লোপাট হওয়া টাকা যায়নি শ্রীলঙ্কায়!

শ্রীলঙ্কান একটি অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোপাট হওয়া ৮ কোটি ডলারের মধ্যে ২ কোটি ডলারের হদিস পাওয়া গেলেও শ্রীলঙ্কা সরকার বলছে পাচার হওয়া ওই পরিমাণ টাকা তাদের দেশে পৌঁছায়নি। তবে বাংলাদেশের দাবি খতিয়ে দেখতে অর্থ পাচারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তারা।

ইতোমধ্যে অর্থ পাচারের বিষয়টি তদন্ত করতে সিলিকন ভ্যালির নামী দুই সাইবার তদন্ত সংস্থা ফায়ার আই ও ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিক্সকে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়াও মার্কিন ব্যাংক থেকে লোপাট হওয়া বিপুল অর্থ ফেরত পেতে এবং জালিয়াতি তদন্তে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে মার্কিন সরকার।

শ্রীলঙ্কা সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দেশটির লংকা বিজনেস অনলাইন জানায়, অর্থ লোপাটের বিষয়টি শ্রীলঙ্কাকে জানিয়েছে বাংলাদেশ। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘টাকাগুলো আসলে শ্রীলঙ্কায় পৌঁছায়নি। এতো টাকা কোথায় গেলো সেটা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। তবে এই পর্যায়ে এর চেয়ে বেশি কিছু জানাতে পারছি না’।

হ্যাক হওয়া টাকার মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার ওই দেশের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং ইউনিটের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয়েছে বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা।

তিনি জানান, বাকি ৮১ মিলিয়ন ডলার ফেরত আনতে ওই দেশের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং ইউনিটের সাথে যোগাযোগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।

শুভঙ্কর জানান, ‘পাচার হওয়া টাকা যথাযথ নিয়ম না মেনে পাঠানো হয়েছে এবং এজন্য সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। অ্যাকাউন্টও ফ্রিজ করা হয়েছে এবং দ্রুত টাকা ফেরত আনার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

এদিকে ফিলিপিন্সের ডেইলি ইনকোয়ারারসহ অন্যান্য পত্রিকা জানিয়েছে, এই অর্থ কেলেঙ্কারিতে ওই দেশের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং সিস্টেম জড়িত। তারা জানায়, ব্যাংকটিতে গত মাসের ৫ তারিখে ৮১ মিলিয়ন ডলার ট্রান্সফার করা হয়। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে প্রথমে অর্থ যায় যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি ব্যাংকে- ব্যাংক অব নিউইয়র্ক, সিটি ব্যাংক এবং ওয়েলস ফার্গো ব্যাংক।

সেখান থেকে তারা ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাকাটি শহরের শাখায় অর্থ পাঠায়। শাখাটির প্রধান কর্মকর্তা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন এবং এই লেনদেনের প্রত্যেকটি ধাপ সম্পর্কে ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আগাগোড়াই জানতেন বলে ফিলিপিন্সের গণমাধ্যম জানিয়েছে।

কিন্তু ওই ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লোরেনযো ট্যান এই অভিযোগ অস্বীকার করছেন। ব্যাংকের তরফ থেকে দেয়া বিবৃতিতে এই অর্থ পাচারের ঘটনার সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাসও দেয়া হয়। ফিলিপিন্সের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এবং জুয়া ব্যবসার নিয়ন্ত্রক ‘এমিউজমেন্ট এন্ড গেমিং কর্পোরেশন’ ঘটনাটি এখন তদন্ত করে দেখছে।

ডেইলি ইনকোয়ারার পত্রিকা চুরি যাওয়া অর্থের হাতবদলের ক্রমধারা সম্পর্কে জানায়: রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে এই অর্থ তাদের ক্লায়েন্টদের মাধ্যমে চলে যায় স্থানীয় এক ফরেন এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর কাছে। ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার স্থানীয় মুদ্রায় বিনিময়ের পর এই পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৭০ কোটি পেসোতে।

এরপর এই অর্থ চলে যায় তিনটি বড় ক্যাসিনোতে। এগুলো হচ্ছে সোলারি রিসোর্ট এন্ড ক্যাসিনো, সিটি অব ড্রিমস এবং মাইডাস। পুরো অর্থ খরচ করে সেখানে জুয়া খেলার জন্য চিপস কেনা হয়েছে। এরপর সেই অর্থ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে হংকং এর বিভিন্ন একাউন্টে।



মন্তব্য চালু নেই