“রাতে সে আমার নোংরা ছবি তুলতো, না করলেই মারধোর…”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।

“আমি তখন ক্লাস টেনে পড়ি। প্রথম সাময়িক পরীক্ষা দেবার পর আমরা স্কুল থেকে এক জায়গায় পিকনিকে যাই। আমার চাচাতো ভাই ( আপন না) আমার সাথেই পড়ত। আমার সাথে সেও গিয়েছিল। ছোটবেলা থেকে আমি খুব ভাল স্টুডেন্ট ছিলাম। ক্লাস ফাইভ, এইটের বৃত্তি পরীক্ষায় আমি থানায় ফার্স্ট হই। এইটের রেজাল্টের পর আমার শখে আমাকে আমার মা একটা মোবাইল গিফট করে। ঘটনাটা ৮ বছর আগের, তখন ক্যামেরাসহ ফোন আমাদের গ্রামে কারো ছিলনা।

পিকনিকে আমার মোবাইলে সবার ছবি তোলা হয়। পিকনিক থেকে আসার পর আমার চাচাতো ভাই আমার মেমরি কার্ড নিয়ে যায় তার ছবি ওয়াশ করবে বলে। আমাদের গ্রামের এক ছেলে আমাকে ভালবাসত। সে খুব খারাপ বলে আমরা সবাই জানতাম। আমরা ধনী হিসেবে পরিচিত ছিলাম, তারা খুবই গরিব ছিল এবং নিচু জাত। আমার চাচাতো ভাই আমার মেমরি কার্ড থেকে আমার সব ছবি তাকে দেয়। যখন জানতে পারি তখন তার কাছ থেকে ছবি উদ্ধার করার জন্য আমি তার সাথে কথা বলি। এভাবে কথা বলতে বলতে অভ্যাস হয়ে যায়। সে বিভিন্নভাবে আমাকে তার উপর দুর্বল করে ফেলে। আমরা সম্পর্কে জড়িয়ে যাই।

সে আমাকে বলত আমার পরিবারকে রাজি সে করাবেই, যেভাবেই হোক। বয়সের দোষে সব বিশ্বাস করেছিলাম। যেহেতু আমরা একই গ্রামের সেহেতু একদিন রাতে সে আমার সাথে দেখা করতে আসে। এভাবে আমার বাড়ির পুকুর পাড়ে কয়েকদিন দেখা হয়। আমি একা আলাদা রুমে থাকতাম তাই সমস্যা হতো না। তারপর সে বলে এভাবে বাইরের মানুষ দেখে ফেলতে পারে, তোমার রুমে চল। তারপর রাতে সে আমার রুমে আসত। এগুলো সম্পর্ক শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই হয়। আমরা রুমে বসে গল্প করতাম। তার থেকে একটু দূরে বসতাম আমি। একদিন সে আমার হাত ধরল, কিছুদিন পর কপালে কিস করে, তারপর একদিন জড়িয়ে ধরে। আমি বাধা দিতাম, সে শুনত না, রাগ করত। এভাবে আস্তে আস্তে একদিন আমাকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আমার শরীরে হাত দেয়। এখন ভাবলে অবাক লাগে, আমি কেন তখন সব বুঝিনি। কিন্তু এই পর্যন্ত অনেকদিন চলে। আমি কোন ভাবেই শারীরিক সম্পর্ক করতে দিতাম না, সে চাইত।

একদিন সে জোর করে, আমার সতীত্ব নষ্ট করে ফেলে। খুব কেঁদেছিলাম, চিৎকার করতে পারিনি সম্মানের কথা ভেবে। কাউকে কিছু বলতেও পারিনি, মানতেও পারিনি। বাচ্চা হবার ভয় লাগছিল। পরদিন আমি মোবাইল অফ করে রেখেছিলাম, পরে সে বাচ্চা না হবার ওষুধ এনে দিবে বলে মেসেজ দেয়। পরদিন ওষুধ দিতে আবার আমার রুমেই আসে। আমার কাছে ক্ষমা চায়, মানসিক অবস্থা ভাল ছিল না। ভুল করে আমি তাকে ক্ষমা করলাম বিয়ের কথা ভেবে। অনেকদিন সে শুধু আমার রুমে আসে কিন্তু কিছু করেনা। আবার বিশ্বাস তৈরি করে। তারপর আবারও একদিন আমাকে উল্টা পাল্টা বুঝায়, শারীরিক সম্পর্ক করে। তারপর থেকে খারাপ ব্যবহার শুরু হয়। আমার থেকে টাকা নিত, দিতে না পারলে মারত। আমি সহ্য করতে করতে একদিন না পেরে সিদ্ধান্ত নিলাম, আর না। জীবনে যা হবার হয়েছে, এমন মানুষের সাথে বিয়ে হলে বাচতে পারব না। আমি তাই তার সাথে ব্রেকআপ করলাম।

