যৌনকর্মীর জীবনের গল্প….
আজ নারী দিবস। নারীর মর্যাদা রক্ষায় সারা বিশ্বে এ দিবসটি পালন করা হয়। কিন্তু নারীর মর্যাদা সত্যিকার অর্থেই কতটুকু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আমাদের পৃথিবীতে। এখনো জীবিকার প্রয়োজনে সাধের শরীর বিকিয়ে দিচ্ছে আমাদের মাতৃসম নারীরা। সে নারীদের জীবনের গভীর ব্যথা আমরা কতোটাইবা বুঝি। পতিতা! শব্দটা শুনেই নাক সিঁটকাই আমরা। তাদের কষ্ট বুঝেও দেখলেই দূরে সরে যাই।
এভাবেই যৌনকর্মীদের আমরা হেয় করে চলেছি। কিন্তু তাদের জীবনের গভীর বেদনা অনুভব করে তাদের অবর্ণনীয় কষ্টের জীবনচিত্র ফুটিযে তুলতে বরাবরই উদ্যোগী হয়েছেন দেশের নির্মাতারা। যৌনকর্মী চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে এগিয়ে এসেছেন অনেক অভিনেত্রীও।
যৌনকর্মীর জীবনের ভেতর ডুব দিয়ে তারা পর্দায় তুলে এনেছেন তাদের জীবন কে। আজ নারী দিবস উপলক্ষ্যে তেমনই কয়েকজন জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের মুখোমুখি হয়েছে। যৌনকর্মীর চরিত্রে অভিনয়ে তাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে শেষ হচ্ছে আমাদের এ ধারাবাহিক আয়োজন…
ঐ কষ্টের ধারে কাছেও আমরা যেতে পারবো না: প্রসূন আজাদ
তৌকির আহমেদের ‘সোনালী রোদ্রের রঙ’ নাটকে যৌনকর্মী চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেন প্রসুন আজাদ। তার অভিনয় দর্শকের মন ছুঁয়ে যায়। এ চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে প্রসুন আজাদ বলেন, ‘আমি যখন তৌকির আহমেদের ‘সোনালি রৌদ্রের রঙ’ এ অভিনয় করলাম সেখানে আমার যৌনকর্মীর চরিত্র ছিলো। দৌলতদিয়া ঘাটে আমি কোনোদিনই যেতাম না। ঐ কাঁদার মধ্যে হেঁটে গেলে কেমন লাগে আমি কখনোই জানতাম না।
তিনরাত জেগে থেকে ভাত খেলে কেমন লাগে জানতাম না। সেখানে এক সপ্তাহ থাকার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। আমরা খুব সহজেই দুঃখ পাই, কষ্ট পাই। কিন্তু ঐ ক্যারেক্টারটা করার পর মনে হলো তাদের যে কষ্ট ঐ কষ্টের ধারে কাছেও আমরা যেতে পারবো না। জীবনটাকে নতুনভাবে উপলব্ধি করলাম। মানুষকে কিভাবে সম্মান দিতে হয়, জীবনের স্বাদ কিভাবে পেতে হয় ওদের সাথে না মিশলে আমি বুঝতাম না। আমার জীবনের মূল্য কতটুকু সেটা ওদের সাথে না মিশলে বুঝতাম না। ’
আমরা ওদের ঘৃণার চোখে দেখি কিন্তু তারা যে পরিস্থিতির শিকার তা ভাবি না: মিম
এমন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিদ্যা সিনহা মিমও। জাহিদ সুলতান শাওনের রচনা ও মোস্তফা ওয়াহিদ রেজার পরিচালনায় ‘ঠাঁই’ নাটকে তাকে দেখা যায় এমন চরিত্রে। এ নাটকটির গল্পে মিমকে তার স্বামী একটি পতিতাপল্লীতে বিক্রি করে দেয়। তাকে বাধ্য করে পতিতাবৃত্তি করতে। নাটকটিতে অভিনয় সম্পর্কে মিম বলেন, ‘এই নাটকেই প্রথম যৌনকর্মী চরিত্রে অভিনয় করেছি। একেবারেই ভিন্নরকমের চরিত্র এটি।
তবে অভিনয়টা অনেক উপভোগ করেছি। স্বামীর হাত ধরে পতিতাবৃত্তিতে নামা যে কতটা বেদনাদায়ক তা এই নাটকটিতে অভিনয় করে বুঝতে পেরেছি। আমরা ওদের ঘৃণার চোখে দেখি কিন্তু তারা যে পরিস্থিতির শিকার তা ভাবি না।’
যৌনকর্মীদের নিয়ে আমাদের দেশে খুব বেশি নাটক নির্মাণ হয় না: সুমাইয়া শিমু
বাংলা নাটকে নারী চরিত্র বিভিন্নভাবে উঠে এসেছে সেই সব নারী চরিত্রগুলো কখনো কখনো দাগ কেটে গেছে দর্শকদের মনে। অনেক অভিনেত্রীই অভিনয় করেন। সবার অভিনয় কিন্তু দর্শকের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে না। একজন অভিনেত্রী যখন আলোচিত কোন চরিত্রের সাথে মিলিয়ে ফেলেন তখনই তার অভিনয় দর্শক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করে। যেমনটি হয়েছে সুমাইয়া শিমুর বেলায়। জুয়েল মাহমুদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত একুশে টিভির ধারাবাহিক ‘ললিতা’তে তিনি একজন যৌনকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। নাটকটি খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
