রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু একটা করুন: প্রধানমন্ত্রীকে রওশন

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। এই ঘটনায় চুপ থাকার জন্য মিয়ানমারের নোবেলবিজয়ী নেত্রী অং সান সু চি এবং বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনুসের চুপ থাকার সমালোচনা করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিতে গিয়ে এ কথা বলেন রওশন এরশাদ। রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিশ্বনেতাদের উদ্যোগহীনতারও সমালোচনা করেন তিনি।

গত ৮ অক্টোবরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় নয় জন নিহতের পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে সেনাবাহিনী। নিশ্চিত তথ্য পাওয়া না গেলেও শতাধিক প্রাণহানি ও এক হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অভিযানের মুখে প্রাণে বাঁচে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসছে। তবে বাংলাদেশ তাদেরকে ঢুকতে দিচ্ছে না। যদিও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখ এড়িয়ে ১০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে।

জাতীয় পার্টির নেত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশ এমনিতেই জনসংখ্যার ভারে ভারাক্রান্ত একটি দেশ। এই অবস্থায় নতুন করে শরণার্থী নেয়া বাংলাদেশের পক্ষে কঠিন। কিন্তু বিষয়টি মানবিক।

রওশন এরশাদ বলেন, ‘হাজার হলেও তারা মানুষ, মানবিক দিকটা আমাদেরকে দেখতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘মানবিক বিবেক আছে, সে বিষয়টি বিবেচনা করে হলেও কিছু একটা করা যায় কি না, সে দিকটি নিয়ে ভাবতে প্রধানমন্ত্রীকে আমি অনুরোধ করবো।

রওশন এরশাদ বলেন, ‘তাদের জন্য কিছু করা যায় কি না, সাহায্য পাঠানো যায় কি না, হাজার হলেও তারা মানুষ। মানবিক দিক থেকে কিছু করা যায়।’

প্রধানমন্ত্রীর কিছু হলে আমাদের কে দেখবে এই বক্তব্যে বিদেশ থেকে রেমিটেন্স কমে যাওয়ার কারণ খতিয়ে দেখারও আহ্বান জানান রওশন এরশাদ। কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে ত্রুটি নিয়ে।

সম্প্রতি হাঙ্গেরি সফরে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি তুর্কমেনিস্তানে জরুরি অবতরণে বাধ্য হয় ফুয়েল প্রেসার কমে যাওয়ায়। পরে জানা যায়, তেলের স্ক্র ঢিলা থাকায় এমনটি হয়েছে।

রওশন এরশাদ বলেন, ত্রুটিযুক্ত বিমানটি কেন উড়ানো হলো? এটাই শেষ না। এই বিমানে নাকি একবার অনেক সোনা আনা হয়েছিল। স্ক্রু ঢিলা করে নাকি সোনা ঢুকানো হয়েছিল।

বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে বিমানে যাবেন তা দুই তিন ব্যাচ ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতির জনককে হারিয়েছি। তার কন্যাকে হারাতে পারবো না। তিনি না থাকলে নইলে আমাদের দেখবে কে, জাতির পিতা তো নেই এখন ‘

শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা

জিপিএ পদ্ধতির বদলে পরীক্ষার সনাতন পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান রওশন এরশাদ। বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, শিক্ষা বিষয়ে আপনি যে পদ্ধতিতে পড়াশোনা করেছেন, আমরা যে পদ্ধতিতে ফিরে যেতে চাই। পুরো বই না পড়েলে তো জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব না।…এখন ছেলে মেয়েরা জিপিএ ফাইভ পেয়েও কিছু শিখছে না। তারা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারছে না। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর নামও বলতে পারে না, নেপালের রাজধানীর নাম জানে না-এই ধরনের শিক্ষা নিয়ে আমরা কী করবো।’

রওশন এরশাদ বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে জানা, ছেলেমেয়েদেরকে জানতে হবে। কেবল মোবাইল ফোন টিপলেই তো আর ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়ে যাবে না।’

কর্মসংস্থানের ওপর জোর দেয়ার আহ্বান

তরুণদের চাকরির ব্যবস্থা করতে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান রওশন এরশাদ। বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থান না হলে তো চলবে না। বিশ্বব্যাংক বলেছে, ‘আমাদের সাড়ে পাঁচ কোটি লোকের কোনা কাজ নেই। আমরা যদি তাদের কাজের সুযোগ করে দিতে না পারে, তাহলে তো আবার সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক প্রভাব বিস্তার করবে।’

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘কলকারখানা গড়ে তুলতে হবে। চাকরির সুযোগ তৈরি করতে হবে। মানুষ সুশিক্ষিত হয়ে যেন বাইরে যেতে পারে সে উদ্যোগ নিতে হবে।’

বিনা বিচারে যারা জেলে বন্দী তাদের বের করুন

রওশন এরশাদ বলেন, জেলের ভেতরে বিনা বিচারে এক যুগ, দুই যুগ ধরে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে- এগুলো আমরা যদি না দেখি তাহলে হবে না। তিনি বলেন, ‘একটা লোকের জীবনই চলে গেলো বিনা বিচারে। হয়ত কিছুই সে করেনি। এনজিওদেরকে দিয়ে যদি মনিটর করা যায় তাহলে আমার মনে হয় ভালো।’

এ পর্যায়ে নিজের জীবনের একটি উদাহরণ দেন রওশন এরশাদ। জানান, তিনি যখন জেলে ছিলেন তখন একজন নারীর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। ওই নারী একটি বাড়িতে কাজ করতেন। তিন বা চার মাসের বেতন বকেয়া বেতন চাওয়ার পর তাকে ব্লাউজ চুরির মামলা দিয়ে পুলিশে দেয়া হয়। এই মামলাতেই পাঁচ বছর তিনি কারাগারে ছিলেন। পরে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে ওই নারীর মুক্তির উদ্যোগ নেন তিনি। এই নারীর মতো অন্য কেউ বিনা বিচারে আটক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে আইনমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন বিরোধীদলীয় নেতা।



মন্তব্য চালু নেই