শবে বরাতে যেসব জিনিস বর্জনীয়

মুসলিমদের কাছে শবে বরাত একটি পুণ্যময় রজনী। হিজরি বর্ষপঞ্জির অষ্টম মাস শাবানের ১৫তম রাত শবে বরাত নামে আমাদের সমাজে পরিচিত। ‘শব’ শব্দটি ফার্সি আর ‘বরাত’ শব্দটি আরবি ও ফর্সি উভয় ভাষাতেই ব্যবহৃত হয়। ফার্সিতে বরাত অর্থ ভাগ্য। শবে বরাত বললে ফার্সি নামকরণকেই ধর্তব্যে নিতে হয়। রাতটির আরবি নামকরণে বলা হয় লাইলাতুল বারাআত। ‘লাইলাতুল’ অর্থ রাত। আর ‘বারাআত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ সম্পর্কচ্ছেদ করা। এ অর্থেই পবিত্র কোরআনে সূরা আত্-তাওবাতে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। ‘বারাআত’ শব্দটির পরোক্ষ অর্থ মুক্তি। অতএব, লাইলাতুল বারাআত অর্থ মুক্তির রাত। যদিও আমাদের দেশে শবে বরাত অর্থ ভাগ্য রজনী। হাদিস শরিফে উল্লিখিত ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ই ভারতীয় উপমহাদেশে শবে বরাত বলে পরিচিত।

শবে বরাত নিয়ে এই উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। এ রাতের ফজিলতের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আছে। তবে কোরআন-সুন্নাহর সঠিক জ্ঞানই এই পথ থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে। শবে বরাত নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক সময় অতিরঞ্জিত কিছু করা হয়, যা কোরআন-হাদীসের পরিপন্থী।

অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত বিশ্বাস আছে যে শবে বরাতের রাতে প্রথম কোরআন নাজিল হয়েছিল এবং এ রাতে আগামী এক বছরের ভাগ্য লেখা হয় বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। এটা সম্পূর্ণভাবে পবিত্র কোরআনের ও বিশুদ্ধতম হাদিসের বিরোধী। তাই এমন বিশ্বাস অবশ্যই বর্জনীয়। পবিত্র কোরআন সর্বপ্রথম নাজিল হয়েছিল কদরের রাতে আর মহান আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টি ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেছেন জগৎ সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে।

বর্জনীয়: আমাদের দেশে শবে বরাত এলে পটকা ফোটানো, কবর ও মাজারে মোমবাতি/আগরবাতি জ্বালানো, আলোকসজ্জা করা ইত্যাদি রেওয়াজ বেশ পুরোনো। শব্দদূষণ, পরিবেশদূষণ এবং অপচয় ইত্যাদি কারণে এগুলো সম্পূর্ণ হারাম। অনেকে দল বেঁধে সারা রাত ঘুরে বেড়ান, গল্প করে আড্ডা মেরে রাত পার করে দেন। আবার অনেকে এক মসজিদে দুই রাকাআত নামাজ পড়ে অন্য মসজিদে গিয়ে আবার দুই রাকাআতা নামাজ পড়েন। এতে তারা ইবাদতে যতটা না সময় দেন, তার চেয়ে বাহিরে ঘুরে বেশি সময় নষ্ট করেন। পুণ্যময় একটি রাতকে এভাবে অবহেলায় নষ্ট করা মোটেও উচিত নয়। অনেকে আবার সারা রাত নফল নামাজ পড়ে, ইবাদত-বন্দেগি করে ঘুমিয়ে যান। ফজরের ফরজ নামাজ তাঁদের কাজা হয়ে যায়। স্মরণে রাখা প্রয়োজন, মহান আল্লাহর দরবারে লক্ষ বা কোটি রাকাত নফল নামাজও এক রাকাত ফরজ নামাজের সমান বিবেচিত হবে না। আর ফরজ নামাজ না পড়ার ক্ষতি পৃথিবীর কোনো কিছু দিয়েই পূরণ করা যাবে না। সুতরাং নফল ইবাদত ততটুকুই করা উচিত, যতটুকু করার দ্বারা ফরজ ফরজের কোনো না হয়। যদি নফলকে ফরজের ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়, তাহলে সব আমলই বরবাদ হয়ে যাবে।



মন্তব্য চালু নেই