‘যৌনকর্মীদের আলাদা আইন দরকার’

বাংলাদেশ আইন কমিশনের সদস্য ড. মো. শাহ আলম বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী আইনের পাশাপাশি যৌনকর্মীদের জন্য আলাদা আইন প্রণয়ন করা দরকার। যে আইনে তাদের সামাজিক স্বীকৃতি এবং সন্তানের শিক্ষার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট উল্লেখ থাকবে।

শনিবার সকালে রাজধানীর গুলিস্তানে কাজী বশির মিলনায়তনে যৌনকর্মীদের আত্মমর্যাদা, সামাজিক স্বীকৃতি ও বাঁচার অধিকারের দাবিতে জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

দুর্জয় নারী সংঘ ও বাংলাদেশ উইমেনস হেলথ কোয়ালিশন সম্মেলনের আয়োজন করে।

ন্যাশনাল এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর ড. হোসাইন সারওয়ার খানের সভাপতিত্বে আব্দুর নূর তুষারের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সেভ দ্য চিলড্রেনের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর নায়ার ইকবাল, সেক্স ওয়ার্কার নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের সভাপতি হেনা আক্তার, দুর্জয় নারী সংঘের (ডিএনস) সভাপতি রহিমা বেগম ও প্রাক্তন সভাপতি শাহনাজ বেগম প্রমুখ।

সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেভ দ্য চিলড্রেনের এইচআইভি এইডস প্রোগ্রাম ম্যানেজার মৌসুমী আমিন। তিনি বলেন, সারা দেশে ৭৪ হাজার ৩০০ যৌনকর্মী রয়েছেন। তার মধ্যে ৪১ শতাংশ ভাসমান, ৫৪ শতাংশ যৌনপল্লীতে ও হোটেলে রয়েছেন ৫ শতাংশ যৌনকর্মী।

ড. মো. শাহ আলম বলেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে যৌনকর্মীদের অধিকারের বিষয়ে আরো সচেতনতা দরকার। যৌনকর্মীদের হাজার সমস্যা রয়েছে। আলাদা আইন তৈরি হলে বেঁচে থাকার অধিকার, বাসস্থান ও পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হবে।

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, যৌনকর্মীদের এখন পুনর্বাসনের প্রয়োজন। কিন্তু বিভিন্ন যৌনপল্লী উচ্ছেদ করা হলেও তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। এমনকি যৌনকর্মীদের উচ্ছেদ করার ঘটনায় থানায় গেলে মামলাও নেওয়া হয় না। এ অবস্থায় অধিকার আদায়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।

টাঙ্গাইলে যৌনকর্মীদের উচ্ছেদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যৌনকর্মীদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। মহিলা আইনজীবী সমিতি হাইকোর্ট থেকে উচ্ছেদ না করার আদেশ নিয়েছে। কিন্তু তার ছয় মাস আগেই উচ্ছেদ করা হয়ে গেছে।

রহিমা বেগম বলেন, যৌনপল্লীই তাদের ঘরবাড়ি। অথচ এ থেকে উচ্ছেদ করা হলে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয় না। এ পেশা থেকে উপার্জিত অর্থ থেকে ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখা করে। বাবা-মার ভরনপোষণ করা হয়। কিন্তু অন্যসব পেশার মতো যৌনকর্মীরা তাদের পেশার স্বীকৃতি পান না। অথচ আইনে এ পেশায় বাধা নেই। যতো সমস্যা সামাজিকভাবে সৃষ্টি করা হয়।

শাহনাজ বেগম বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে সমাজকে নষ্ট করার অভিযোগ তোলা হয়। ডাক্তাররা যেমন সমাজের সেবা করেন, তেমনি আমরাও সমাজের সেবা করি। তাই আমাদের সেবিকা হিসেবে মূল্যায়ন করা হোক।’



মন্তব্য চালু নেই