসহ গ্রামের অনেকেই জানান, প্রধান শিক্ষক যোগদান পর থেকেই বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাত করেন আসছেন। কয়েকদিন যাবত শুনছি সিড্যা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা আত্মসাত করেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক (সাবেক) আবুল হাসেম আব্বাসি জানান, প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান তোতার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের শেষ দিকে ম্যানেজিং কমিটির লোকজন, বিদ্যালয়ের নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী, ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মাওলানা গোলাম মোস্তফা, সিড্যা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আব্দুল হাদি জিল্লু, স্থানীয় ব্যক্তি মুন্সী ফজলুর রহমানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গের উপস্থিতিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি সভা বসে। সভায় প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান তোতা অর্থ আত্মসাত করেছেন প্রমাণ হয়।
সিড্যা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান তোতা বলেন, ২০১০ সালে আমি এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। যেহেতু প্রধান শিক্ষক পদে আছি শত অভিযোগ থাকতে পারে। তবে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
সিড্যা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আলাউদ্দিন আমীন জানান, দুইবার আমি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। সোনালী ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকে বিদ্যালয়ের যৌথ হিসাব খোল্ ারয়েছে। যৌথ একাউন্টে আমি ও সচিব হিসেবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান তোতার নাম রয়েছে। সাত বছরে প্রায় বিশ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা বিদ্যালয়ের যৌথ একাউন্ডে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু একাউন্ডে জমা না দিয়ে প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান নিজেই আত্মসাত করেছেন। ব্যাংকে টাকা জমা না দেয়ায় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে কিছু দিন আগে ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমার একটি রিসিভ আমাদেরকে দেখান।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোপাল চন্দ্র মজুমদার বলেন, এ সম্পর্কে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য চালু নেই