রাগ নিয়ন্ত্রণে আনার সহজ উপায়

বাড়িতে ও অফিসে কাজ কিংবা মানসিক চাপ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। সেই সাথে ধৈর্য না বেড়ে প্রতিনিয়ত যেন কমে যাচ্ছে। সেই সাথে কমে যাচ্ছে রাগের ওপর নিয়ন্ত্রণও। দৈনন্দিন জীবনে কিছু বিষয় আছে যার কারণে যে কারো রাগ উঠতেই পারে। কিন্তু সমস্যা হলো রাগের মাত্রা নিয়ে। ধরুন, আপনার বসের কারণে আপনার রাগ উঠে গেল কিংবা বসের ওপরে খেপে গেলেন। আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কিছু বলে বসলেন অথবা কিছু করে ফেললেন। তখন ঘটনাটি কেমন দাঁড়াবে? রাগ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু রাগের মাত্রা বেড়ে যাওয়া ভালো নয়। সুতরাং মাত্রাতিরিক্ত রাগের আগেই তাকে নিয়ন্ত্রণ করুন। কেবল স্বাস্থ্যের জন্য নয়, নিজের ইমেজকে পরিচ্ছন্ন রাখতেও রাগ নিয়ন্ত্রণ জরুরী।

মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যেতে পারে যেসব কারণে তার মধ্যে রাগ অন্যতম। রাগ মুহূর্তেই বাড়িয়ে দিতে পারে দু’বন্ধুর মধ্যকার দূরত্ব। হটাৎ করেই আপনাকে একা করে দিয়ে হারিয়ে যেতে পারে আপনার কাছের মানুষগুলো। আর তাই এই রাগকে রাখতে হবে নিয়ন্ত্রণে। অযথা রাগ না করে ঠান্ডা মাথায় ভাবলে অনেক সমস্যারই সমাধান করা যায় খুব সহজেই। রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো—

লম্বা দম নিন
যখনই বুঝবেন খুব বেশি রেগে যাচ্ছেন, সাথে সাথেই লম্বা দম নেয়া শুরু করুন। মারাত্মক ভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার আগে লম্বা নিঃশ্বাস নিন। এটা আপনাকে শান্ত থাকতে সাহায্য করবে, প্রতিক্রিয়াটা আর আগের মতন তীব্র হবে না। লম্বা দম নেয়ার সাথে সাথে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গুনতে থাকুন। কথাগুলো হয়তো শিশু সুলভ শোনাচ্ছে কিন্তু আসলেই এই পদ্ধতি বেশ কার্যকর। রাগের শুরুতে অবলম্বন করলে রাগটা কখনোই মাত্রা ছাড়াতে পারবে না।

কথা বলার আগে চিন্তা করুন
রাগের সময় কথা বললে সেটা অবশ্যই সামনের মানুষটিকে দূঃখ দিয়ে কথা বলা হবে। মানুষটির দোষ না থাকলেও অনেক সময় অপ্রীতিকর কথা বলা হয়ে যায়। এটা আমাদের মানসিক ব্যাপার, তাই রাগ উঠলে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। যদি কথা বলতেই হয় তবে ভেবে চিন্তে বলুন। কারণ অনেক সময় রাগের মাথায় যে সব কথা বলা হয়, সেটার জন্য নতুন ও বড় আকারের ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে। অথবা আপনি নিজেই রাগ কমে গেলে নিজের কথার জন্য পস্তাতে পারেন। সেজন্য রাগকে এমন পর্যায়ে নেবেন না, যাতে আপনার চিন্তা করার ক্ষমতা লোপ পায়। তার আগেই নিজেকে শান্ত করে ফেলুন।

বিরতি নিন
রাগের সময় কোন কাজ করতে যাবেন না। এমনকি কথা বলাও না। চুপচাপ একলা থেকে রাগ কমানোর পর্যন্ত বসে থাকুন। অফিসে বা বাসায় যে কারো ওপর রাগ উঠলে তা প্রকাশ করে নিজেকে সবার সামনে নিচু করবেন না। যার ওপর রাগ উঠেছে চুপচাপ সাধারণ ভদ্রতা দেখিয়ে তার সামনে থেকে চলে আসুন। খানিকক্ষণ একলা হাঁটাহাঁটি করুন, এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি খান কিংবা এমন কারো সাথে কথা বলুন যিনি আপনার রাগ কমানোর ক্ষমতা রাখে। তারপর আবার কাজে ফিরে আসুন।

