‘রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ভারতের কাছে উন্মুক্ত হচ্ছে’
ভারতীয় হাই কমিশনারের রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমি পরিদর্শন নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকারের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা উন্মুক্ত করার ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ এনেছে বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এটি কীসের আলামত? দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করছেন বাংলাদেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত বর্তমান সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ একটি দেশের কূটনীতিকরা।
শুক্রবার(৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। এসময় তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য প্রভুদের(ভারতের) কাছে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তাকে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিদেশি কূটনীতিকের পরিদর্শন কি অজানা চুক্তির বর্হিপ্রকাশ?
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জানুয়ারি রাজশাহীর সারদায় অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ভবন ও আইসিটি সেন্টার নির্মাণে প্রকল্পের স্থান দেখতে গিয়েছিলেন ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। পরে তিনি রাজশাহী চেম্বার অব কর্মাস,নগর ভবন ও নাটোরের কালী মন্দির পরির্দশন করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাও এর আগে বাংলাদেশের ৬৩ জেলা ভ্রমণ করেছেন, তখন বিএনপি এ ধরনের সন্দেহ প্রকাশ করেনি কেন প্রশ্ন করা হলে রিজভী বলেন, দেখুন, সেটা ব্যক্তিগত সফর। আর অন্য দেশ হত, সেটাও একটা কথা ছিল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো, পুলিশ একাডেমি বা অন্যান্য জায়গাগুলোতে যদি একটি বিশেষ দেশের কূটনীতিকরা বার বার যেতে থাকেন- তাহলে প্রশ্ন দেখা দিতেই পারে।
সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, সামগ্রিকভাবে মনে হচ্ছে- আমাদের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানকে পার্শ্ববর্তী দেশের এক্সটেনশনে পরিণত করার উদ্যোগ চলছে। কেবল তাই নয়, প্রতিবেশী দেশকে খুশি করার জন্য নানা উপহারে ভূষিত করা হচ্ছে রাষ্ট্রাচারের প্রকরণ অমান্য করে।এর বিনিময়ে বাংলাদেশ ‘কী পাচ্ছে’- এই প্রশ্ন করে রিজভী নিজেই উত্তর দেন-এর বিনিময়ে প্রাপ্তি হচ্ছে লবডঙ্কা।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ভারত পাট ও পাটজাত পণ্যের ওপর ‘একতরফা’ অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশের পাট রপ্তানি বন্ধ হতে বসেছে, রপ্তানিকারকরা বিপাকে পড়েছেন। এ ব্যাপারে তাবেদার সরকারের কোনো উচ্চবাচ্চ নেই, সরকারের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। উল্টো তারা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ করে প্রতিবেশী দেশের পণ্য পরিবহনে সুবিধা করে দিচ্ছে। বাংলাদেশকে একেবারে ভারতের এক নম্বর মার্কেটে পরিণত করার জন্য যত আয়োজন- সেটি এ সরকার সম্পন্ন করছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ভারতকে ‘ট্রানজিটের নামে করিডোর’, ‘মালামাল পরিবহনের নামে’ নৌ ও সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিলেও বিনিময়ে বাংলাদেশ ‘কিছুই পাচ্ছি না’ বলে মন্তব্য করেন রিজভী। দেশে ‘রাজনেতিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক আগ্রাসন’ এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি বলে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিবের অভিযোগ।
তিনি বলেন, আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বিচারিক প্রক্রিয়ার নামে জিয়া পরিবারের ওপর অমানবিক আক্রমণ চালানো হচ্ছে। নাজেহাল করতেই খালেদা জিয়াকে প্রতি সাপ্তাহে একবার কিংবা দুই বার আদালতে উপস্থিত থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। এটা সরকার প্রধানের প্রতিহিংসার বর্ধিত বহিঃপ্রকাশ। যারা এই নাজেহালের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকছেন, তাদের উপলব্ধি করা উচিৎ, এ সরকারই শেষ সরকার নয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কেন্দ্রীয় নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, এম এ মালেক, আসাদুল করীম শাহিন, তাইফুল ইসলাম টিপু ও মনির হোসেন।
মন্তব্য চালু নেই