রায় শুনে নিশ্চুপ মুজাহিদ
কারারক্ষীর মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় শুনেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ। রায় শোনার পর তিনি নিশ্চুপ থাকেন বলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় কারাভ্যন্তরে দায়িত্বে থাকা সূত্র জানায়, মুজাহিদকে সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। মঙ্গলবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করেন তিনি। রুটি-সবজি দিয়ে সকালের নাস্তা করেন। আপিলের চূড়ান্ত রায় ঘোষণার পর তিনি এক কারারক্ষীর মাধ্যমে তা জানতে পারেন।
সূত্র জানায়, রায়ের খবর শোনার পর মুজাহিদের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তিনি নিশ্চুপ ছিলেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. নেসার আলম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি আমাদের হাতে পৌঁছায়নি। সেটা না পেলে তিনি (মুজাহিদ) কীভাবে জানবেন। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাওয়ার পর আমরা তাকে তা পড়ে শোনাব।’
এদিকে আপিলে মৃতুদণ্ডের রায় বহাল থাকার পর রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপির অপেক্ষায় রয়েছেন রাষ্ট্র ও আসামি- দুই পক্ষই। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাওয়ার পর আসামি রিভিউ আবেদন করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষারও সুযোগ পাবেন। দুটোই নাকচ হয়ে গেলে সরকার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে।
মঙ্গলবার মুজাহিদের মামলায় আপিল বিভাগের রায় ঘোষণার পর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি লিখবেন। লেখা শেষে সেটি তারা প্রকাশ করবেন। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশের পর এক কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হবে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কর্তৃপক্ষ মুজাহিদকে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পড়ে শোনানোর পর থেকে রিভিউ আবেদনের ১৫ দিন গণনা শুরু হবে।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাতটির মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে করা একটি মামলায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী মুজাহিদকে ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে।
২০১৫ সালের ২৭ মে উভয়পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষে আদালত মঙ্গলবার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেছিলেন। ২৭ মে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে আসামিপক্ষের এ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেন।
এর আগে ২৬ মে মুজাহিদের পক্ষে এ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান ও খন্দকার মাহবুব হোসেন যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন।
আপিল বিভাগ মঙ্গলবার চূড়ান্ত রায়েও মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন। সকাল ৯টা ৬ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ রায় দেন।
মন্তব্য চালু নেই