রাজশাহীকে হারিয়ে বিপিএল চ্যাম্পিয়ন ঢাকা
প্রথম পর্বে রাজশাহী কিংসের সঙ্গে দু’বারের দেখায় দু’বারই হেরেছিল ঢাকা ডায়নামাইটস। ফাইনালে তাই মানসিকভাবে অনেকটা এগিয়ে থেকেই ঢাকার মুখোমুখি হয়েছিল রাজশাহী কিংস।
কিন্তু সেই এগিয়ে থাকাটা এবার মাঠের লড়াইয়ে প্রমাণ করতে পারল না ড্যারেন স্যামির দল। রাজশাহীকে ৫৬ রানে উড়িয়ে দিয়ে বিপিএলের চতুর্থ আসরের মুকুট পরল সাকিব আল হাসানের ঢাকা।
আগের ম্যাচগুলোতে মিরপুরের গ্যালারির বেশিরভাগ আসনই ফাঁকা পড়ে থেকেছে। তবে ফাইনালে গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। নীল হয়ে ওঠা গ্যালারি বলে দিচ্ছিল সেখানে ঢাকার সমর্থকই বেশি। কিন্তু ঢাকার ব্যাটসম্যানরা সেই সমর্থকদের বিনোদন দিতে পারেনি।
প্রথম ১৮ ওভারে ঢাকার ইনিংসে ছক্কা মাত্র একটি! পুরো ইনিংস মিলিয়ে সংখ্যাটা দুইয়ের বেশি হলো না। একটা সময় ১৩০ রানেই ৭ উইকেট হারানো ঢাকার দেড়’শ করা নিয়েই শঙ্কা। তবে সাঙ্গাকারার ৩৬ আর সানজামুলের ৫ বলে ১২ রানের সুবাদে ১৫৯ রানের চালেঞ্জিং স্কোরই গড়ে ঢাকা।
সেই চালেঞ্জিং লক্ষ্যে খেলতে নেমেই মুখ থুবড়ে পড়ল রাজশাহীর ব্যাটিং। একটা সময় ১ উইকেটে ৬২ রান তোলা রাজশাহীর ইনিংস থামল ১০৩ রানেই। জয়ের কাছাকাছিও যেতে পারল না তারা।
১৬০ রান তাড়ায় রাজশাহীর শুরুটাই ভালো হয়নি। তৃতীয় ওভারেই ফিরে যান ওপেনার নুরুল হাসান সোহান। আবু জায়েদ রাহির স্লোয়ার বলে মিড অফে আন্দ্রে রাসেলকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ডানহাতি।
দ্বিতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন মুমিনুল হক ও সাব্বির রহমান। সিঙ্গেলের পাশাপাশি চার মেরে দলকে ভালোই এগিয়ে নিচ্ছিলেন দু’জন। তবে দুই ওভারের মধ্যে এই দু’জনের বিদায়ে চাপে পড়ে রাজশাহী। সাব্বির রানআউটে কাটা পড়লে ভাঙে ৪৭ রানের জুটি। ২২ বলে ২টি চারে সাব্বির করেন ২৬। পরের ওভারে সাকিবের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান মুমিনুল (২৭)। রাজশাহীর স্কোর তখন ৩ উইকেটে ৬৬।
এক ওভার বাদে ফিরে যান জেমস ফ্রাঙ্কলিনও। সানজামুল ইসলামের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে কাউ কর্নারে ডোয়াইন ব্রাভোর হাতে ধরা পড়েন কিউই ব্যাটসম্যান। তবে রাজশাহী সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খায় এর পরের ওভারে। কারণ, আউট হয়ে ফিরে যান যে ড্যারেন সামি। আগের বলেই সাকিবের মাথার ওপর দিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। পরের বলটি কাট করতে গিয়ে রাজশাহী অধিনায়ক হয়ে যান বোল্ড।
প্রথম পর্বে ঢাকার সঙ্গে রাজশাহীর দু’বারের জয়ের নায়ক স্যামিত প্যাটেলও ফিরে যান পরের ওভারেই। সানজামুলের বলে লং অফ থেকে দৌড়ে গিয়ে দারুণ এক ক্যাচ নেন রাসেল। রাজশাহীর স্কোর তখন ৬ উইকেটে ৯১।
জয়ের জন্য শেষ পাঁচ ওভারে রাজশাহীর প্রয়োজন ছিল ৬৭ রান। কিন্তু পরের দুই ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজ ও ফরহাদ রেজার বিদায়ে লক্ষ্য ছোঁয়া রাজশাহীর জন্য শত আলোকবর্ষ দূরের পথ হয়ে যায়! এক বল পরেই ব্রাভোর থ্রোয়ে কনুইয়ে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন কেসরিক উইলিয়ামস। এর পরের ওভারে রাসেলের বলে নাজমুল ইসলাম সাঙ্গাকারার তালুবন্দি হতেই শিরোপা জয়ের উল্লাসে মাতে ঢাকা।
