লিঙ্গ সমতা দাম্পত্য সম্পর্ককে আরো স্থিতিশীল করে
নারী-পুরুষের রোমান্টিক সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই এমন যে, পুরুষরা নারীদের প্রণয় প্রার্থনা করবে এবং নারীদেরকে “লালন-পালন” করবে। আর এটি খুবই শক্তিশালি একটি ঐতিহ্য।
কাউকে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, বিল দেওয়া, বা পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী হওয়া যাই হোক না কেন বেশিরভাগ রোমান্সের ধারণাই এখনো পুরুষদের উদ্যোক্তা এবং পরিচালক হওয়ার ভিত্তিতেই গঠিত। আর নারীরা হবেন গ্রহিতা এবং ঘরের তত্বাবধায়ক।
তথাপি সমাজ বদলাচ্ছে। নারীরা অনেক বেশি হারে পুরষদের ক্ষেত্রগুলোতে প্রবেশ করছে। তারা এখন উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন চাকরি করছেন এবং যৌন স্বাধীনতা উপভোগ করছেন।
কিন্তু এসব কি রোমান্সকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে? অনেকে লিঙ্গ সমতাকে নারী-পুরষের রোমান্সের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখে থাকেন। বিশেষ করে লিঙ্গ সমতার দাবিতে নারীবাদিরা পুরুষ-বিদ্বেষী বা সমকামি হয়ে ওঠেন এই অভিযোগে লিঙ্গ সমতার বিষয়টিকে খারাপ চোখে দেখা হয়। কিন্তু বিষয়টা কি সত্যিই তাই?
ঐতিহ্যগতভাবে নারীদের উচ্চ সামাজিক মর্যাদা এবং প্রভাব অর্জনের রুটটি ছিল উচ্চ-মর্যাদার রোমান্টিক জীবন সঙ্গিনীকে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য আকর্ষণ করা।
কিন্তু লিঙ্গ সমতার আন্দোলন যখন পরিস্থিতি বদলে দিতে শুরু করেছে, রোমান্সের সাংস্কৃতিক স্ক্রিপ্ট নারীদের সামাজিক ভুমিকা কাটছাট করতে শুরু করে দিয়েছে এবং এখনও তা করে চলেছে।
উদারহণত, যখন নবযৌবনপ্রাপ্ত নারীরা তাদের প্রথম যৌন অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে তারা প্রায়ই বলে যে, ঘটনাক্রমে তাদের ওই অভিজ্ঞতা হয়েছে। অন্যদিকে, ছেলেরা তাদের প্রথম যৌন অভিজ্ঞতাকে তাদের সক্রিয় তৎপরতার ফল হিসেবেই বর্ণনা করে। যৌনতায় ক্ষমতার এই ভারসাম্যহীনতা প্রাপ্তবয়স্কদের বেলায়ও ঘটে। যেখানে পুরুষরাই নারীদের চেয়ে যৌন মিলনের উদ্যোগ নেন বেশি এবং যৌন মিলনের ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব করেন।
তবে নারী-পুরুষের ঐতিহ্যবাহী রোমান্টিক সম্পর্কও দিনেকে দিন আরো সমতাভিত্তিক হয়ে উঠছে। আর লিঙ্গ সমতার দাবিতে আন্দোলনের ফলে নারীরা রোমান্সের ক্ষেত্রে আরো বেশি বেশি সক্রিয় হয়ে উঠছে। এবং অনেক বেশি আধিপত্যবাদি যৌন আচরণ প্রদর্শণ করছে।
এর ফলে যৌনতা এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে অসন্তুষ্টি তৈরি হচ্ছে।
তবে, বিপরীতক্রমে নারী-পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমতার ফলে উন্নত পারস্পরিক যোগাযোগ, উন্নত সম্পর্কের সন্তুষ্টি এবং উন্নত যৌন জীবন প্রতিষ্ঠা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যে নারীরা নারীবাদি পুরুষদের সঙ্গে সম্পর্কে আবদ্ধ আছেন তারা তাদের সম্পর্ককে অনেকে বেশি স্বাস্থ্যকর বলে আখ্যায়িত করেছেন। গুনগত মান এবং দীর্ঘস্থায়িত্ব উভয় দিক থেকেই। অন্তত যারা অনারীবাদি পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কবদ্ধ আছেন তাদের তুলনায়।
আর যে নারীরা ঐতিহ্যবাহী রোমান্টিক ধারণায় বিশ্বাস করে তারা সমতা অনুসন্ধানে নিজেদের ইচ্ছা এবং সক্ষমতা সীমিত করেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে নারীরা জীবন-যাপনের জন্য পুরুষদের উপরই নির্ভর করতে চান তারা উচ্চ শিক্ষা এবং উচ্চ মর্যাদার পেশা গ্রহণেও কম আগ্রহী থাকেন।
পুরুষরা কী ভুক্তভোগী?
অনেকে মনে করেন লিঙ্গ সমতার ফলে দাম্পত্য সম্পর্কে সমস্যা দেখা দিবে। কিন্তু আসলেই কি তাই?
গবেষণায় দেখা গেছে, নারী-পুরুষের আয়ের সমতা এবং গৃহস্থালি কাজ ভাগাভাগি করার ফলে সম্পর্ক অনেক বেশি স্থিতিশীল হয় এবং যৌনমিলন হয়ে বেশি।
এমনকি প্রকৃতপক্ষে স্বামীটি যখন ঘরের কাজে বেশি দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং বাজার করেন ও শিশুদের যত্ন নেন তখন বিয়ে বিচ্ছেদের সম্ভাবনা কমে আসে। তেমনি বাবারা যখন পিতৃত্বকালীন ছুটি নেন এবং ঘরের যত্নে আরো বেশি সময় ব্যয় করেন তখন দাম্পত্য জীবন অনেক বেশি স্থিতিশীল হয়।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে পুরুষরা নারীবাদি নারীদের সঙ্গে সম্পর্কবদ্ধ আছেন তারা সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক বেশি স্থিতিশীলতা এবং যৌন সন্তুষ্টি থাকার কথা বলেছেন।
তবে অন্য গবেষণায় দেখা গেছে, যে পুরুষরা ঐতিহ্যবাহী রোমান্সের ধারণায় বিশ্বাসী তারা অনেক বেশি সন্তুষ্টিমূলক এবং প্রতিশ্রুতিশীল সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী থাকেন।
সুত্র : বিজনেস ইনসাইডার
মন্তব্য চালু নেই