যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা
পারিবারিক কলহের জেরে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় দুই বছরের শিশুসহ গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। নিহত গৃহবধূ লাকী রানী নাথ (২৭) ও তার সন্তান হরিচাঁন চন্দ্র নাথ উপজেলার পশ্চিম চরবাটা ইউনিয়নের শীবচরণ গ্রামের বাসিন্দা।
শুক্রবার রাতে তাদের হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে রাতেই মরদেহ দুটি উদ্ধার করে চরজব্বার থানা পুলিশ। এ সময় লাকী রানীর স্বামী সঞ্জয় নাথ, শ্বশুর দশরত নাথ ও শনিবার সকালে শাশুড়ি স্বপ্না রানী নাথকে গ্রেফতার করা হয়।
এ ঘটনায় পাঁচজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নিহত লাকী রানী নাথের বাবা রতন চন্দ্র নাথ বলেন, সাড়ে ৩ বছর আগে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের দশরতের ছেলে সঞ্জয় নাথের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে ছেলে পক্ষ ৪৫ হাজার টাকা দাবি করে। তিনি মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ধার-কর্জ করে ওই সময় নগদ ৩৭ হাজার টাকা দেন এবং দেড় ভরি স্বর্ণালংকার দেন। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকে বাকি টাকার জন্য মেয়েকে চাপ দিতে থাকে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। এ জন্য মেয়েকে প্রায়ই মারধর করত।
তিনি জানান, বিয়ের এক বছর পর মেয়েকে তার বাড়িতে রেখে স্বামী সঞ্জয় ভারত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন ভারতের পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলে এক বছর কারাগারে ছিল। এক পর্যায়ে লাকী নিজের স্বর্ণালংকার বিক্রি করে স্বামীকে কারাগার থেকে মুক্তি করে। যতদিন সঞ্জয় জেলে ছিল ততদিন লাকী তার বাবার বাড়িতে ছিল। জেল থেকে বের হওয়ার পর লাকীকে নিয়ে গেলেও চলে নির্যাতন। এ নিয়ে কয়েকবার সামাজিকভাবে ও ইউপি আদালতে সালিশ-বিচার হয়েছে। পারিবারিক কলহের জের ধরেই শেষ পর্যন্ত তার মেয়েকে হত্যা করেছে স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা।
তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চরজব্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, নিহত মা ও শিশুর শরীরে ধারালো অস্ত্রের বেশ কয়েকটি আঘাত ছিল। হত্যার পর মরদেহ দুটিকে খড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল।
তিনি জানান, ঘটনার পরপরই পরিবারের লোকজন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও স্থানীয়রা লাকীর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। লাকীর বাবা রতন চন্দ্র নাথ বাদী হয়ে মেয়ের স্বামী সঞ্জয়কে প্রধান ও শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর মাধব, তন্ময়কে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। প্রক্রিয়া শেষে আসামিদের রোববার আদালতে সোপর্দ করা হবে।
মন্তব্য চালু নেই