রাউজানে বাঙ্গি-তরমুজের বাম্পার ফলন: কৃষকের মুখে হাসি
চট্টগ্রাম রাউজান উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে দেখা মিলছে মৌসুমী ফল বাঙ্গি-তরমুজ। এ বৎসর রাউজানে বাঙ্গি-তরমুজের ফলন আশার তুলনায় অতিরিক্ত হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি দেখা যাচ্ছে। তবে হাট বাজার গুলো ফলের চাহিদা কম থাকায় কৃষরা হতাশায় দিন গুনছে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর চাষাবাদ বেড়েছে গত বছরের তুলনায় অনেক অনেক বেশী। ফলজ জমি থেকে ব্যুারো আমান ধান কেটে নেওয়া পর আশানুরূপ বাঙ্গি-তরমুজ ফলন হলেও সাম্প্রতি হঠাৎ শীলা বৃষ্টি হওয়ায় কৃষক কম বেশি ক্ষতির সম্মুখিনে পড়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় বাঙ্গি-তরমুজের দাম কম হওয়ায় কৃষকদের মাঝে বিরাজ করছে হতাশার চিত্র। এর পরও প্রতিদিন সকাল, বিকাল, রাত পর্যন্ত রাউজান রাঙ্গামাটি সড়কের শরৎতের দোকান নামক এলাকায় বাঙ্গি-তরমুজ নিয়ে কৃষকরা ছুটে আসে বিক্রি করার আশায়। রাউজানে শরৎতের দোকান নামক স্থানটিতে উপজেলার মধ্যে বেশ একটি বড় বাঙ্গি-তমুজের হাট বললেও চলে। এ বৎসর চাহিদা কম থাকায় এখনো জমে উঠেনি বাঙ্গি-তরমুজ বিকিকিনির হাট গুলো। বাঙ্গি-তরমুজ আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষের জনপ্রিয় ফল হিসাবে পরিচিত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে ভিটামিন বি ও সি রয়েছে এই ফলে। তবে বাঙ্গি ফলটি মানব শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন, পেটের সমস্যা দূর করে, বমি করা বন্ধ করে, হজম শক্তি করতে সাহায্য করে এবং মুখের মধ্যে সু-স্বাধু ও রুচি আনতে কার্যকর ক্ষমতা রাখে। গ্রামীন সমাজের একটি প্রচলন রয়েছে নতুন বিয়ে হলে মেয়ের পক্ষ থেকে ছেলে পক্ষকে বছরবর্তি বিভিন্ন রকমের পিঠা-পাটি, ফলমুল ইত্যাদি পাঠানো হয়। তত মধ্যে বাঙ্গি-তরমুজ হচ্ছে বছরের একটি অংশ। তাই কেউ যায় গাড়ী নিয়ে বাঙ্গি-তরমুজ ক্রয় করতে, আবার কেউ যায় পাইকারী ক্রয় করে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করতে। এতে শেষ নয়, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে গেলে বাঙ্গি-তরমুজ ফল ক্রয় করে বৎসরিক ফলন হিসাবে নিয়ে যায় অনেকে। বাঙ্গি প্রচুর চাহিদা থাকায় রাউজানের কৃষকরা প্রতিবছর গ্রীষ্ম মৌসুমে বাঙ্গি-তরমুজের ক্ষেত খামার নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান সারাদিন। এ সময় অনেকে অধিক মুনাফার আশায় ঋণ নিয়ে বাঙ্গি-তরমুজের চাষাবাদ করে বেশ লাভবান হয়। সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের রাউজান শরৎতের দোকান নামক এলাকায় বাঙ্গি-তরমুজের মৌসুমী হাট বাসে সকাল থেকে শুরু করে রাত ১২ টা পর্যন্ত। চৈত্র মাসের প্রথম দিক থেকে বৈশাখের শেষের দিক পর্যন্ত বেচা কেনা ধুমপড়ে শরৎতের দোকানস্থ হাটে। প্রতি বছর স্থানীয় চাষীরা ক্ষেতের সদ্য তোলা এসব বাঙ্গি-তরমুজ বিক্রি করতে নিয়ে আসে এই মৌসুমী হাটে। সাম্প্রতি শরৎতের দোকানস্থ হাট সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঙ্গি-তরমুজ বিক্রেতা ইকবাল নিউজবিডিএন’কে জানায়, ক্রেতা-বিক্রেতা বাড়ায় এ মৌসুমী হাটটিতে সাধারণ মানুষের কাছে একটি জনপ্রিয় বাঙ্গি-তরমুজের হাট-এ পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর এই বাঙ্গি-তরমুজের মৌসুমী বাজারে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ক্রেতারা সুস্বাধু রাউজানের বাঙ্গি-তরমুজ ক্রয় করে নিয়ে যেতে দেখা যায়। কৃষরা বলেন, এই এলাকায় তরমুজের চেয়ে বাঙ্গির চাষাবাদ বেশি হয়। কিন্তু এখানকার বাঙ্গি স্বাদ বেশি এবং আকৃতি খুব বেশ বড় হয়। এ জন্যে বেশির ভাগ চাষীরা তরমুজের উপর বেশি ভরসা না করে বাঙ্গি চাষের উপর বেশি নির্ভরশীল হয়। এসব এলাকার মানুষ তাদের সারা বছরের অনেকটা আয়-উপার্জন নির্ভর করে এই মৌসুমে বাঙ্গি-তরমুজ ফলের উপর। রাউজানের গহিরা, কুন্ডেশ্বরী, মোবারখীল, ডাবুয়া, সুলতানপুর, চিকদাইর, কদলপুর, জয়নগর বড়–য়াপাড়াসহ রাউজানের বিভিন্ন ইউনিয়নে বাঙ্গি-তরমুজের বীজ রোপন করে স্থানীয় কৃষকরা। প্রতি ৪০ শতক জমিত বাঙ্গির চাষাবাদ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এরপর ফলন আসলে প্রতি ৪০ শতক জমিতে থেকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করা যায়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাউজান উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার জানান, প্রতি বছরের মত এ বছরও রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় রেকর্ড পরিমাণ ২৭৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষাবাদ করেছে ৪১০ জন কৃষক। আর তরমুজের চাষাবাদ হয়েছে ২৫ হেক্টর জমিতে হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে বাঙ্গি ফলের চাষাবাদ করতে ৪৫ থেকে ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয় কৃষকদের। ফলন ভাল হওয়ায় প্রতি হেক্টর জমি থেকে ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বাঙ্গি বিক্রি করা যাবে। সাম্প্রতি শিলা বৃষ্টিতে ফলনের ক্ষতি হলেও সামনে এ ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে কৃষকরা বেশ লাভবান হবেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করে।
মন্তব্য চালু নেই