যৌন কেলেংকারি নিয়ে খোলামেলা সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী শ্বেতা
ভারতীয় অভিনেত্রী শ্বেতা বসু সম্প্রতি পূনর্বাসন কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছেন। যৌন কেলেংকারির অভিযোগে অভিযুক্ত শ্বেতা সম্প্রতি ভারতীয় একটি পত্রিকায় প্রথমবারের মতো তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিষয় নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। আওয়ার নিউজ বিডির পাঠকদের জন্য সে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল।
বাড়ি ফিরেছেন কবে?
শ্বেতা বসু: আমি গত শুক্রবার বাড়ি ফিরেছি। আমার কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আমার অভিযোগ শুধু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। তারা আমার দুঃসহ মুহূর্তে আমাকে নিয়ে অনেক কথা লিখেছে। এমনকি আমার বক্তব্য বলে সেগুলো উপস্থাপন করেছে। সেগুলো সকলের কাছে প্রচারও হয়েছে। যদিও আমি কাউকে আমার কোনো বক্তব্য দেয়নি।
তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন, আপনি এর আগে মিডিয়ার সামনে কোনো বক্তব্য দেননি?
শ্বেতা বসু: না,আমি কাউকেই আমার কোনো বক্তব্য দেয়নি। আমি যখন পুলিশ হেফাজতে ছিলাম তখন আমি আমার বাবা মায়ের সঙ্গেই কথা বলিনি, তাদের সঙ্গে কথা বলার তো প্রশ্নই আসেনা। কেউ একজন বলেছে আমার জন্য সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। এটা মোটেও ঠিক নয়। চলচ্চিত্র শিল্পের সবাই আমার প্রতি এখনও অনেক আন্তরিক। আমাকে ঘিরে এ রকম নানা রকম মিথ্যা গল্প প্রচার হয়েছে। সেই সকল মিডিয়া এবং সাংবাদিকদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার কথা ভাবছি।
সংবাদে প্রকাশ পেয়েছে আপনার কাজের সকল দরজা বন্ধ হয়ে গেছে, এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
শ্বেতা বসু: আসলে আমরা এমন এক জাতি যারা মানুষের খারাপ সময়টাকে উপভোগ করি। আমি সেসকল সাংবাদিকদের বলতে চাই যে, আপনারা আমার এবং আমার পরিবার সম্পর্কে কতটুকু জানেন। চলচ্চিত্র শিল্পে আমার অনেক বন্ধু রয়েছে। এমনকি আমার সঙ্গে সকলের বেশ ভালো সম্পর্কও রয়েছে। আমি হিন্দুস্তানি ক্ল্যাসিকাল সংগীত নিয়ে একটি ডকুমেন্টরি তৈরির জন্য সাড়ে তিন বছর কাজ করেছি। আমি তামিল সিনেমায় প্রধান নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমি শেষবার যে সিনেমায় কাজ করেছি সেটি ব্যবসা সফলও ছিল। এখন একটি প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে সিনেমাতে অভিনয়ের বিষয়ে চুক্তিও হয়েছে। তাহলে কীভাবে তারা বলে আমার সকল দরজা বন্ধ হয়ে গেছে।
কিন্তু বেশিরভাগ মিডিয়ায় তো আপনাকে সাহায্যের কথা বলেছে।
শ্বেতা বসু: হ্যাঁ, আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এ কারণেই আমি আজ বাড়ি ফিরেছি এবং আবার আমার কাজ শুরু করার কথা ভাবছি। আমার সঙ্গে যা হয়েছে আমি সেটার গভীরে যেতে চাইনা। আমি সেটার প্রয়োজনও বোধ করিনা। আমি বেঁচে আছি এবং আবার কাজ শুরু করতে পারছি সেটাই আনন্দের বিষয়। আসলে জীবনটা অনেক সুন্দর।
আপনার কোনো অনুশোচনা…
শ্বেতা বসু: মিডিয়ার উচিত ছিল আমার জন্য অপেক্ষা করা। তারপর তারা বিচার করত আমি দোষী কি না। আমাকে কোনো কিছু বলার সুযোগই দেয়া হয়নি। আমি যখন পুলিশ হেফাজতে ছিলাম তখন আমাকে টিভি দেখা কিংবা পত্রিকা পড়ার কোনো সুযোগ দেয়া হত না। আমি আমাকে নিয়ে মিডিয়ার সার্কাস বাড়ি ফিরে দেখতে পেয়েছি।
তাহলে আপনি কেন এমন একটি বিষয়ে গ্রেফতার হলেন?
