লঞ্চটি সনাক্ত করা সম্ভব হবে

মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা নদীতে ডুবে যাওয়া লঞ্চটির অবস্থান সনাক্ত করা সম্ভব হবে, তবে এরজন্য আরো এক দুই দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমদ। লঞ্চটি সনাক্ত করতে গত দুইদিন ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম বন্দরের বিশেষ টিমের কাছ থেকে পাওয়া প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তিনি শুক্রবার একথা জানান।

বন্দর চেয়ারম্যান জানান, আগামী দুই দিনের মধ্যে পদ্মার তলদেশে লঞ্চটির অবস্থান সনাক্ত করা সম্ভব হবে।

ফরিদপুরের কাওড়াকান্দি থেকে ছেড়ে আসা পিনাক-৬ লঞ্চটি গত সোমবার মাওয়ায় ডুবে যায়। এতে এখন পর্যন্ত ৩৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ আছে কমপক্ষে ১৩০জন।

টাগবোট ‘কান্ডারি-৩’নিয়ে গতবুধবার রাত থেকে লঞ্চটির অবস্থান সনাক্ত করতে কাজ করছে চট্টগ্রাম বন্দরের বিশেষ টিম। সার্ভে জাহাজ ‘জরিপ-১০’শুক্রবার তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। সমুদ্রের তলদেশ জরিপ কাজে ‘শব্দ তরঙ্গ ভিত্তিক’ তিনটি বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে লঞ্চটি অনুসন্ধান করছে তারা।

আমি আশাবাদি দুই একদিনের মধ্যে এটা খুঁজে পাওয়া যাবে, কান্ডারি-৩ এর সঙ্গে জরিপ-১০ যুক্ত হওয়াতে তল্লাশি অভিযান জোরদার হবে, আমি আত্মবিশ্বাসী এটা খুঁজে পাওয়া যাবে, তবে আরো দুই একদিন সময় লাগতে পারে, জানান বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল নিজাম উদ্দিন।

তিনি জানান, লঞ্চটি যেখানে ডুবে গেছে তার গভীরতা ৭৫ ফুটের মতো, এত নীচ থেকে জাহাজ খুঁজে বের করার চেষ্টা দেশে আর হয়নি। বাংলাদেশর যারা ডুবুরি আছে তারা ইতোপূর্বে সর্বোচ্চ ২০-৩০ ফুট গভীরতায় কাজ করেছে, ডুবুরি দিয়ে এত গভীর থেকে লঞ্চটি খুজে বের করার প্রশ্নই আসে না, তাই সনাক্ত করণের জন্য আমাদের প্রযুক্তির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

তল্লাশি অভিযানে সাব বটম প্রোপাইলার, সাইড স্ক্র্যানার সোনার ও মাল্টি বিম ইকো সাউন্ডার এই তিন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, এগুলো দেশের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, বন্দরের বহিঃনোঙ্গরে ৩০-৪০বছর আগে ডুবে যাওয়া জাহাজ সনাক্ত করতে সাব বটম প্রোপাইলার এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, ইতোমধ্যে এটার কার্যকরিতা প্রমাণ হয়েছে, উল্লেখ করেন বন্দর চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন।

তিনি বলেন, আমাদের লঞ্চটি খুঁজে পেতেই হবে, সারা পৃথীবি জেনে গেছে বাংলাদেশে একটা লঞ্চ ডুবেছে, এটা এখন জাতীয় সক্ষমতার বিষয়, মাওয়া থেকে সার্ভে টিম প্রতিঘণ্টায় অগ্রগতি জানাচ্ছে, চট্টগ্রাম থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে অভিযানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, ‘মাল্টি বিম ইকো সাউন্ডার’ যন্ত্র তার আশপাশের পাঁচশ বর্গমিটার এলাকার বস্তু সনাক্ত করতে সক্ষম। সাব বটম প্রোপাইলার দিয়ে মাঠির নীচে থাকা বস্তু সনাক্ত করা যাবে। আর সাইড স্ক্র্যনার সোনার পানির তলদেশে থাকা বস্তু সনাক্ত করার বিশ্বব্যাপী বহুল ব্যবহৃত প্রযুক্তি।

বন্দর চেয়ারম্যান জানান, এটাই দেশের অভ্যন্তরীণ নদীপথে পরিচালিত সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি ভিত্তিক উদ্ধার অভিযান, নৌবাহিনী, ফায়ার বিগ্রেড এবং বিঅঅইডাব্লিউটিএর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এত বড় অভিযান দেশে আর পরিচালিত হয়েছে বলে জানা আমাদের জানা নেই।

তল্লাশি অভিযানের নেতৃত্বদানকারী চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার মনজুর করিম চৌধুরী জানিয়েছেন, ডুবে যাওয়া স্থানের আট কিলোমিটার এলাকাতে পিনাক-৬ লঞ্চটি থাকতে পারে, এই আট কিলোমিটারের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ অংশে তল্লাশি শেষ হয়েছে, সমগ্র এলাকায় তল্লাশি শেষ হতে আরো দুই দিন সময় লাগবে, আশা করছি এর মধ্যে লঞ্চটির অবস্থান জানা যাবে।

লঞ্চটির অবস্থান সনাক্ত করতে প্রযুক্তি ছাড়াও পারিপাশ্বিক কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, এরমধ্যে বৃহস্পতিবার লৌহজং খালে একটি মৃতদেহ পাওয়া গেছে, লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পর ভেতরে আটকে থাকা কোনো যাত্রীর বলে মনে হচ্ছে, এতে মনে হচ্ছে,ওই খালের মুখ থেকে দুর্ঘটনাস্থল পর্যন্ত এলাকায় লঞ্চটির অবস্থান, জানান হইড্রোগ্রাফির ২০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কমান্ডার মনজুর।



মন্তব্য চালু নেই