রেকর্ড জয়ে সিরিজও বাংলাদেশের
জিম্বাবুয়েকে ১২৪ রানে হারিয়ে ১৬তম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। এটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের অষ্টম ওয়ানডে সিরিজ জয়।
এ ছাড়া কেনিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে দুবার করে এবং আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের সঙ্গে একবার করে সিরিজ জয় করে বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামের পর ঢাকায়ও বল ও ব্যাট হাতে সমান দাপট দেখাল বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সর্বোচ্চ রান করার পর ব্যাটিংয়ে অল্প রানে গুটিয়ে দিল মাশরাফির দল।
বুধবার টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ২৯৭ রান সংগ্রহ করে। জিম্বাবুয়েকে পাহাড় সমান রানের চাপে ফেলে মাত্র ১৭৩ রানে গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশের বোলাররা। ১২৪ রানের জয়ে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতে নিল।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৯৫ রান করেন ওপেনার এনামুল হক বিজয়। এ ছাড়া তামিম ও সাকিব ৪০ করে এবং মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ ৩৩ করে রান করেন।
প্রথম দুই ম্যাচেও বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করে। প্রথম ম্যাচে ২৮২ রানের লক্ষ্যে জিম্বাবুয়ে মাত্র ১৯৪ রান করে। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ২৫২ রানের লক্ষ্যে ১৮৩ রানে আটকে যায় সফকারীরা।
এদিন ইনিংসের শুরুতে তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয় ১২১ রানের জুটি গড়েন। সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো শতরানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটসম্যান। এর আগে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৫৮ রানের জুটি গড়েন এই দুই ওপেনার।
বিপদজনক হয়ে উঠা এই জুটি ভাঙে তামিম ইকবালের রানআউটে। কোনো ভুল বোঝাবুঝিতে না, ভাগ্যের কাছেই হেরেছেন তামিম। ২ রান নিয়ে ঠিকমত ক্রিজে পৌঁছে যান তামিম। কিন্তু ক্রিজের ১০ গজ আগে তার হাত থেকে ব্যাট পড়ে যায়। ক্রিজে ভেতরে পা শূন্যে থাকায় ৪০ রানে রানআউট হতে হয় দেশসেরা এই ওপেনারকে। ৬৩ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৪০ রান করেন তামিম।
তামিমের বিদায়ের পর মুমিনুলকে সঙ্গে নিয়ে ৩৯ রানের জুটি গড়েন এনামুল। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি টেস্ট সিরিজের সেরা ব্যাটসম্যান। ২৪ বলে ১৫ রান করে মাসাকাদজার শিকার হন।
মুমিনুলের বিদায়ের পর শতকের অক্ষেপায় ছিলেন এনামুল হক। কিন্তু হতাশ করেন এই ওপেনার। ৯৫ রান করে কামুনগোঝির বলে ডিপ মিড উইকেটে সিঙ্গি মাসাকাদজার বলে আউট হন। ১২০ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ইনিংসটি সাজান এনামুল। এর আগে প্রথম ম্যাচেও ২০ রানের জন্য শতক বঞ্চিত হন বিজয়।
বিজয়ের বিদায়ের পর বাংলাদেশের স্কোরকে বাড়িয়ে নেন সাকিব-মুশফিক। ৪৮ বলে ৭২ রান যোগ করেন তারা। তবে পাওয়ার প্লে’তে আসে মাত্র ২৭ রান!
জিম্বাবুয়েকে ম্যাচে ফেরান পানিয়াঙ্গারা। ৪৪তম ওভারে টাইগার শিবিরে জোড়া আঘাত করেন ডানহাতি এই পেসার। ওভারের প্রথম বলে সাকিবকে সাজঘরে ফেরত পাঠান। লং লেগে সাকিবের ক্যাচটি ধরেন এলটন চিগুম্বুরা। ৩৩ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৪০ রান করেন তিনি। চার বল পর ৩৩ রান করা মুশফিকুর রহিমকেও বোল্ড করেন এই পেসার।
দ্রুত ২ উইকেট হারালেও বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখেন সাব্বির রহমান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ষষ্ঠ উইকেটে ৩০ বলে ৪৬ রান যোগ করেন এই দুই ব্যাটসম্যান।
৪৯তম ওভারের শেষ বলে মাদজিভার বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সাজঘরে ফেরেন সাব্বির রহমান। ১৩ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২২ রান করেন তিনি। সাব্বির রহমান ফিরে গেলেও ইনিংসের শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যান রিয়াদ। ২৬ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৩৩ রান সংগ্রহ করে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার সঙ্গে ২ রানের অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
জিম্বাবুয়ের সেরা বোলার পানিয়াঙ্গারা। ৫৪ রানে ২ উইকেট নেন তিনি। ১টি করে উইকেট নেন মাদজিভা, কামুনগোঝি ও হ্যামিলটন মাসাকাদজা।
২৯৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ৩৯ রানে ৩ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। সফরকারী শিবিরে প্রথম দুটি আঘাত করেন মাশরাফি। সিবান্দা ৯ ও মাসাকাদজাকে ১২ রানে ফেরান তিনি। এরপর রুবেলের বলে সাজঘরে ফিরেন টিমসেন মারুমা।
চতুর্থ উইকেটে ৪১ রান যোগ করেন সোলোমোন মোরে ও ব্রেন্ডন টেলর। ৮০ রানে এই জুটি ভাঙেন আরাফাত সানি। সানির ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে মুশফিকের হাতে স্ট্যাম্পিং হন ১২ রান করা মুর। স্কোরবোর্ডে ২ রান যোগ হতেই সাকিবের বলে সাজঘরে ফেরেন টেলরও(২৮)।
এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। আরাফাত সানি, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঘূর্ণিতে আটকে যায় জিম্বাবুয়ের ইনিংস।
শেষ দিকে অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরার ৫৩ রানের ইনিংসে পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনে জিম্বাবুয়ে। ৪৬ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান তিনি।
বাংলাদেশের সেরা বোলার আরাফাত সানি। ২৭ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি। এ ছাড়া মাশরাফি, রুবেল হোসেন ২টি করে উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসান।
মন্তব্য চালু নেই