রোববার নয়াপল্টন কার্যালয়ে যাবেন খালেদা!
জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার হাজিরা দিতে রোববার আদালতে যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেখান থেকে তিনি নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। আর সে কারণেই শনিবার সন্ধ্যায় খুলে দেয়া হয়েছে কার্যালয়টি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া রোববার আদালতে যাবেন। তবে সরকারকে তার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ মামলায় পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে বিশেষ আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় তার গাড়িবহরে হামলা চালায় ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এবার যেন তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়টি সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।’
দুই মামলায় বারবার হাজিরা না দেয়ায় ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরপরও তিনি আদালতে হাজির না হয়ে উল্টো পরোয়ানা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচারক পরিবর্তনের দাবিতে উচ্চ আদালতে আপিল করেন।কিন্তু আদালত গত ৪ মার্চ পরোয়ানা বহাল রাখেন।
এরপরও নির্ধারিত ৫ এপ্রিল তারিখে আদালতে খালেদা জিয়ার হাজির হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। তবে গত বৃহস্পতিবার তার আইনজীবী জানান, তিনি আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন চাইবেন।
আর খালেদা জিয়ার এই সিদ্ধান্তের পর আদালতে হাজিরার একদিন আগেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তালা খোলা হলো। শুক্রবার কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশও সরে গেছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করার কোনো ঘোষণা আসেনি।
আসন্ন ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়া এবং অবাধে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সুযোগ নিশ্চিত করতে সারাদেশে দলীয় কার্যালয় খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে টানা ৯১ দিন বন্ধ থাকার পর খোলা হয়েছে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়। চাবি জটিলতায় তালা খুলতে দুই দফা চেষ্টার পর অবশেষে তালা কেটেই কার্যালয়ে ঢোকেন নেতাকর্মীরা। তবে সন্ধ্যায় অনেক জ্যেষ্ঠ নেতার কার্যালয়ে আসার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে কেউ আসতে পারেননি বলে জানানো হয়েছে।
সন্ধ্যায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল কবির শাহিনের নেতৃত্বে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন নেতাকর্মীরা। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান, আমিরুল ইসলামসহ কয়েকজন নেতাকর্মী।
আসাদুল কবির শাহিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখন থেকে নিয়মিত এ কার্যালয়ের কার্যক্রম চালিয়ে যাবো।’
গত ৩ জানুয়ারি মধ্যরাতে রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে ডিবি পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর কার্যালয় থেকে সব কর্মচারীকে বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকে তালাবদ্ধই ছিল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়।
সেই থেকে পালা করে পাহারায় ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদস্যরা। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও আশপাশে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় তালা খোলার সময় আশেপাশে কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি।
এদিকে গত ৩ জানুয়ারি রাতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থানরত বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে গুলশান কার্যালয় থেকে নয়াপল্টনে আসার চেষ্টা করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু তাকে বাধা দেয় পুলিশ। পরে গুলশান কার্যালয়েই অবস্থান নেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ওইদিন থেকেই গুলশানে ৮৬ নম্বর রোডে রাজনৈতিক কার্যালয়েই অবস্থান করছেন তিনি।
ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতেও কার্যালয় ছাড়েননি খালেদা জিয়া। এমনকি ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষাশহীদ এবং ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতেও তিনি শহীদ মিনার এবং স্মৃতিসৌধে যাননি তিনি।অবশ্য দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে সরকার। এ কথা খালেদা জিয়া নিজেও কয়েকবার বলেছেন।যদিও সরকার বারবার তা অস্বীকার করছে।
খালেদা জিয়া রোববার নয়াপল্টন কার্যালয়ে যাবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে গুলশান কার্যালয়ের প্রেসউইং সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
এদিকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থানরত দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল কবির শাহিনকে জিজ্ঞেস করলে বলেন তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানেন না।
মন্তব্য চালু নেই