শিক্ষক লাঞ্ছিত

রাবি উপাচার্যকে হুমকি দিলেন মহানগর আওয়ামী লীগ সম্পাদক

এবার কর্মচারী নিয়োগের দাবিতে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার হট্টগোল করলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্যের দফতরে। এসময় কয়েকজন শিক্ষককেও লাঞ্ছিত করা হয়। এছাড়া দাবি না মানলে ক্যাম্পাস অচল করে দেয়ার হুমকি দেন তিনি।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে উপাচার্য দফতরে গিয়ে এ ঘটনা ঘটান। এর আগের দিন রাজশাহী-১ আসনের সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরীও উপাচার্যের দফতরে গিয়ে টেবিল চাপড়ে তাকে শাসিয়ে আসেন।

ক্যাস্পাস সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১টার দিকে কোনো ধরনের পূর্বানুমতি ছাড়াই উপাচার্যের দফতরে ঢুকে পড়েন মহানগর আওয়ামী লীগের সম্পাদক ডাবলু সরকার। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আব্দুল মুমিন, সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকার, মতিহার থানা আ’লীগ সভাপতি আব্দুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দীনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।

এসময় উপাচার্যের সঙ্গে ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সারওয়ার জাহান, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মু. এন্তাজুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক সাদেকুল আরেফিন, জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক ইলিয়াছ হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনন্দ কুমার সাহা, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রেজাউল করিম বাদল, বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক ইলিয়াছ হোসেন জানান, উপাচার্যের কক্ষে ঢুকেই ডাবলু সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগে কেন বিলম্ব হওয়ার কারণ জানতে চান। এসময় প্রক্রিয়া মেনে কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানান উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন। এ কথা শুনেই ডাবলু সরকার সেখানে উচ্চস্বরে কথাবার্তা শুরু করেন। এসময় তার সঙ্গে থাকা অন্য নেতাকর্মীরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। তখন বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক হাবিবুর রহমান থামাতে আসলে ডাবলু সরকার তাকে ধাক্কা দেন।

এসময় উপস্থিত নেতাকর্মীরাও অন্য শিক্ষকদের মারার জন্য তেড়ে আসেন। তখন সেখানে উপস্থিত অন্য শিক্ষক ও কর্মকর্তারা তাদের শান্ত করেন। পরে অবিলম্বে দাবি না মানলে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়ে তারা উপাচার্য দফতর থেকে বেরিয়ে যান।

এ ঘটনার পরপরই জরুরি বৈঠকে বসেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শিক্ষকরা। এ কারণে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য কারোর বক্তব্য নেয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মু. এন্তাজুল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনার সময় সেখানে ছিলাম। তবে তারা কী দাবিতে সেখানে এসেছিলেন তা জানতে পারিনি।

এদিকে উপাচার্যের পক্ষে জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক ইলিয়াছ হোসেন বলেন, দেশের অন্যতম বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দফতরে ঢুকে কেউ এ ধরনের আচরণ করতে পারে তা মেনে নেয়া যায় না। এটা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য লজ্জাজনক ঘটনা। এসময় তিনি এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান। তবে বক্তব্য নেয়ার জন্য রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, আমরা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে উপাচার্যেও কাছে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে বের হয়ে আসার সময় সামান্য উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। এখানে কোনো ধরনের লাঞ্ছিত করা বা হাতাহাতির ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে ডাবলু সরকার ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরপরই রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানার নেতৃত্বে মিছিল করেছে নেতাকর্মীরা। এসময় তারা উপাচার্যেও বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। এছাড়া বিকেল ৩টায় তারা রাবির ছাত্রদের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের গেটে ডেকে এনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এসময় সভাপতি মিজানুর রহমান রানা গেটে গেটে গিয়ে বক্তব্য দেন।

অপরদিকে পরপর দুইদিন একজন সংসদ সদস্য ও আরেকজন আওয়ামী লীগের নেতার এমন ‘ন্যাক্কারজনক’ আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছে রাবি শিক্ষক সমিতি।

এ ঘটনার আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো ও পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণের জন্য তারা বৃহস্পতিবার বিকেলে জরুরি বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকের পর তারা সাংবাদিকদের বিস্তারিত তথ্য জানাবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির যুগ্মসম্পাদক সাতিল সিরাজ।



মন্তব্য চালু নেই