রিজার্ভ চুরি : কম্পিউটারে ইনস্টল ছিল ট্র্যাকিং সফটওয়্যার
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরির ঘটনায় হ্যাকাররা অনেক আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটারগুলোতে একটি সফটওয়্যার ইনস্টল করেছিল। এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্যাংকের যাবতীয় কার্যক্রম নিজেদের কম্পিউটারে বসেই দেখতো হ্যাকাররা। আর এই সফটওয়্যারটি ইনস্টল করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংকেরই কোন কর্মকর্তা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একটি সূত্র তথ্যটি জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, টাকা চুরির উদ্দেশ্যে হ্যাকাররা একটি সফটওয়্যার তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার সংযুক্ত পিসিতে তা ইনস্টল করেছিল। এর ফলে ব্যাংকের লেনদেন সংক্রান্ত সকল তথ্য মুহূর্তেই চলে যেত হ্যাকারের কম্পিউটারে।
সফটওয়্যারটি সম্পর্কে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, এটি একটি অটো ডিলিট সফটওয়্যার। এটি সবসময় ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। নির্দিষ্ট সময়ে এটি একটিভেট হয়ে কম্পিউটারের সব তথ্য পাঠিয়ে দেয়। আবার অটোমেটিকভাবে ডিলিট হয়ে যায়। তাই সফটওয়্যারটির নাম সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত কর্মকর্তারা।
এর আগে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাক করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে থাকা ১০ কোটি ডলার ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কায় সরানো হয়।
দীর্ঘ এক মাস পর বিষয়টি জানাজানি হলে মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিল থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। পুরো ঘটনা তদন্তে সরকারের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদ।
এ ঘটনার পর পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানসহ দু’জন ডেপুটি গভর্নর।
টাকা চুরির ঘটনায় কার গাফলতি ছিল জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বলতা ছিল। তা নাহলে আমাদের টাকা তারা নেবে কীভাবে? এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার সংযুক্ত কম্পিউটারগুলোতে যে মনিটরিং সফটওয়্যারটি ইনস্টল করা হয়েছিল সেগুলো ব্যাংকের কর্মকর্তারা ছাড়া অন্য কারো করার এক্সেস নেই।’
তদন্ত কর্মকর্তারা নিশ্চিত যে অর্থ চুরির ঘটনাটির সূত্রপাত হয়েছে ‘ব্যাক অফিস অব দ্য ডিলিং রুম’ শাখাতে।
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস-অর্গানাইজড ক্রাইম) মির্জা আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক বড় একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে অনেকগুলো কম্পিউটার রয়েছে। এগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে আরো ৩-৪ দিনের মতো সময় লাগবে। সব কম্পিউটারের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন কোন কর্মকর্তার উপর সন্দেহ রয়েছে সে বিষয়ে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে।’
অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে যাদের ব্যাংক একাউন্টে টাকা গিয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আসল রহস্য জানা যাবে। আশা করছি দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করা যাবে। তবে টাকা উদ্ধারে সময় লাগবে।’ জাগো নিউজ।
মন্তব্য চালু নেই