‘ডিজব্যান্ড র্যাব’
জিয়াউর রহমান ছিলেন সফল রাজনীতিক : তারেক
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব রাজনৈতিক জীবনে ছিলেন ব্যর্থ, কিন্তু জিয়াউর রহমান ছিলেন সফল রাজনীতিক।’
বুধবার পূর্ব লন্ডনে ইলফোর্ডের প্রভা ব্যাংকুইটিং অডিটরিয়ামে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের ৩৩তম শাহাদৎ বার্ষিকী’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব ৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে যেখানে ব্যর্থ হয়েছেন, সেখানে মাত্র পাঁচ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সবখানেই সফল হয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ধারায় ফিরিয়ে এনেছেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছেন।’
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিব জনগণের লড়াই সংগ্রাম এবং কঠিন আত্মত্যাগ দেখেননি, অথচ স্বাধীনতার পর পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে তিনিই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে এসে ক্ষমতায় বসেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে মা ভাই কিংবা আত্মীয়-স্বজন হারানো যেসব মানুষ ৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবকে স্বাগত জানাতে এয়ারপোর্টে গিয়েছিলেন তাদের সামনে শেখ মুজিব আসেন পকেটে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে। একটি সদ্য স্বাধীন দেশের নাগরিকদের সঙ্গে এর চেয়ে বড় প্রতারণা আর কী হতে পারে?’
শেখ মুজিবের সমালোচনা করে তারেক বলেন, ‘শেখ মুজিব ১৯৭৫ সালে মাত্র কয়েক মিনিটে গণতন্ত্রকে হত্যা করেন, নিজ দল আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করেন। জনগণকে ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ উপহার দেন। তার শাসনামলে ঘরে বাইরে জনগণকে অনিরাপদ করে তোলা হয়েছিলো।’
বক্তৃতায় তারেক রহমান ১৯৭৩ সালের ৬ জুলাই জাতীয় সংসদে দেয়া তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি বিবৃতি তুলে ধরে বলেন, ‘১৯৭২ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৭৩ সালের জুন পর্যন্ত এই সময়কালে দেশে ২ হাজার ৩৫টি গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটেছে এবং দুষ্কৃতিকারীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪ হাজার ৯শ’ ২৫ জন। তার কন্যা শেখ হাসিনার শাসনামলেও একইভাবে গুম খুন ও অপহরণ অব্যাহত রয়েছে।’
অনুষ্ঠানে র্যাব বিলুপ্তির জন্য ‘ডিজব্যান্ড র্যাব’ নামে দেশে-বিদেশে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন তারেক রহমান।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য বিএনপি সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদ। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডক্টর এম এ মালিক, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুলসহ দলের বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীরা।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মুহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিয়া মনিরুল আলম, ইউরোপভিত্তিক প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন সিটিজেন মুভমেন্টের আহ্বায়ক এম এ মালিকসহ অনেকে।
## র্যাব বিলুপ্তির জন্য তারেকের স্বাক্ষর অভিযান ##
র্যাবকে আওয়ামী লীগের রক্ষীবাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান র্যাব বিলুপ্তি জন্য ‘ডিজব্যান্ড র্যাব’ নামে দেশে-বিদেশে স্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন।
বুধবার পূর্ব লন্ডনে ইলফোর্ডের প্রভা ব্যাংকুইটিং অডিটরিয়ামে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের ৩৩তম শাহাদৎ বার্ষিকী’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রথম স্বাক্ষর দিয়ে ‘ডিজব্যান্ড র্যাব’ নামে দেশে-বিদেশে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান কর্মসূচি শুরু করেন তারেক রহমান। এছাড়া র্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্মম নির্যাতন নিয়ে ‘ক্রসফায়ার’ নামে ১৪ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
র্যাবকে পরিণত করা হয়েছে আওয়ামী লীগের রক্ষীবাহিনীতে উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশে চলমান গুম খুনের সঙ্গে খোদ শেখ হাসিনা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। এখন আর কারো জীবনই নিরাপদ নয়। তাই নিজে বাঁচতে, পরিবারকে বাঁচাতে, দেশ ও জনগণকে বাঁচাতে কঠোর গণআন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং সন্ত্রাস একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। আওয়ামী লীগের অবৈধ শাসনামলে র্যাবের ভয়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে আর সন্ত্রাসীরা নিরাপদে। বিরোধী দলকে দমনের জন্য কারো মেয়ের জামাই, কারো ভাই, আত্মীয়-স্বজন কিংবা দলীয় ক্যাডার দিয়ে র্যাবকে পরিণত করা হয়েছে শেখ হাসিনার রক্ষীবাহিনীতে। এই র্যাবকে বিলুপ্ত করা এখন জনগণের দাবি।’
শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত ৮ দিনব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রায় আধাঘণ্টার বক্তৃতায় তারেক রহমান র্যাব বিলুপ্ত করা, পাকিস্তানি পাসেপোর্ট নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবের ফিরে আসা, গুম খুনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সংশ্লিষ্টতা, স্বাধীনতা পরবর্তী শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলের সঙ্গে শেখ হাসিনার দুঃশাসনের শাসনের চিত্র, ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, ‘আওয়ামী দুঃশাসনে জনগণের অবস্থা এতটাই ভয়ঙ্কর অবস্থায় পৌঁছেছে যে, জনগণ বলতে শুরু করেছে, ওরা মানুষ নয়, আওয়ামী লীগ। এমন কোনো অপকর্ম নেই যা আওয়ামী লীগ করতে পারে না।’
নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনা নিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে দিনে দুপুরে অপহরণ করে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয় নদীতে। ওই এলাকার আওয়ামী লীগেরই একজন অনির্বাচিত এমপি জানিয়েছেন, পাঁচ মিনিটের মধ্যে তিনি শেখ হাসিনাকে অপহরণের ঘটনা জানিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে জানানোর পরও অপহৃতদের উদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়ায় এইসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার দায় শেখ হাসিনা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।’
মন্তব্য চালু নেই