‘লজ্জার বিষয় হচ্ছে মানুষের বাচ্চা হয়েও মানুষ না হয়ে অমানুষ হওয়া!’
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি : অনেক বড় বড় পদবীর লোককে সামান্য ভুলের জন্য ‘ফকিরের বাচ্চা’ গালি দিতে শুনেছি। ইংরেজিতে ‘রিচ ম্যান’ আর ‘গ্রেট ম্যান’ বলে দুটো আলাদা শব্দগুচ্ছ আছে। রিচ মানে টাকাওয়ালা আর গ্রেট বলতে জ্ঞানী, মহত্ত্বের অধিকারী। বেশীরভাগ বাঙালি রিচ আর গ্রেটের ধার ধারে না। তাদের কাছে বড়লোক মানেই হচ্ছে- টাকাওয়ালা! কাজেই টাকাওয়ালাদের টাকাওয়ালা সোনার ছেলেরা যখন জঙ্গি হিসেবে পুলিশের হাতে ধরা পড়ছে, কুকর্ম করতে গিয়ে গুলিতে মরছে তখন এদেশের মিডিয়া ফলাও করে বলছে- বড়লোকের বড়লোক ছেলেরা জঙ্গি হয়েছে!
ছেলেমেয়েকে টাকাওয়ালা হবার শিক্ষা দেওয়া শুরু হয় এদেশের পরিবারগুলো থেকেই। বলা হয়- লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে! শিক্ষার উদ্দেশ্য কি শুধু গাড়িঘোড়া চড়া? তাই যদি হতো তাহলে বিখ্যাত কিংবদন্তী লেখক ম্যাক্সিম গোর্কি ছেলেবেলার একটা সময় বৃদ্ধ নানীর হাত ধরে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষে করেছেন, আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন জুতোর মুচি ছিলেন, গণিতবিদ রামানুজন অফিসের কেরানি ছিলেন…এরা কারা? বেশীরভাগ বাঙালির সংজ্ঞায় অবশ্যই বড়লোক না!
এখন সময় এসেছে বদলাবার। সন্তানকে আগে বড়মনের লোক মানে সত্যিকারের ‘বড়লোক’ হওয়ার শিক্ষা দিন। বলুন- জন্মের দিনটা তোমার জন্মদিন নয়, আসল জন্মদিনটা তোমার মৃত্যুদিনে। সেইদিনেই বুঝবে তুমি পৃথিবীর জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য কি ছিলে! সত্যিকারের বড়লোক কেউ টাকায় হয়না, হয় জ্ঞানে, মনে আর প্রজ্ঞায়। সত্যিকার শিক্ষাটা টাকার কাগজে না, মাথার ভেতরের কোটি কোটি নিউরনে জমা থাকে! ফকিরের বাচ্চা হওয়া বা লাটসাহেবের বাচ্চা হওয়া- কোনোটাই গৌরব বা লজ্জার না। লজ্জার হচ্ছে মানুষের বাচ্চা হয়েও মানুষ না হয়ে অমানুষ হওয়া!
লেখক: তরুণ লেখক ও সাহিত্যিক
মন্তব্য চালু নেই