এক রহস্যময়ী-সুন্দরী প্রতারক গ্রেফতার
হাতভরা দামী গহনা, চোখে অভিজাত সানগ্লাস ও জমকালো দামি পোশাকে যেন আকাশ থেকে নেমে আসা পরী। নিজেকে আবার পরিচয় দিচ্ছেন পেশায় ডাক্তার,টি এসেছেন আমেরিকা থেকে। কিনতে চান প্রায় কো টাকার সামগ্রী, অ্যাডভান্সও দিতে চান কয়েক লাখ টাকা। এই পরিস্থিতি মাথা ঠিক রেখে বিষয়টি আসল, না নকল, তা বোঝার আগেই অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন। তবে সুসংবাদ এই যে আটক হয়েছেন ওই সুন্দরী-রহস্যময়ী প্রতারক।ও্ই প্রতারক নারীকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে এসব তথ্য জানা গেছে।
‘আমি ডা. জেরিন বলছি। গত সপ্তাহে বোস্টন থেকে এলাম। আমার স্বামীও একজন ডাক্তার। কাফরুলে বাড়ি তৈরি করার কাজে হাত দিয়েছি। অনেক টাকার রড-সিমেন্ট লাগবে। লাখ পাঁচেক টাকা অ্যাডভান্স দিতে চাই।’ মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে ‘সিমেন্ট সেন্টার’ নামে একটি দোকানে ক্রেতার পরিচয়ে এক সুন্দরী নারী ম্যানেজারের সঙ্গে এভাবেই কথা বলছিলেন। এত টাকা অগ্রিম পাওয়া যাবে শুনে ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম রতন মালিককে খবর দেন। মালিক আবদুল্লাহ আল কাফী ‘ড. জেরিন’কে নিয়ে পাশেই একটি সিএনজি স্টেশনে গিয়ে কথা বললে নারীর বেশভূষা, কথাবার্তা ও আচরণে অসামঞ্জস্য দেখে সন্দেহ হয়।
‘সিমেন্ট সেন্টারের’ মালিক বলেন, কাফরুলের কত নম্বর সড়কের কত নম্বর হোল্ডিংয়ে বাড়ি তৈরি করা হবে?, এমন প্রশ্ন জানতে চাইলে উল্টাপাল্টা জবাব দেন তিনি। এছাড়া প্রতারনা নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের সাথে ওই নারীর নাম এবং চেহারায় মিল পাওয়া বিষয়টি তিনি কাফরুল থানার ওসিকে জানালে পুলিশ এসে ওই নারী প্রতারককে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পরে তার ভ্যানিটি ব্যাগে পাওয়া যায় চার প্যাকেট সিগারেট, ৫০ হাজার টাকা, ৫০০ থাই মুদ্রা ও কিছু প্রসাধনসামগ্রী।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আটক তরুণীর আসল নাম শারমীন। বয়স ২৮ বছর। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ভূঁইয়াপাড়া। নারায়ণগঞ্জের শিবু মার্কেট এলাকায় বসবাস করেন। সেখানে আরও দুই তরুণী থাকেন। চার বছর আগে তার স্বামী মশিউর রহমান মারা যান। তার নয় বছরের এক কন্যাসন্তান নোয়াখালীতে দাদির সঙ্গে থাকে। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে প্রবাসী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেন তিনি। নিজেকে পরিচয় দিতেন ডা. জেরিন নামে। কোথাও আবার নাম বলতেন ডা. মেরিন। এই প্রতারক চক্রের সদস্য নয়জন। তাদের মধ্যে পুরুষ চারজন। টার্গেট করা ব্যক্তিদের প্রবাসী সন্তান ও স্বজনদের যাবতীয় তথ্য তারাই সংগ্রহ করে তা প্রতারক চক্রের সদস্যদের দেন। তিনি নিজেও বাসার নিরাপত্তারক্ষীদের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে বাড়ির মালিকদের তথ্য নেন।
শারমীন বলেন, সপ্তাহে দু-তিনটি বাসার টার্গেট করা হয়। বাবুল রেন্ট-এ-কারের কাছ থেকে নিয়মিত তারা দামি গাড়ি ভাড়া করেন। প্রতারণা শেষে নির্বিঘ্নে বাসায় ফিরে আবার গাড়ি ফিরিয়ে দেন। কখনও ডলার ভাঙানোর কথা বলে টাকা নেন, কখনও আবার কৌশলে কারও বাসায় ডাক্তার পরিচয়ে ঢুকে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা চুরি করেন। উত্তরায় দুই বিশিষ্ট সাংবাদিক, দক্ষিণখানে, বারিধারায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মফিজ উদ্দীনের বাসা, মোহাম্মদপুরে একজন উপসচিবের বাসাসহ শতাধিক বাসা থেকে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। একেকজনের বাসা থেকে ১০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। এ টাকার ভাগ প্রতারক চক্রের সবাই ভাগাভাগি করেন। বড় ধরনের প্রতারণার পর কিছুদিন গ্রামের বাড়ি গিয়ে থাকেন। এর পর নতুন টার্গেট ঠিক করেন।
প্রতারক ওই তরুণী আটকের খবর পেয়ে ভুক্তভোগীদের অনেকে সিএনজি স্টেশনে ছুটে আসেন। অনেকে তরুণীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করেন।
মন্তব্য চালু নেই