এর আগে টস জিতে ঢাকাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন রাজশাহী অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম তিন ওভারে বিনে উইকেটে ২২ রান তুললেও দ্রুতই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ঢাকা। চতুর্থ ওভারে অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের বলে কভার শট খেলতে গিয়ে পয়েন্টে কেসরিক উইলিয়ামসকে ক্যাচ দেন মেহেদী মারুফ।
পরের ওভারে রাজশাহীকে দ্বিতীয় সফলতা এনে দেন আরেক অফ স্পিনার আফিফ হোসেন। তিনে নামা নাসির হোসেন আগের বলেই মিড অফ ক্যাচ তুলে বেঁচে গিয়েছিলেন, ক্যাচ ছেড়েছিলেন সামিত প্যাটেল। মুখোমুখি পরের বলেই ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা হাঁকাতে যান, কিন্তু বলের লাইন মিস করেন। স্টাম্পিং করতে কোনো ভুল করেননি উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহান।
সপ্তম ওভারে প্রথমবার আক্রমণে এসে প্রথম বলেই মোসাদ্দেক হোসেনকে ফিরিয়ে দেন রাজশাহী অধিনায়ক স্যামি। চারে নামা মোসাদ্দেক হয়েছেন এলবিডব্লিউ। ঢাকার স্কোর তখন ৩ উইকেটে ৪২। আউট হওয়া তিন ব্যাটসম্যানের কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি!
দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকেটে কুমার সাঙ্গাকারাকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন একপ্রান্ত আগলে রাখা এভিন লুইস। দারুণ সব চার মারে দলের রান বাড়াতে থাকেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান। এর মধ্যে দশম ওভারে আফিফের টানা তিন বলে মারেন তিন চার। দুটি কভার দিয়ে প্রায় একই শটে চার। আগের ওভারে স্যামিকেও মেরেছিলেন টানা দুই চার। ১০ ওভার শেষে ঢাকার স্কোর দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৮২।
পরের ওভারেই অবশ্য ফিরে যান লুইস। ফরহাদ রেজার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে শট খেলতে গিয়ে শর্ট থার্ড ম্যানে উইলিয়ামসের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ৩১ বলে ৮টি চারের সাহায্যে লুইস করেন ৪৫।
ছয়ে নামা ড্যারেন ব্রাভোও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। আগের বলেই মিরাজকে ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে গ্যালারিয়ে আছড়ে ফেলেছিলেন। পরের বলটি শর্ট ফাইন লেগে ঠেলে দিয়েছিলেন। নন স্ট্রাইক প্রান্ত থেকে সিঙ্গেলের জন্য ছুটে আসেন সাঙ্গাকারা। কিন্তু ব্রাভো প্রথমে থেকে যাওয়ায় ঠিক সময়ে ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি। মুমিনুল হকের থ্রো থেকে স্টাম্প ভেঙে দেন মিরাজ, ব্রাভো (১৩) রান আউট।
আরেক ক্যারিবিয়ান আন্দ্রে রাসেল একবার জীবন পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। আগের ওভারে নাজমুলের বলে ডিপ মিড উইকেটে তার ক্যাচ ফেলেছিলেন সাব্বির রহমান। পরের ওভারে দুর্দান্ত এক ক্যাচে রাসেলকে বিদায় করেন ফরহাদ। সামিত প্যাটেলের বলে লং অফে ছক্কা হাঁকাতে গিয়েছিলেন রাসেল। প্রথমে বল ধরে বাউন্ডারির বাইরে চলে যাচ্ছিলেন দেখে সেটি শূন্যে ছোড়েন ফরহাদ। পরের ভেতরে এসে দারুণ এক ক্যাচ নেন তিনি।
ব্যর্থতার সাগরে ভেলা ভাসান অধিনায়ক সাকিবও। ১২ রান করে ফরহাদের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ঢাকার অধিনায়ক। ঢাকার স্কোর তখন ৭ উইকেটে ১৩০। এরপর দ্রুত আলাউদ্দিন বাবুর উইকেট হারালেও শেষ দিকে সাঙ্গাকারার ব্যাটে সুবাদে লড়াইয়ের পুঁজি পায় ঢাকা। শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ৩৩ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় ৩৬ রান করেন সাগাকারা। ২৮ রানে ৩ উইকেট নেন ফরহাদ।
মন্তব্য চালু নেই