রবি-এয়ারটেলের এক হওয়ায় অন্যদের আপত্তি নেই
রবি ও এয়ারটেলের ব্যবসা একীভূত হওয়ার বিষয়ে অন্য অপারেটররা ইতিবাচক বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী শাহজাহান মাহমুদ।
সোমবার বিটিআরসি কার্যালয়ে রবি ও এয়ারটেলকে একীভূতকরণের বিষয়ে বিষয়ে অপর চার অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, সিটিসেল এবং টেলিটকের সঙ্গে আলোচনা করে কমিশন। ১৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য গণশুনানির আগে চার অপারেটরের মতামত নিল বিটিআরসি।
রোববার অপারেটর চারটির কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠায় কমিশন। আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘অন্য অপারেটর মনে করে একিভূতকরণ গ্রাহকদের জন্য ইতিবাচক হবে। সবাই পক্ষে মতামত দিয়েছে।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, অপারেটররা বিটিআরসি’র হাতে থাকা অব্যাবহৃত টুজি ও থ্রিজি তরঙ্গ নিলাম আগে হবে না একীভূতকরণ আগে হবে তা জানতে চেয়েছেন। বিটিআরসি বলেছে দুই প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলবে।
উল্লেখ্য, টুজির জন্য ব্যবহৃত ১ হাজার ৮০০ মেগাহার্টজের অব্যবহৃত ১০ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ এবং থ্রিজির ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের ১৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বিক্রির জন্য নিলাম ডাকবে বিটিআরসি।
এ প্রসঙ্গে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘একীভূতকরণ একটি জটিল ইস্যু। কারণ এর সঙ্গে কিছু টেকনিক্যাল ইস্যু জড়িত। স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) একটা বড় বিষয়। একীভূতকরণ ও নিলামে তরঙ্গ বরাদ্দে ভারসাম্য রাখতে হবে। আমাদের আজকের বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল এ বিষয়ে অপারেটররা কী মনে করে তা জানা। এ বিষয়ে চার অপারেটরই ইতিবাচক।’
বর্তমানে গ্রামীণফোনের কাছে থেকে বেশী ৩২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। আর রবির ১৯ দশমিক ৮০ মেগাহার্টজ এবং এয়ারটেলের ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ রয়েছে। ব্যবসা এক হলে রবি-এয়ারটেলের মোট তরঙ্গ হবে ৩৯.৮ মেগাহার্জ,
যা হবে সব অপারেট থেকে বেশি।
আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি একীভূতকরণ নিয়ে গণশুনানি হবে জানিয়ে শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘চার অপারেটরের মতামত নিয়ে কমিশনে আলোচনা হবে। এজন্য বিটিআরসি একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করছে, যারা সব মতামত একসাথে কমিশনে উত্থাপন করবে।’
বৈঠকে মোবাইল অপারেটর বাংলালিংক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক আস, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, গ্রামীণফোনের হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স মাহমুদ হোসেন, সিটিসেলের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, রবির মূল প্রতিষ্ঠান আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ ও এয়ারটেলের মালিক ভারতি এয়ারটেল। বাংলাদেশে নিজেদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম একীভূত করতে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর আলোচনা শুরু করে বারহাদ ও ভারতী কর্তৃপক্ষ। ২৮ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে তারা একটি চুক্তিতে সই করে। তবে দুই কোম্পানি সেপ্টেম্বরই এক হওয়ার বিষয়ে বিটিআরসিতে আবেদন করে।
বিটিআরসি সেই আবেদনে প্রাথমিক সম্মতি দিলেও এখন আবেদনটির বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। রবি ও এয়ারটেলের একীভূত হওয়ার আর্থসামাজিক প্রভাব নিয়ে সমীক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের দুই শিক্ষককে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আবেদন নিষ্পত্তির জন্য গণশুনানির আয়োজন করছে কমিশন।
রবি ও এয়ারটেলের একীভূত হওয়ার বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এক হওয়ার আবেদনের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) আদালতে আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতে আদালত গত ২৫ জানুয়ারি যে আদেশ দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, বিটিআরসিকে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে রবি ও এয়ারটেলের মূল্যায়ন প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। আর এই প্রতিবেদন পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে হবে।’
কুয়ালালামপুরে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে, এক হওয়া পর কোম্পানির রবি নামেই ব্যবসা পরিচালনা করবে। একিভূত কোম্পানির ৬৮.৩ শতাংশ শেয়ার থাকবে আজিয়াটার হাতে। আর ভারতীর কাছে থাকবে ২৫ শতাংশ । ৬.৭% থাকবে বর্তমানে রবির আরেক শেয়ারহোল্ডার জাপানের এনটিটি ডকোমো কাছে।
গত ডিসেম্বর শেষ নাগাদ বাংলাদেশে মোট মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা ১৩ কোটি ৩৭ লাখ। দুই কোম্পানি এক হলে তাদের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৪ কোটি। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অপারেটরে পরিণত হবে। এখন সবচেয়ে বেশি গ্রাহক আছে গ্রামীণফোনের। প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি। আর ৩ কোটি ২৮ লাখ গ্রাহক নিয়ে বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলালিংক।
মন্তব্য চালু নেই