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান
যদি রাতে ঘুম ভালো না হয় তবে সকাল থেকেই মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। অযথাই ছোটখাটো ঘটনায় রাগ উঠে। সুতরাং রাগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইলে রাতে ভালো করে ঘুমাতে হবে। যাতে দিন ভালো যায়। যারা নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রন করতে পারেন না তাদেরকে ডাক্তাররাও এই পরামর্শই দিয়ে থাকেন। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ২৪ ঘন্টায় সর্বনিম্ন ৬ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। ৭ কিংবা ৮ ঘন্টা হলে বেশি ভালো হয়।

মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে নিন
যখন বুঝবেন রাগ উঠছে তখনই চেষ্টা করবেন যে কারণে রাগ উঠছে সেই কারণ থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়ার। কোন ঘটনা নিয়ে রাগ উঠলে পুরো দিন তা নিয়ে রেগে বসে থাকার কোন প্রয়োজন নেই। মনকে অন্য কাজে ব্যস্ত করুন। পছন্দের গান শুনুন কিংবা মজার কোন ভিডিও দেখুন। মনকে খুশী করুন।

ব্যায়াম করুন
রাগ কমানোর সব থেকে স্বাভাবিক ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী উপায় হচ্ছে ব্যায়াম করা। এই ব্যায়াম হতে পারে কোন ব্যায়ামাগারের শারীরিক ব্যায়াম কিংবা যোগ ব্যায়াম। ব্যায়ামাগারের ব্যায়াম করলে মানসিক চাপ ও হতাশা দূর হয়। কারণ শারীরিক ব্যায়ামের ফলে মস্তিস্কে সেরেটেনিন ও এন্ডরফিন নামক দুটি হরমোন নিঃসরণ হয়, যা সুখের অনুভুতির সৃষ্টি করে। আর ডাক্তাররা রাগ নিয়ন্ত্রণে রোগীদের সকালে উঠে যোগ ব্যায়ামের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। মস্তিস্ক ঠাণ্ডা রাখার প্রাচীন উপায় হচ্ছে যোগ ব্যায়াম।

যে ১০টি উপায় অবলম্বন করবেন:

১. মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন, এক থেকে দশ পর্যন্ত উল্টো করে গুনতে পারেন, তাহলে মস্তিস্ককে কিছুটা অন্য দিকে ব্যস্ত রাখা যাবে।

২. হুট করে কোনো কথা বা কাজ করে বসবেন না, সময় নিন, প্রয়োজন হলে সেই মানুষটার সাথে কিছুক্ষণ কথা বন্ধ রাখুন অথবা রাগের কারণটি থেকে নিজের মনকে অন্যদিকে সরিয়ে নিন।

৩. যখন আপনি শান্ত হয়ে গেলেন, এবার আপনার রাগের কারণগুলো তার সামনে তুলে ধরুন, ততক্ষণে অপরজনের মাথাও ঠান্ডা হয়ে যাবে, সে ভালোভাবে আপনার কথা বুঝতে পারবে।

৪. এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম করতে পারেন, হাঁটাহাঁটি অথবা ওয়েট লিফটিং করতে পারেন।

৫. আপনি যখন রেগে আছেন স্বাভাবিকভাবেই আপনার মধ্যে নমনীয়তা কাজ করবে না, আর তাই হঠাৎ করে এমন কিছু কথা বলে ফেলতে পারেন যা অন্যের কষ্টের কারণ হতে পারে, তাই কোনো কথা না বলাই ভালো।

৬. যে কোনো সমস্যার সমাধাণ অবশ্যই আছে, একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলেই সেটা বের করা যায়।

৭. নিজেকে নিয়ে বেশি হিসাব করতে গেলে রাগ আরও বাড়বে তাই, তাত্ক্ষণিক ব্যাপারটা মেনে নিলে সমস্যা অনেকটা কমে যায়।

৮. টেনশনে সিগারেট জাতীয় কিছু খাওয়া ঠিক না, তাতে মনটা আরও বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

৯. টেনশন কমানোর জন্য খানিকটা হাসি ঠাট্টা করা যেতে পারে, তাতে মনটা হালকা হয়ে যায়।

১০. সব থেকে ভালো উপায় হলো মেডিটেশন।



মন্তব্য চালু নেই