আমার SSC পরীক্ষা চলছিল তখন। তারপর দিন আমার SSC রসায়ন পরীক্ষা ছিল। আসল রূপ বেরিয়ে আসল সেদিন আমি ব্রেকআপ করার পর। সেদিন জানতে পারলাম আমাদের শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও আছে তার কাছে। সব কথার রেকর্ডিং আছে। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল আমার। সারা রাত আমাকে পড়তে দিলনা। বলল তার সাথে সম্পর্ক না রাখলে আমার ভিডিও ইন্টারনেটে দিবে, বাড়িতে এনে আব্বু আম্মুকে দেখাবে। বাধ্য হয়ে জোর করে সম্পর্ক রাখলাম, মন থেকে পারতাম না। রাতে আসত, জোর করে আমার কাপড় খুলত, না খুললেই মারধোর, ভিডিও মানুষকে দেখানোর হুমকি। নোংরা ছবি তুলতো, আমাকে নগ্ন করে ছবি তুলত। চিন্তায় রাতে ঘুম আসত না, কড়া কড়া ওষুধ খেতাম ঘুমের। কাউকে কিছু বলতে পারতাম না, অত্যাচার, মানসিক চাপ, জোর করে শারীরিক সম্পর্ক এসবে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। সব চেপে থাকতে না পেরে মরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

এর মাঝে আব্বু অ্যাকসিডেন্ট করল, হাসপাতালে ভর্তি, পরিবারের কথা ভেবে পারলাম না। অবশেষে আব্বু সুস্থ হবার পর প্রেমিককে জানালাম আমি আত্মহত্যা করব, প্রস্তুতি নিলাম। পরদিন দেখি আমার ছবি, ভিডিও আমার চাচার কাছে সে দিয়েছে। থমকে গেলাম, পরিবারের সবাই সব জানল, মুখে চুনকালি পড়ল আমাদের পরিবারের। যেহেতু থানায় ফার্স্ট ছিলাম তাই সবাই আমাকে চেনে, জেনেও গেল। রাস্তায় গেলে মানুষ নোংরা কথা বলত, কলেজের কেউ মিশত না। পরিবারের সাপোর্ট ছিলনা তেমন, আমার সাথে কথা বলত না, টাকা দিত শুধু। চরিত্রহীনের পরিচয়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছিলাম। আবার রাস্তায় সে কথা বলতে আসে, আমি রাগ সহ্য করতে না পেরে থানায় গিয়ে ওসিকে সব বলি, পরদিন ইভ টিজিং অপরাধে তার জেল হয়।

আজ আমি সরকারী একটা মেডিকেলে পড়ি, কেউ ভাবতে পারেনি জীবনে এত কাহিনী নিয়ে আমি ডাক্তার হতে পারব। পরিবারের জন্য সংগ্রাম করেছি কারণ তাদেরর অনেক ছোট হতে হয়েছে সমাজে। আজ পরিবার আমাকে নিয়ে গর্ব করে কিন্তু আমার জীবনে শান্তি নেই। কারণ আমি একজনকে পাগলের মত ভালবাসি,সে আমার সাথেই পড়ে। ছোট বেলায় সেটা ছিল আমার আবেগ, এখন এটা আমার ভালবাসা। আমাদের সম্পর্ক ৬ মাস হলো। আমার জীবনের কোন কাহিনী সে জানেনা, যদি আমাকে ভুলে যায়, সেই ভয়ে বলতে পারিনি আজও। কারণ তাকে আমি নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসি। থাকতে পারব না ওকে ছাড়া। কী করব আমি? ও খুব রাগী, সব শুনলে কী করবে জানিনা, ছেড়ে যাবার সম্ভবনায় বেশি। আমি কি এসব না জানিয়ে তাকে বিয়ে করব?

