রাজনীতিতে নতুন মোড়, আলোচনার জন্য তারানকোকে দায়িত্ব দিলেন বান কি মুন

সিটি নির্বাচনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে একথা জানান।

বাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে মহাসচিব কথা বলেছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব একেএম শামীম চৌধুরী জানান। তিনি বলেন, নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণকে স্বস্তিকর বললেও মাঝপথে তাদের সরে দাঁড়ানোকে মহাসচিব দুঃখজনক হিসেবে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে আলোচনার জন্য সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে দায়িত্ব দেয়ার কথাও প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে ২০১৩ সালে দুদফা ঢাকা সফর করেন তারানকো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে সরকারের সমঝোতার জন্য চেষ্টা চালান তিনি। সে সময় সংলাপের চেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং বিএনপির বর্জনের মধ্যেই ভোট করে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

প্রেসসচিব জানান, শুক্রবার বেলা ১টা ৪৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তাদের মধ্যে প্রায় ১৪ মিনিট কথা হয়। বান কি মুন বলেছেন, নির্বাচনে কিছু অনিয়ম হয়েছে বলে তাকে জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছেন, তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম প্রাণহানি ছাড়া কোনো নির্বাচন হয়েছে।

২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থীরা ভোট চলাকালেই কারচুপির অভিযোগে বর্জনের ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি জাতিসংঘ মহাসচিবও ইতিমধ্যে সব অনিয়মের নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রেসসচিব বলেন, নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেছেন, বিএনপি গত তিন মাসে আন্দোলন করে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, জনসম্পদ নষ্ট করেছে। মানুষ এসব চায় না। এ কারণে মানুষ তাদের ভোট দেয়নি। বিএনপি সেটি বুঝতে পেরে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ভোট শুরুর তিন ঘণ্টা পরই সরে দাঁড়িয়েছে।

প্রেসসচিব জানান, বিএনপি যাতে নাশকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড পরিহার করে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসে- সে আহ্বান জানাতে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। শান্তি-শৃংখলা রক্ষায় আইনশৃংখলাবাহিনী দৃঢ় ভূমিকা পালন করেছে। নির্বাচনে ৪৪ শতাংশ ভোট পড়েছে জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভোটের সংখ্যা অস্বাভাবিক ছিল না। এ কারণে ভোট নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।

প্রেসসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেছেন, তাদের (বিএনপি) আন্দোলনের ডাকে জনগণ আসেনি, নেতাকর্মীরাও আন্দোলনে থাকেনি। একইভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েও নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে পারেনি তারা। নেতাকর্মীদের পোলিং এজেন্ট বানিয়ে নির্বাচন কেন্দ্রেও পাঠাতে পারেনি তারা, কারণ তারা জনগণকে হত্যা করে আন্দোলন করেছে। তিনি বলেন, ৩ ঘণ্টা পর বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেও যে ভোট তাদের প্রার্থীরা পেয়েছেন, তাতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই বলে জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছেন, তার সরকার জনগণকে শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। একই সঙ্গে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে।
বান কি মুন বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং শান্তি-শৃংখলা রক্ষায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন বলে শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, গণতন্ত্র সুসংহত করতে আওয়ামী লীগ সরকারের নিরলস কাজের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান বান কি মুন। একই সঙ্গে তিনি স্পষ্টভাষায় সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানান। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী টেলিফোন করার জন্য বান কি মুনকে ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার বিষয়ে মহাসচিবের আন্তরিকতার প্রশংসা করেন বলে প্রেসসচিব জানান।



মন্তব্য চালু নেই