শ্বেতা বসু: (কিছুটা বিরতি এবং দীর্ঘশ্বাস) আসলে হায়দারাবাদে আমি কোনো সেক্স এজেন্টের কথাতে যাইনি। আমি সেখানে একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আমি পরের দিন আমার বিমানের ফ্লাইট ধরতে ব্যর্থ হই। সেই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের আয়োজকরাই আমাকে বিমান টিকেটের ব্যবস্থা করেছিল। আমার থাকার ব্যবস্থাও তারাই করেছিল। আমি শুধু পরিস্থিতির শিকার মাত্র। মামলার তদন্ত এখনও চলছে। আমি রেইডের কথা অস্বীকার করছি না। কিন্তু আমাকে নিয়ে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সত্য নয়।
পুলিশ কি আপনার সঙ্গে কোনো প্রকার খারাপ আচরণ করেছে?
শ্বেতা বসু: না, কিন্তু তারা যৌন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য টলিউড নায়িকাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিল। আমি তাদের নাম জানি না। আমি কেন অন্য নায়িকাদের নিয়ে মন্তব্য করবো। আমার বলতেও লজ্জা হয় কিছু কিছু মানুষ বলেছে আমি আমার পরিবারের জন্য অর্থ যোগান দিতে এমন করেছি।
আপনার পরিবার বিষয়টিকে কেমনভাবে নিয়েছে?
শ্বেতা বসু: আমি যখন পুনর্বাসন কেন্দ্রে ছিলাম তখন আমার দাদা মারা যান। আমি তার জীবনের শেষ সময়ে পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে পারিনি। এ বিষয়টি আজীবন আমাকে তাড়া করে বেড়াবে। আপনারা যেভাবে আমাকে উপস্থাপন করেছেন শেষ মুহূর্তে তিনি আমার সম্পর্কে সে ধারণা নিয়েই চলে গেলেন। আমার মা দিনের পর দিন আদালতে দৌড়াদৌড়ি করেছেন। আমাকে একবারের জন্যও তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। পরে সপ্তাহে একবার মাত্র ফোনে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। সেসময় সে শুধুই কাঁদতো।
অনেক পরিচালক আপনার পক্ষে কথা বলেছেন। হ্যান্সেল মেহতা তো আপনার সঙ্গে কাজ করার কথাও বলেছেন।
শ্বেতা বসু: আমি এখন পর্যন্ত তার কাছ থেকে কোনো ফোন কল পাইনি। আমি হ্যান্সেল মেহতার সিনেমায় একটি চরিত্রের জন্য অডিশন দিয়েছি। তারা যদি আমাকে বাছাই করেন তাহলে আমি কাজ করবো। আমি কারো করুনা চাইনা। আমি চাইনা মানুষ ভাবুক আমি আমার বিতর্কের কারণে ভেঙে পরেছি।
আপনার মেধা নিয়ে কী কেউ কোনো সন্দেহ করেছে? আপনি তো দশ বছর বয়সে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন!
শ্বেতা বসু: মানুষ খুব সহজেই সব ভুলে যায়। কঠিন মুহূর্তগুলোতে আসল বন্ধু চেনা যায়। অনেকেই আমার বিপদের সময় আমার পরিবারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আবার কেউ হয়ত ফোনও রিসিভ করেনি। আমার পরিবারের যদি কিছু একটা হয়ে যেত তাহলে এর দায়ভার কে নিত? যারা আমাকে সাহায্য করেছে তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আর যারা আমাদের সাহায্য করেনি তাদের জন্য বলছি এটাই জীবন। এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়।
এখন আপনার পরিকল্পনা কী?
শ্বেতা বসু: আমি একজন অভিনেত্রী আছি এবং আমি থাকবো। এখন আমি আমার হিন্দুস্তান ক্ল্যাসিক সংগীতের ওপর নির্মিত ডকুমেন্টরির বাকি কাজ শেষ করবো। আমার জীবনের যে জায়গা থেকে আমি থেমেছিলাম সেই জায়গা থেকেই আবার শুরু করবো।
মন্তব্য চালু নেই