মানসিক চাপ অনেক নিয়েছি, ও আমাকে বিয়ে না করলে আমি মনে হয় পাগল যাব। আমাদের দুই পরিবারই আমাদের প্রেমের কথা জানে, তারা বাধা দেয়না কারণ আমরা দুজনেই ভবিষ্যত ডাক্তার, দুজনই দুজনার যোগ্য। আমার আম্মু ওকে খুবই পছন্দ করে। বলে রাখি, ওর মায়ের প্রথম স্বামী মারা যাবার পর ওর আব্বুর সাথে বিয়ে হয়। তবে ওর আব্বুর সেটা প্রথম বিয়ে। মাঝে মাঝে ভাবি, ওর আব্বু যদি একজন বিবাহিত মেয়েকে বিয়ে করতে পারে, সে কি আমার মত মেয়েকে বিয়ে করবে না? এখন সব জানার পর সে আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমি পরিবারের কাছে অপমানিত হব, থাকতেও পারব না ওকে ছাড়া। ও আমার সবকিছু। একাকী জীবনে হঠাৎ পূর্ণতা তাই ছাড়তে পারব না ওকে। কিন্তু কী করা উচিত আমার? কী অপেক্ষা করছে আমার জীবনে? সমাধান দিন, যাতে বাঁচতে পারি ভাল মত।”

পরামর্শ:

আপনাকে অনেক অভিনন্দন যে এতকিছুর পরও জীবনে আপনি অনেক দূর গিয়েছেন, নিজের লেখাপড়া নষ্ট হতে দেননি। কিন্তু সেই সাথে এটাও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে আপনি এমন একটা জটিলতায় জড়িয়ে গিয়েছেন যে এর ফলাফল যে কোন কিছুই হতে পারে। আমি একেবারেই নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু কথা বলছি। হয়তো আপনার ভালো লাগবে না আপু। তবে তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে আমার এটাই মনে হচ্ছে।

আপনার চিঠিতে আপনি যদিও সব দোষ ওই ছেলেটিকেই দিয়েছেন, কিন্তু সত্যি বলতে কি দোষ সব ওই ছেলেটির না। দোষ কিছু আপনারও আছে। অল্প বয়সের মোহে প্রেম করে ফেলেছেন বুঝলাম, কিন্তু গভীর রাতে ছেলেটির সাথে বাইরে দেখা করতে যাওয়া আর একটা অপরিচিত ছেলেকে রাতে নিজের শোবার ঘরে নিয়ে আসা, দুটোই কিন্তু অনেক বড় ধরণের অন্যায়। নিজের মা বাবার বিশ্বাস এভাবে ভঙ্গ করাটাতো রীতিমত প্রতারণা। অন্যদিকে ছেলেটি শারীরিক সম্পর্কের জন্য জোর করতে শুরু করার পরও আপনি তাঁকে কামরায় আসতে দিয়েছেন, তখনই যদি এড়িয়ে যেতে শুরু করতেন এই দুর্ঘটনা ঘটতো না। অন্যদিকে প্রথমবার শারীরিক সম্পর্কের সময় সে ভিডিও করেছে, সেটা আপনি দেখেন নি? আপনার নিজের কামরায় কীভাবে সে লুকিয়ে ভিডিও করলো?

