রাবিতে ‘সান্ধ্য আইনে’ হয়রানির শিকার ছাত্রীরা

ইয়াজিম ইসলাম পলাশ, রাবি প্রতিনিধি: মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পার্শ্ববর্তী কাজলা বাজার থেকে রিক্সাযোগে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন রহমতুন্নেছা হলের এক আবাসিক ছাত্রী। পথে খালেদা জিয়া হলের সামনে মো. রোকনুজ্জামান নামের এক সহকারী প্রক্টর ওই ছাত্রীকে থামিয়ে তার পরিচয়পত্রটি চেয়ে নিয়ে ‘এত রাতে বাইরে থাকার’ কারণ জানতে চান। হলের ডাইনিং বন্ধ থাকায় পার্শ্ববর্র্তী বাজারে রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলেন জানালে ছাত্রীটিকে শুনতে হয় তীর্যক কথার ফুলঝুরি। লজ্জায় মাথা নামিয়ে মাস্টার্সের ওই ছাত্রীটি পরিচয়পত্রটি ফেরৎ চাইলে বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে দেখা করতে বলেন ওই সহকারী প্রক্টর।
শুধু তিনিই নন মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ‘রাত করে হলে ফেরার’ অভিযোগে মেয়েদের পাঁচ হলের অন্তত ২০ জন ছাত্রীর পরিচয়পত্র কেড়ে নেয়া হয়। পরে রাতেই তাদের অভিভাবকদের কাছে ফোন দিয়ে মেয়েদের ‘খোঁজ রাখার’ পরামর্শ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। ভুক্তভোগী ছাত্রীদের অভিযোগ, সান্ধ্য আইনের নাম করে (সন্ধ্যার মধ্যেই মেয়েদের হলে ফেরার বিধান) পরিচয়পত্র নেয়ার পাশাপাশি ওই শিক্ষকের কাছ থেকে নানা কথাও শুনতে হয় তাদের। পরে বুধবার সকাল ১১টার দিকে ওই ছাত্রীরা প্রক্টর অফিসে গেলে তাদের পরিচয়পত্র দিয়ে দেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলের এক ছাত্রী বলেন, পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় টিউশুনি করিয়ে আমাকে পড়াশুনার খরচ যোগাতে হয়। এ ব্যাপারে হলে দরখাস্তও দিয়েছি। বিষয়টি সহকারী প্রক্টর স্যারকে জানানোর পরেও দু-চারটি কথা শুনিয়ে আমার আইডি কার্ড নিয়ে নেন তিনি।
জানা যায়, ১৯৭৩-এর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী মেয়েদের হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোন বিধিনিষেধ নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি আরোপিত এই সান্ধ্য আইন রাবিসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু আছে। সান্ধ্য আইনের কারণে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই মেয়েদের হলের প্রধান ফটকটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে হয়রানির শিকার হতে হয় রাবির পাঁচ হলের ছাত্রীদের। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হন টিউশনি ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত ছাত্রীরা। এ ধরনের কালো আইন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে মৌলবাদের প্রসার ঘটাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
রাবি ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তমাশ্রী দাস বলেন, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে সান্ধ্য আইনের নাম করে নারী শিক্ষার্থীদের এভাবে হেনস্তা করা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রশাসনকেই দিতে হবে। কিন্তু নিরাপত্তা দিতে না পেরে নারী শিক্ষার্থীদেরকে হেনস্তা করা হচ্ছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।
তবে ছাত্রীদের হেনস্তার অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মজিবুল হক আজাদ বলেন, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা যাতে বিঘিœত না হয় এজন্য কয়েকজন ছাত্রীর পরিচয়পত্র নেয়া হয়েছিল। বুধবার সকালে কাউন্সেলিং করে তাদেরকে সেটা ফিরিয়েও দিয়েছি। মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পরিবারের ‘মান-মর্যাদা’ রক্ষা করছে কিনা এ ব্যাপারে তাদের অভিভাবকদেরকেও খোঁজ নিতে বলেছি।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি যদি হুমকির মুখে পড়ে তাহলে সান্ধ্য আইন যদি নাও থাকে আমি সেই আইন বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করবো।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখবো। তবে দেশের এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। মেয়েদের হলগুলো কিছুটা অরক্ষিত থাকায় সেদিকেও নিরাপত্তার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই