‘রোজ রাতে ধর্ষণের যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো’
বিয়ে হয়ে যায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে। স্বামী মাতাল এবং অসম্ভব অত্যাচারী। প্রতি রাতে ধর্ষণ, গালিগালাজ ছিল তার নিত্যসঙ্গী। সামান্য কারণেই চলত অকথ্য অত্যাচার। দেওয়ালে মাথা ঠুকে দিত স্বামী। তার বয়স যখন মাত্র কুড়ি, কোলে তখন দু-দুটি সন্তান। কিন্তু লড়াই ছাড়েননি তিনি।–আনন্দবাজার।
জীবনের সে দুঃস্বপ্নময় অধ্যায় এখন অতীত। তিনি এখন একজন সফল সিঙ্গল মাদার। মুম্বাইয়ের অভিজাত জায়গায় দামী ফ্ল্যাট রয়েছে তার। তিনি গীতা ট্যান্ডন। বলিউডের ‘স্টান্ট ওম্যান’দের মধ্যে তিনি সফলতম।
সম্প্রতি পরিচালক জয়না মুখোপাধ্যায়ের একটি তথ্যচিত্রে নিজের জীবনের সেই দুঃস্বপ্নময় অধ্যায়ের নানা কথা অকপটে জানিয়েছেন গীতা। সেখানে তিনি বলেন, স্বামীর অত্যাচারে প্রতি রাতে চিৎকার করতাম। কেউ বাঁচাতে আসেনি কখনও। রোজ রাতে স্বামীর হাতে ধর্ষণের যন্ত্রণা সহ্য করতে হত। তাকে ইন্ধন দিতেন আমার শাশুড়ি। এমনকী গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে পর্যন্ত মারা হয়েছিল আমাকে।
অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একদিন দুই সন্তানকে নিয়ে ঘর ছাড়েন বছর কুড়ির গীতা। মাথার ওপর ছাদ নেই। খাওয়ার সংস্থান নেই। দুই সন্তানকে দু’বেলা খাইয়ে পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে কী না করেছেন তিনি। মেসে রান্না করেছেন। ভাঙড়া দলে নেচেছেন। শেষে তো এক প্রতারকের পাল্লায় পড়ে প্রায় যৌনকর্মী হয়ে যাচ্ছিলেন। প্রতারিত হতে হতে কোনও মতে বাঁচেন তিনি।
একদিন সুযোগ এলো তার কাছে। বলিউডে ফিল্মের কাজ। তবে অভিনয় নয়। এ কাজে মূলত পুরুষরা করে। করতে হবে নায়িকাদের বডি ডাবলিং-এর কাজ। অর্থাৎ, নায়িকাদের অ্যাকশন সিকোয়েন্সে তাদের ডামির কাজ। জীবনের ১৫ বছরের কঠিন লড়াইয়ের পর এখানেও সেই লড়াকু গীতা ধীরে ধীরে নজর কাড়লেন সবার। নায়িকাদের হয়ে ফিল্মের দৃশ্যে ঝড়ের গতিতে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালিয়ে আগুনের বুক চিরে বেরিয়ে আসা, উচু থেকে লাফ দেওয়া, বাইক চালিয়ে হূ হূ করে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে যাওয়া— এক কথায় তিনি ‘খতরোকে খিলাড়ি’।
বাস্তবের তীক্ত অভিজ্ঞতা, দিনের পর দিন স্বামীর অত্যাচার তার মনকে লোহার মতো কঠিন করে তুলেছে। তাই এই ‘ফিল্মি ফাইট’ তার কাছে নস্যি! জীবনের যে কোনও বাধাকে তাই অনায়াসে হারিয়ে এগিয়ে চলেছেন ‘ফাইটার গীতা’।
তথ্যচিত্রে তিনি জানিয়েছেন, একদিন তিনি দেশের প্রথম নারী অ্যাকশন ডিরেক্টর হিসেবে পরিচিত হতে চান। সেই সঙ্গে তার বার্তা, জীবনটা আসলে খুব সুন্দর। শুধু পালিয়ে যেও না। রুখে দাঁড়িয়ে লড়াই করো। দেখবে, জীবনও তোমাকে খালি হাতে ফেরাবে না। মূল্য দেবে জীবন-যুদ্ধের।
মন্তব্য চালু নেই