মন্ত্রী সভার পর এবার রাজ্য সভায় অনুমোদন
লালমনিরহাটে ছিটমহল গুলোতে আনন্দ-উল্লাস
ভারতের মন্ত্রী সভায় বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমা চুক্তির অনুমোদনের পর বুধবার ওই বিল রাজ্যসভায় পাশ হওয়ায় লালমনিরহাটের ছিটমহল গুলোতে আনন্দ-উল্লাস করেছেন সেখানকার লোকজন। বৃহস্পতিবার এ বিল ভারতের লোকসভায় পাশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর বিলটি পাস হলে দীর্ঘ চার দশক ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত সংক্রান্ত যে বিরোধ ছিল তার অবসান হওয়ার পাশাপাশি দু’দেশের সীমান্তে নতুন দুয়ার খুলবে।
ছিটমহলবাসী দীর্ঘ ১৯৪৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৬৭ বছর পর বন্দি জীবন থেকে মুক্তি আলোর মুখ দেখছেন। ছিটমহলবাসী ফিরে পাচ্ছে তাদের পরিচয়। এতদিন নাগরিকত্ব না থাকা কার্যত এক ধরনের ‘রাষ্ট্রহীন’ এসব মানুষ ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই অমানবিক জীবন যাপন করে আসছেন।
লালমনিরহাটের উত্তর গোতামারীর ছিটমহলের বাসিন্দা সিরাজুল হক জানান, অনেক দিন পর হামা পরিচয় পাইনো এখন হামার ছেলে-মেয়েকে পড়ালেখা করবার পাম, এখন হামা বাংলাদেশের মানুষ।
গত ৩১ মার্চ ভারতীয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশি ছিট মহল পরিদর্শনের এসে দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা ছিটমহল পরিদর্শন শেষে বলেন, ছিটমহল বিনিময় চুক্তি দীর্ঘদিনের দাবি। এটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ছিটমহল বিনিময়ের ক্ষেত্রে সুবিধা-অসুবিধাগুলো খতিয়ে দেখার জন্য এসেছি। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার মন্ত্রিসভায় সদস্যরা ভূমি হস্তান্তর ও সীমানা র্নিধারণ সংক্রান্ত বিলটির অনুমোদন দিয়েছেন এবং ওই বিল বুধবার রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ভারতে বাংলাদেশি ছিটমহল রয়েছে ৫১টি। এর মোট এলাকা প্রায় ৭ হাজার ১১০ একর। অন্য দিকে বাংলাদেশের মধ্যে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। এ জমির পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার ১৬০ একর।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ছিটমহল বা সীমান্ত সমস্যা ১৯৪৭ সালে র্যাডক্লিফ রোয়েদাদ অনুযায়ী সৃষ্টি হয়। দু’দেশের বিদ্যমান সীমান্ত সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৭৪ সালে সই হয় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি। ১৯৭৪ সালের ১৬ মে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। এটি মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হিসেবেই পরিচিত। ওই চুক্তিতেই ছিটমহল বিনিময়ের কথা উল্লেখ করা হয়।
জানা গেছে, ভারতের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার অধীনে ১৮টি ও লালমনিরহাট জেলার অধীনে ৩৩টি। এগুলো ভারতের কোচবিহার জেলার প্রশাসনিক সীমানার ভেতরে। বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতের ছিটমহলের ১১১টিই পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার। এগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলায় ১২টি, লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি, পঞ্চগড় জেলায় ৩৬টি এবং নীলফামারীতে অবস্থিত ৪টি।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের তাগাদা দিলে তখনকার কংগ্রেস সরকার এ নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উঠে আসে এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ে ঢাকা সফরে একটি প্রটোকল সই হয়। এর পর ভারতে রাজ্যসভায় বেশ ক’বার বিলটি উত্থাপিত হলে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশীদ বিরোধী পক্ষের তোপের মুখে পড়েন। আর গত বছর ভূমিধস বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বুধবার ভারতের রাজ্যসভায় বহুল প্রতীক্ষিত সীমান্ত বিল অনুমোদন হয়।
লালমনিরহাট জেলা ছিটমহল বিনিময় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম বলেন, ভারতের মন্ত্রিসভা ও রাজ্যসভায় ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বিলটির অনুমোদন হওয়ায় বাংলাদেশ-ভারতের ১৬১টি ছিটমহলবাসীর পক্ষে থেকে দু’দেশের সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
১১১টি ছিটমহলের বাংলাদেশ-ভারত বিনিময় ও সমন্বয় কমিটি সভাপতি মঈনুল হক বলেন, আমরা ছিটমহলবাসী দীর্ঘ ৬৮ বছর বন্দি থাকার পর আজ আমরা আলোর মূখ দেখছি। তবে স্থলসীমা চুক্তিটি ভারতীয় লোকসভায় অনুমতি পেলে আর কোনো বাধা থাকবে না।
মন্তব্য চালু নেই