এসব কথা কেন বললাম আপু জানেন? কারণ আপনি যদি প্রেমিককে নিজের অতীতের কথা বলেন, তাহলে প্রথমেই তাঁর মাথায় এসব প্রশ্নই আসবে। সাথে এটাও হয়তো মনে হতে পারে যে, আপনি নিজের ইচ্ছায় আগের প্রেমিকের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন, ভিডিও করেছেন। তারপর প্রেমিককে আর ভালো লাগে না বলে ছেড়ে দিতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন। ছেলেটি যে আপনার বোকামির সুযোগে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করেছে, এটা হয়তো প্রেমিক বিশ্বাসই করতে চাইবে না। ভাববে আপনারই দোষ।

অন্যদিকে আপু, আপনি যদি প্রেমিককে সবকিছু না জানিয়ে সত্য গোপন করে বিয়ে করেন, তাহলে চরম প্রতারণা করা হয়। সেটাও না হয় করলেন, সম্পর্ক রাখার জন্য তাঁকে না হয় কিছুই বললেন না। কিন্তু যে ছেলেটিকে আপনি জেলে দিয়েছেন, তাঁর কাছে আপনার ভিডিও আছে। সেই ছেলেটি যদি প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে আপনার প্রেমিককে সব দেখিয়ে দেয় আর আপনি সত্য বলার আগেই মিথ্যা কাহিনী বানিয়ে বলে? তখন তো আপু আপনার সংসারই ভেঙে যাবে তাই না? সমাজে অপদস্থ হবার পরিমাণ আরও বাড়বে, আপনার কোন কথাই কেউ আর বিশ্বাস করবে না। স্বামী তো নাই-ই। আর ওই আগের প্রেমিকের কিন্তু প্রতিশোধ নেবার সম্ভাবনা প্রবল। আর বিয়ের পর কিন্তু ব্রেক আপ না, ডিভোর্স হয়!

দেখুন আপু, কিছু না কিছু ভুল সবার জীবনেই থাকে। সেই ভুলকে ক্ষমা করে হাত ধরার নামই কিন্তু ভালোবাসা। আপনার বর্তমান প্রেমিক যদি সব সত্য জেনে, সেটাকে স্বীকার করে আপনাকে বিয়ে করতে না পারেন… তাহলে মিথ্যা ছলনায় তাঁকে বিয়ে না করাটাই উচিত হবে। কারণ তাহলে কেউই সুখী হতে পারবেন না। আর এটাও জানবেন যে ভালোবাসায় ভুল-ত্রুটি মাফ করতে না পারলে সে সম্পর্ক কখনো সুখের হয় না। যিনি সত্যি আপনাকে ভালবাসবেন, তিনি এর চাইতেও অনেক বড় বড় দুর্ঘটনা ভুলে গিয়ে আপনাকে আপন করে নেবেন। আপনার কষ্ট কম করার চেষ্টা করবেন। তাই আপু আমার মনে হয় সত্যের সাথে থাকাই ভালো।এতে অন্তত আর যাই হোক, প্রতারক উপাধি জুটবে না কপালে।

আরেকটি কথা বোন, আমি বুঝতে পারছি যে বর্তমান প্রেমিককে আপনি খুব ভালোবাসেন, সে আপনাকে ছেড়ে গেলে আপনি থাকতে পারবেন না। কিন্তু সাথে এটাও ভেবে দেখবেন যে এই ছেলেটি কি আপনাকে সুখী রাখবেন? রাখতে পারবেন? কারণ আমার মনে হচ্ছে জীবন সঙ্গী হিসাবে আপনার খুবই সহানুভূতিশীল ও শান্ত একজন মানুষ প্রয়োজন, যিনি আপনার কষ্ট বুঝবেন। আপনার কষ্টের অতীত জেনে যিনি আপনাকে উল্টো ছেড়ে যাবেন, সেই মানুষ আপনাকে বিবাহিত জীবনে কতটা সুখী রাখবেন এটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। সুন্দর ভাবে বাঁচার জন্য পরামর্শ চেয়েছেন। তাই বলছি- এই মুহূর্তে বিয়ে বা প্রেম নিয়ে ভাবার বদলে আপনি নিজেকে আরও একটু সময় দিন। ক্যারিয়াটা আগে গোছান, সেটল হয়। দেখবেন সময়ের সাথে আপনার মানসিক অবস্থা আরও একটু স্থির হয়েছে এবং তখন সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হচ্ছে।

তাড়াহুড়া করবেন না আপু, সময়কে যেতে দিন, নিজের মনকে আরও একটু শান্ত হতে দিন। বন্ধু হিসাবে এটাই আমার পরামর্শ।প্রিয়.কম



মন্তব্য চালু নেই