এ চরিত্রে শিমুর অনবদ্য অভিনয় তাকে নিয়ে এসেছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। শিমু বলেন, ‘প্রথম দিকে একটু দ্বিধায় ছিলাম, কারণ চরিত্রটি একেবারে ভিন্ন। কিন্তু নাটকটি কয়েক পর্ব প্রচারের পর দর্শকদের কাছ থেকে যে সাড়া পেয়েছি তা ভুলে যাবার মতো নয়। যৌনকর্মীদের নিয়ে আমাদের দেশে খুব বেশি নাটক নির্মাণ হয় না। তাই এসব চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগও খুব কম। লতিতাতে অভিনয় করে আমি আমার অভিনয়ের মানও বৃদ্ধি করেছি। কারণ এখানে এক চরিত্রকেই বিভিন্ন রোল প্লে করতে হয়। তাদের বাস্তুবিক আচার-আচরণ নাটকটিতে তুলে ধরা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে এ নাটকটি আমার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম পছন্দের একটি নাটক।
শুধু হতাশা নয়, ভালোলাগা থেকেও এ পেশায় অনেকেই আসে: বন্যা মির্জা
বদরুল আনাম সৌদের রচনা ও পরিচালনায় এক ঘন্টার নাটক ‘পাপ পুন্যি ভালোবাসা’ নাটকটিতে বারবনিতার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বন্যা মির্জা। নাটকে দেখা যায় এক রিকশাওয়ালা নিয়মিত খদ্দের হিসেবে তার কাছে আসে। সে বন্যাকে ভালোবাসে । দেহ নয়, মনকেই তার বেশি প্রয়োজন। সে তার জন্য খদ্দের খোঁজে। একজন মানুষের ভালোবাসা, সুখের স্বপ্ন যে যৌনকর্মীকে নিয়েও হতে পারে বিষয়টিকে এ নাটকে উপস্থাপন করা হয়েছে। যৌনকর্মী চরিত্রে বন্যা মির্জার সাবলীল অভিনয় নাটকটিতে অন্যমাত্রা যোগ করেছে।
অবশ্য এর আগেও তিনি যৌনকর্মী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সে ফিরিস্তি না হয় বন্যা মির্জার কাছেই শোনা যাক- ‘প্রায় ১০-১২ বছর আগে স্বপন বীরের রচনা ও পরিচালনায় ‘খণ্ডত’ নামে একটি টেলিছবিতে অভিনয় করেছিলাম। টেলিছবিতে আমি যে চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম তার এইডস হয়। এটা নিয়ে তার প্রেমিক, পরিবার-পরিজন সবার সাথেই একটা দ্বন্দ্বমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নাটকটিতে যৌনকর্মী চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে এ পেশায় যারা জড়িত, শুধু হতাশা নয়, ভালোলাগা থেকেও এ পেশায় অনেকেই আসে। ’ এটি ছাড়াও মাহমুদ উজ্জ্বলের ‘রোদ মেঘ সূর্যমুখী’তে তিনি যৌনকর্মী চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
এরকম চরিত্রে অভিনয় করলে অভিনয়ের দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়: তমালিকা
আবুল হায়াতের রচনা ও পরিচালনায় ‘আপদ’ নাটকের সেই মেয়েটির কথা কি আপনাদের মনে আছে? ওই যে সেই মেয়েটি। পতিতালয়ে বিক্রি হওয়ার কারণে যার জীবনের সাথে পতিতা শব্দটি জড়িয়ে গিয়েছিল। নাটকটিতে ‘পতিতা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তমালিকা। শুধু এই নাটকটিই নয়। গিয়াসউদ্দীন সেলিম পরিচালিত ‘পাপ-পুণ্য’ নাটকেও তিনি একই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তমালিকা বলেন, ‘যৌনকর্মীরা আমাদের সমাজেরই অংশ। তাদের গল্পও আমাদের নাটকগুলোতে উঠে আসতে হবে। আমি বেশ কয়েকটি নাটকে পতিতা চরিত্রে অভিনয় করেছি। এরকম চরিত্রে অভিনয় করলে অভিনয়ের দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়।’
যৌনকর্মী চরিত্রে অভিনয় করা একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার: বিন্দু
চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত ‘বৃষ্টি কাল কাঁদবে’ নাটকটির কথা অনেকেরই মনে থাকার কথা। এই নাটকটি একুশে টিভিতে এত বেশি পুনঃপ্রচার হয়েছে যে এর কাহিনীও অনেকের মুখস্থ। শুধু তাই নয় নাটকটিতে বিন্দুর অভিনয়ও পেয়েছিল বেশ দর্শকপ্রিয়তা। বিশেষ করে যৌনকর্মী চরিত্রে বিন্দুর অভিনয় সাবইকে মুগ্ধ করেছিল। নাটকে দেখা যায়, অপুর্ব বিন্দুকে ভাড়া করে বাসায় নিয়ে আসে। বিন্দুর কথাবার্তা চাল-চলন সবকিছুই অপুর্বর ভেতরে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে এবং একটা সময় অপুর্ব বিন্দুর প্রতি টান অনুভব করে।
নাটকটিতে অভিনয় প্রসঙ্গে বিন্দু বলেন, ‘আমার কাছে অনেক চ্যালেঞ্জিং চরিত্র ছিল এটা। কারণ আমি বারবনিতাদের সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। শুটিং শেষে মাঝে মধ্যে গুলশান-২ এর মোড়ে তাদের দেখেছি। ততটুকুই আমার দেখা ও জানা। এ নাটকে চয়নিকা চৌধুরী ও ফ্যাশন ডিজাইনার গৌতম সাহা আমাকে যথেষ্ট সহায়তা করেছে। তাদের জন্যই আসলে নাটকটি মনের মতো করে করতে পেরেছি। বিন্দু আরো বলেন, ‘আমার মনে হয় যৌনকর্মী চরিত্রে অভিনয় করা একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। প্রিয়.কম
আরো পড়ুন :
মন্তব্য চালু নেই