লাখ টাকার সি-অ্যাম্বুলেন্সটি এখন নিজেই রোগী

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চরাঞ্চলের অসহায় দুস্থ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের বরাদ্দকৃত একমাত্র সি-অ্যাম্বুলেন্সটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অযত্ন অবহেলায় নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চরাঞ্চলের দরিদ্র রোগী ও তাদের স্বজনদের।

গত ২২/১২/২০১৩ সালে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, কেন্দ্রীয় ঔষাধাগারের পক্ষ থেকে চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে একটি ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স/ওয়ান বেড সেলাইন বোট দেয়া হয়। সে সময় বোটটি হাসপাতালের পক্ষে গ্রহণ করেন তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান। চরাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেয়া অ্যাম্বুলেন্সটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয় হরিরামপুর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান কে.এম.ওবায়দুল বারী দিপুকে।

সি- অ্যাম্বুলেন্সটি দেয়ার প্রথম একবছর উপজেলার গোপালপুর ঘাটে পড়ের থাকার পর, সেটিকে সরিয়ে সদর ইউনিয়নের জাকেরের শুরা খালের ভিতর প্রায় দুই বছর কাদা মাটিতে ফেলে রাখা হয়। বিগত কয়েক বছরের অযত্নে কাদামটির ভিতর পড়ে সি- অ্যাম্বুলেন্সটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিপুল অর্থে বিনিময়ে কেনা অ্যাম্বুলেন্সটির ইঞ্জিনসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয় অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ‘এটি গরীবের সম্পদ তাই এই সম্পদ দেখার লোকের খুব অভাব।’ তারা আরো বলেন, কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায় আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে অ্যাম্বুলেন্সটি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে সি-অ্যাম্বুলেন্সটি তত্ত্বাবধানে থাকা দিপু বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ থেকে বোটটি আমার তত্ত্বাবধানে দেয়া হলেও এটি চালনার জন্য কোনো চালক দেয়া হয়নি। তাছাড়া অ্যাম্বুলেন্স বোটটির ইঞ্জিন খুবই দুর্বল। যা দিয়ে নদী পথে রোগী আনা নেয়া করা অসম্ভব।’

চরহরিরামপুর ইউনিয়নের পূর্বশালেপুর গ্রামের বাসিন্দা সাজেদা বেগমের (৪০) সঙ্গে কথাবলে জানা যায়, চরাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য সরকারের দেয়া অ্যাম্বুলেন্সটির কথা তারা জানতেন না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, চরে কোনো মানুষ অসুস্থ হলে তাকে ভ্যান অথবা তক্তা ও বাশের মাচা বানিয়ে ট্রলারে হাসপাতালে নেয়া হয়। ট্রলারে পার হতে দীর্ঘ সময় লাগায় অনেক নৌকাতেই সন্তান জন্ম দিয়েছেন অনেকে। পাশাপাশি চিকিৎসা না পেয়ে অনেক অসুস্থ রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা সিদ্দিকা বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অতি দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করে নতুন ইউপি চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।



মন্তব্য চালু নেই