রানের জন্য তাহলে অমন বল লাগে!

দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে চায়নাম্যান লাকশান সান্দাকানের করা লেগ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করে তামিম ইকবালের আউট হওয়ার ধরন অদ্ভুত ঠেকেছিল সবার কাছেই। বাংলাদেশের হেড কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে তো আরেক কাঠি বেড়েই বলেছিলেন ‘ব্রেইন ফেইড’ বা ‘বুদ্ধিভ্রম’।

যদিও এই বাঁহাতি ওপেনার পরদিন দাবি করেছিলেন যে বল তাঁর ব্যাটের কানা নিয়ে যাওয়াতেই তিনি ড্রেসিংরুমের পথে হাঁটা ধরেছিলেন। এতেই রানআউট এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে তামিমের ব্যাখ্যা যতই যুক্তিগ্রাহ্য হোক না কেন, লেগ স্টাম্পের বাইরের বল চালাতে যাওয়ার অপরাধ তাতে একটুও কিন্তু হালকা হচ্ছে না।

এটি যেমন হালকা হচ্ছে না, তেমনি টেস্ট ক্রিকেট অনুপযোগী শট খেলার অভিযোগও দিন দিন ভারী হয়েই চলেছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অদ্ভুত সব ঘটনাও। এই গল টেস্টেই পেসার শুভাশীষ রায়ের একটি ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পথে। তিনি উইকেট পাওয়ার বাঁধভাঙা উদ্যাপন করছেন আর পেছনে আম্পায়ার দুই হাত তুলে ছক্কার সংকেত দেখাচ্ছেন!

ফিল্ডার মুস্তাফিজুর রহমানের ক্যাচ ধরে বাউন্ডারি লাইনের বাইরে চলে যাওয়ার ব্যাপারটি বুঝতেই পারেননি ওই পেসার! গতকাল যেমন আসেলা গুণারত্নের বলে বোল্ড হওয়ার ব্যাপারটি প্রথমে বুঝতে পারেননি সৌম্য সরকারও। কট বিহাইন্ড হয়েছেন মনে করে আম্পায়ারের কাছে রিভিউ চেয়ে বসেন!

নন স্ট্রাইকার তামিম না করলেও গতকাল রিভিউ চেয়ে নিয়েছেন মমিনুল হক নিজেই। নিয়েছেন ভালো কথা, রিভিউ নিয়ে উইকেটেই অপেক্ষা করার কথা তাঁর। কিন্তু তা না করে তিনি ড্রেসিংরুমের পথে হাঁটা ধরেন, হেঁটে প্রায় বাউন্ডারি লাইনের কাছাকাছি চলেও আসেন। গল টেস্টে এরকম বিস্ময় জাগানো ঘটনার সঙ্গে সমানতালে চলেছে লেগ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করে আউট হওয়ার প্রবণতাও। প্রথম ইনিংসে তামিমকে অনুসরণ করেছিলেন সাকিব আল হাসানও। কাল দ্বিতীয় ইনিংসে মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতির পর দ্বিতীয় বলে সেই একই শটে আত্মাহুতি দিলেন কিনা মুশফিকুর রহিমও।

মনে হতেই পারে যে এসব বোধহয় সংক্রামক ব্যাধিই। কারণ এরকম স্রেফ একটি ঘটনায় তো আর সব সীমাবদ্ধ থাকছে না। কেউ একজন ওভাবে আউট হয়েছেন তো দেখা যাচ্ছে আরেকজনও সেভাবেই হচ্ছেন। একজনের সমস্যা আরেক জনে ছড়িয়ে পড়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে টেস্ট অধিনায়ক নিজে যা বললেন, সেটিও অবশ্য কম বিস্ময়কর নয়। তাঁকে নির্দ্বিধায় দলের সেরা ব্যাটসম্যান বলে মানা হচ্ছে অথচ মুশফিক কিনা বলছেন যে তাঁর রান করতে লেগ স্টাম্পের বাইরের বলও লাগে!

গল টেস্টের অনেক ঘটনার মতো এই ব্যাখ্যাও তো কম অদ্ভুত নয়, ‘ভালো বল বা স্টাম্পের বলে শট খেলতে গেলে আউট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনাকে তাই বাইরের বল খেলেও রান করতে হবে। এটা আমি বিশ্বাস করি। প্রথম ইনিংসে সাকিবের আউটটার কথাই বলি। ওটাকে আমি দুর্ভাগ্যজনকই বলব। আমার আজকের আউটটি নিয়েও তা-ই বলব। আমার ক্ষেত্রে লেগ স্লিপ ছিল না, ছিল না শর্ট ফাইন লেগও। আমি যদি ওই বলে রান না করি তো কোন বলটায় করব?’ নিজের ব্যর্থতা বলতে অবশ্য মুশফিক শুধু এটুকুই মেনেছেন যে, ‘এটা বলতে পারেন যে শটটা আমার যেভাবে খেলার দরকার ছিল, সেভাবে খেলতে পারিনি। ব্যাটের যেখানে শটটা লাগার দরকার ছিল, সেখানে লাগেনি। চেষ্টা করব সামনে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে। ’

এই টেস্টের শেষ দিনের ব্যাটিং বিভ্রাট নিয়েও খুব বেশি চিন্তিত মনে হয়নি তাঁকে, ‘গত দুটি সিরিজের কথা বলতে পারি। আজকের মতো খারাপ কিন্তু কোনো ইনিংসে হয়নি। প্রথম ইনিংসে আমরা খারাপ খেলেও ৩১২ রান করেছি। এই একটা ইনিংস বাদ দিলে আমাদের দুশ্চিন্তায় পড়ার কিছু নেই। ’ ড্র করার সুযোগ সামনে এলেও তা কাজে লাগাতে না পারার ব্যাখ্যায় বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, ‘গত দুটি সিরিজেও আমাদের সামনে সুযোগ এসেছিল।

ড্র করা বা জেতার সুযোগ এসেছিল। আজকেও ১০ উইকেট হাতে নিয়ে ৯৮ ওভার ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জ ছিল। এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে। মানসিকভাবে আমরা হয়তো নিজেদের উপস্থাপন করতে পারছি না। দক্ষতা থাকা এক কথা আর উপস্থাপন করা আরেক কথা। ’ গল টেস্টে সেই উপস্থাপনা কখনো অদ্ভুত ছিল তো কখনো ব্যাখ্যাতীত!



মন্তব্য চালু নেই