রমজানে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি বন্দিদের দেখার কেউ নেই

রহমত মাগফিরাত আর নাজাতের মাস রমজান। পবিত্র এ মাসে দেশের ন্যায় প্রবাসে কমিউনিটির ব্যানারে আয়োজন করা হয় ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভা। ইফতার মাহফিলে দাওয়াত করা হয় সকল পেশাজীবী ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যম কর্মীদেরকে। ইফতার সামনে রেখে মোনাজাত করা হয় মুসলিম উম্মাহর শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করে।

কিন্তু একবারও কি নেতৃবৃন্দ ভাবছেন মালয়েশিয়ার বন্দিশিবিরে বাংলাদেশিরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন? না কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ একবারের জন্যও মুখে উচ্চারণ করেননি তাদের কথা।

প্রবাসীদের অধিকার ও দাবি আদায়ের দীপ্তসপথ নিয়ে দেশটিতে গঠন করা হয় অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন। অথচ বন্দি বাংলাদেশিরা দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল করতে এবং পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে ভিটে মাটি-সহায় সম্বল বিক্রি করে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস পরিবারে হাসি ফোটানো তো দূরে থাক পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বন্দিশিবিরে অসহায়ত্বের গ্লানি টানছেন তারা।

বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান সন্ততি কেউ পাশে নেই। কেমন আছেন বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই। এদিকে মা-বাবা পথ চেয়ে থাকেন কবে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে আসবে মানিকটি। জীবিকার তাগিদে স্বজনদের ফেলে জীবনবাজি রেখে কত লোক সাগর পাড়ি দিতে নৌকায় চড়েছে? তাদের মধ্যে পথেই মারা গেছে কতজন? এসব প্রশ্ন এখন ঘুরে ফিরে আসছে।

থাইল্যান্ডের গহীন অরণ্যে অভিবাসীদের গণকবর আবিষ্কারের পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সমুদ্রপথে ঝুঁকিপূর্ণ মানবপাচার নিয়ে ব্যাপক হৈচৈ শুরু হয়। গত বছর মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে কিংবা লাশ হয়েছে।

এদিকে বছরের পর বছর মালয়েশিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবির ও কারাগারে চার হাজারের বেশি বাংলাদেশি মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। একটি সূত্রে জানা গেছে, দেশটির ১২টি বন্দিশিবিরেই এক হাজার ৭২৩ জন আর বিভিন্ন কারাগারে সাজাভোগ করছেন এক হাজার ৯২৭ জন বাংলাদেশি।

সূত্র জানায়, সিমুনিয়া ক্যাম্পে ১৩২, লেঙ্গিং ক্যাম্পে ২৩৬, লাঙ্গ ক্যাম্পে ২৫০, জুরুত ক্যাম্পে ৫৬, তানাহ মেরা ক্যাম্পে ৪৮, মাচাপ উম্বু ক্যাম্পে ১৭৯, পেকা নানাস ক্যাম্পে ১২০, আজিল ক্যাম্পে ১২৬, কেএলআইএ সেপাং ডিপো ক্যাম্পে ৮১, ব্লান্তিক ক্যাম্পে ১১৩, বুকিত জলিল ক্যাম্পে ২৩৪ ও পুত্রজায়া ক্যাম্পে ১৮০ জন বাংলাদেশি আটক আছেন।

বন্দিদের মধ্যে অনেকে অভিযোগ করেছেন, ক্যাম্পগুলোতে প্রায়ই বাংলাদেশিদের ওপর নির্যাতন করা হয়। এমনকি কেউ কেউ ক্যাম্পেও মারা যান। অনেক সময় ঠিকমতো খাবার দেয়া হয় না। দীর্ঘদিন জেলে বা ক্যাম্পে থাকলেও দেশে ফেরত নেয়ার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বলেও জানান তারা।

মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন কারাগার ও ক্যাম্পে যারা আটক আছেন তাদের বেশিরভাগই অবৈধভাবে প্রবেশ কিংবা অবৈধভাবে থাকার কারণে গ্রেফতার হয়েছেন। মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইন, ১৯৫৯-এর ধারা ৬(১) সি/১৫ (১) সি এবং পাসপোর্ট আইন, ১৯৬৬-এর ১২(১) ধারায় বাংলাদেশিরা বন্দি শিবিরে আটক রয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই