লালমিয়ার শেষ ইচ্ছা পূরণে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন সন্তানরা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :  ১৯৭১ সালে ৬নং সেক্টরের অধীনে সক্রিয়ভাবে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি কুড়িগ্রামের লালমিয়া। না পাওয়ার বেদনা নিয়ে তিনি পরপারে চলে গেলেও তার সন্তানরা এখনও ধরণা দিচ্ছেন বাবার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির আশায়।

জানা যায়, কুড়িগ্রামের পলাশবাড়ী পাঠানপাড়া গ্রামের মৃত: শহর উদ্দিনের পুত্র লাল মিয়া ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬ নং সেক্টরের অধীনে সুবেদার আরব আলী সাহেবের কোম্পানীতে সক্রিয়ভাবে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। এসময় পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কয়েকটি সম্মূখ যুদ্ধেও তিনি অংশ নেন। দেশ স্বাধীনের পর সহায় সম্বলহীন হয়ে অভাবের তাড়নায় দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজের সন্ধানে ছুটে বেড়ান এবং অনত্র পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। এজন্য তার মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র নেয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ২০০০ সালের দিকে কুড়িগ্রামে ফিরে এলে তখন থেকেই মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র সংগ্রহের জন্য জেলা ইউনিট কমান্ড, উপজেলা কমান্ডারদের কাছে নিরক্ষর লাল মিয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্রের জন্য ধরণা দিয়েও তা পাননি। এ বেদনা নিয়ে তিনি গত দু’বছর আগে পরাপারে চলে যান। এরপর থেকে তার পুত্র রাজু আহমেদ ও আফজাল আহমেদ বাবার শেষ ইচ্ছা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসনে কয়েকদফা দরখাস্ত করেও ব্যর্থ হন।

এদিকে ৬ নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা ও বীরপ্রতীক মোঃ আব্দুল হাই সরকার জানান, মৃত: লাল মিয়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ৬ নং সেক্টরের অধীনে সুবেদার আরব আলী সাহেবের কোম্পানীতে সক্রিয়ভাবে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। যা আমি স্বচক্ষে দেখেছি। তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার আফজাল হোসেন জানান, ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমি যখন সাহেবগঞ্জ ভারত সেক্টর হেড কোয়াটারে অবস্থান করি তখন উক্ত মৃত: লাল মিয়া সেখানে ছিলেন, পরে ইপিআর সুবেদার আরব আলী সাহেবের কোম্পানী থেকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় কয়েকটি সশস্ত্রযুদ্ধে সে এবং আমি সশরীরে অংশগ্রহন করি। একই রকম স্বাক্ষদেন কুড়িগ্রাম পুরাতন ষ্টেশন পাড়ার বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ হানিফ উদ্দিন।

এব্যাপারে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কমান্ডের কমান্ডার আব্দুল বাতেন জানান, সরকার বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্তির জন্য নতুন করে অনলাইনে দরখাস্ত গ্রহন করছে। এ ব্যাপারে খুব শীঘ্রই যাচাই বাছাই কমিটি তৈরী হবে। উক্ত কমিটি এবং স্বাক্ষীদের মাধ্যমেই বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতিসহ তালিকা সম্পন্ন করা হবে।

এ ব্যাপারে মৃত: লাল মিয়ার পুত্র রাজু আহমেদ বলেন, আমরা ছোট বেলা থেকেই বাবার কাছে তার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের গল্প শুনে শুনে বড় হয়েছি। এমনকি তার সাথের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছেও অনেক গল্প শুনেছি। বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সাহায্য পাওয়া নয়, মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া। তিনি এ বেদনা নিয়েই পরপারে চলে গেছেন। আমি তার সন্তান হিসেবে সরকারের কাছে দাবী করছি আমার বাবা যদি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয় থাকে, তাহলে তাকে যেন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই